মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথায় নীল হয়নি এমন মেয়েদের সংখ্যা খুব কম। সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকেই কোন কারণ ছাড়াই মাসিককালীন ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও কিছু রোগের কারণে মাসিক হতে পারে ব্যথাযুক্ত।
একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের ৫০ ভাগ মেয়ের এ সমস্যায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়। শুধু এ সমস্যার জন্য প্রায় ৭০ ভাগ মেয়েকে ব্যথার ওষুধ সেবন করতে হয়। আমাদের দেশের মেয়েদের মধ্যে ডিসমেনোরিয়ার হার অনেক বেশি।
ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে অনিষিক্ত ডিম্বাণু ও জরায়ুর ভেতরের স্তর মাসিকের সময় জরায়ুর সংকোচনের মাধ্যমে দেহের বাইরে চলে আসে। এ সংকোচনের ফলে জরায়ুর রক্তনালীগুলোও সংকচিত হয়। জরায়ুর কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। এ সময় জরায়ু থেকে কিছু কিছু কেমিক্যাল নিসৃত হয়। এগুলো ব্যথার জন্য দায়ী।
আবার সংকোচন বাড়ানোর জন্য দেহ প্রোস্টাগ্লান্ডিন নিঃসরণ করে। এটিও ব্যথা বাড়ায়। এটি কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই মাসিকের সময় ব্যথা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথা চরম আকার ধারণ করে।
ডিসমেনোরিয়া বা মাসিককালীন ব্যথা ২ প্রকার। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়াতে জরায়ুতে কোন রোগ থাকে না। মাসিক শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্যথা শুরু হয়। ২-৩ দিন ব্যথা থাকে। বেশিরভাগ মেয়েরাই এ ধরণের ব্যথায় ভোগেন। জীবনের প্রথম মাসিকের সময় থেকেই এ ব্যথা শুরু হয়। সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া সাধারণত সন্তান জন্মদানের পর মেয়েদের প্রজননতন্ত্রে ইনফেকশনের কারণে দেখা যায়।
এছাড়াও ফাইব্রয়েড, অ্যান্ডোমেট্রিওসিস, অ্যাডেনোমায়োসিসও হতে পারে সেকেন্ডারি মাসিককালীন ব্যথা। এক্ষেত্রে মাসিকের আগে ও পুরো মাসিকের সময় জুড়ে ব্যথা থাকে। মাসিকের পর ধীরে ধীরে ব্যথা কমতে থাকে।
সাধারণত প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়ায় আক্রান্তদের তেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না। সেকেন্ডারিতে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করার জন্য হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব সিএস, সারভাইক্যাল সোয়াব, ইউরিন কালচার, আলট্রাসনোগ্রামের প্রয়োজন পড়ে।
চিকিৎসা:
প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এতে সন্তান ধারণের কোন সমস্যা হয় না। সন্তান ধারণ করলে এ ব্যথা আপনা-আপনি ভাল হয়ে যায়। যারা এখনও ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত তারা প্রতি সাইকেলে ব্যথা হলে ব্যথানাশক এনএসআইডি যেমন আইবুপ্রোফেন সেবন করলে ভাল ফল পাবেন। এছাড়াও ৩-৪ সাইকেল ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করে এ সমস্যা মুক্ত হওয়া সম্ভব।
ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে। প্রতিদিন ব্যয়াম করতে হবে। ধুমপান বা মদপানের অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করতে হবে। সেকেন্ডারি ক্ষেত্রে কোন কারণে মাসিকের সময় ব্যথা হচ্ছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।