সমাজে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ ও সম অধিকারের লক্ষ্য পূরণে প্রতিবন্ধী দিবসটি পালন করছে জাতিসংঘ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনগুলো প্রতি বছর নতুন একটি শ্লোগানকে সামনে রেখে নানান কর্মসূচি পালন করে থাকে।
জাতিসংঘ ১৯৮৩ থেকে ১৯৯২ অব্দি প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নত জীবন বাস্তবায়নে জন্য সম্পূর্ণ একটা দশক পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এটি শেষ হয় ১৯৯২ সালের ১৪ অক্টোবর তখন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ৩ ডিসেম্বরকে “আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস” ঘোষণা করা হয়।
“আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস” এই নাম পরিবর্তন করে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার বা মর্যাদা রক্ষার সিআরপিডি সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এর নতুন নামকরণ হয় “International Day for Persons with Disabilities” যার বাংলা হয় “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক দিবস” যা বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে অদ্যবধি। অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছর পালিত হচ্ছে “আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস”।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ও (এপ্রিল মাসের প্রথম বুধবার) জাতীয় এই দুই ভাবেই “প্রতিবন্ধী দিবস” পালন করা হয়। আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, র্যালী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষগুলোর জন্মগত অধিকার, বৈষম্যহীনতার প্রতি সম্মান, সমসুযোগ, সম অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতার প্রতি সম্মানের মূলনীতিই এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিগণ পদে পদে বাঁধার শিকার হচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থলে, যাতায়াত ব্যবস্থায় এমনকি পরিবারেও নানা ভাবে তারা বঞ্চিত। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণের জন্য তাদের নামতে হয় জীবিকা নির্বাহের কাজে কিন্তু সেখানে নেই তাদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা যার ফলে অধিকাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি। নারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ সবচেয়ে বেশী সমস্যার স্বীকার হন। সাংসারিক জীবনে প্রবেশের পথে বাধা হয়ে দাড়ায় তাদের প্রতিবন্ধিতা। অভিভাবক অতিরিক্ত যৌতুক দিয়ে প্রতিবন্ধী মেয়ের বিয়ে দেন। কিন্তু তাদের সাংসারিক সুখ অধরাই থেকে যায়। অনেকে হন নির্যাতিত বিশেষত বুদ্ধি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারীগণ। কর্ম, যাতায়াত কিংবা শিক্ষা সকল ক্ষেত্রেই তারা আরও পিছিয়ে।
সমাজের সর্বস্তরে বুঝিয়ে দিতে হবে প্রতিবন্ধীতা কোন রোগ কিংবা অসুখ নয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সমাজের বোঝা নন। তারাও সমান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্যের চিহ্ন রাখতে পারেন প্রয়োজনীয় সুযোগ পেলে। সামাজিক ও জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেশের নাগরিক হিসেবে । প্রয়োজন তাদের প্রতি সকল বৈষম্যদূরীকরণে জাতিসংঘ সনদ (সিআরপিডি) বাস্তবায়ন। আর সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগণের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন । তখন আর আলাদাভাবে নয়, একসঙ্গেই কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে চলবেন সকলে।