অনেক সময় আমাদের অজান্তেই আমাদের দেহে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। আর প্রতিটি আশংকার জন্যে আলাদা আলাদা করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না প্রায় সময়েই। অনেক সময় আপনি হয়তো টের পাচ্ছেন না, অথচ শরীরের ভেতরেরোগ ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
কিন্তু আপনিই ঘরে বসে অন্য কারো সাহায্য না নিয়েই কিন্তু পরীক্ষা করে ফেলতে পারেন কিছু রোগের লক্ষণ। আর সময়মত ডাক্তারের কাছে যেতে পারলে সেটি কঠিন আকার ধারণের আগেই সেরে যাবার সম্ভাবনা বেশী।
তাই জেনে নিন, ঘরে বসেই কিছু রোগের পরীক্ষা করার সহজ উপায়ঃ
১। চোখের সমস্যাঃ
একটি থেমে থাকা গাড়ির পেছন দিক থেকে সোজাসুজি ২০ পা পিছিয়ে যান। এবার দেখুন তো, আপনি গাড়ির নম্বর প্লেটের সংখ্যাগুলো কোন অসুবিধে ছাড়াই পড়তে পারছেন কিনা! আপনি যদি ঝাপসা দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার চোখের দৃষ্টিগত কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেরী না করে ডাক্তার দেখান।
২। রক্তের কোলস্টেরলের মাত্রাঃ
চোখের উপরিভাগ ও নিচের ত্বকের দিকে ভালোভাবে তাকান। দেখুন সেখানে কোন সমান অথচ সামান্য ফোলা হলুদ ভাব আছে কিনা! যদি থাক, তবে সেটি হল জমে থাকা ফ্যাটের লক্ষণ, যা আপনার রক্তের বাড়তে থাকা কোমস্টেরলের মাত্রার কথাই জানান দেয়। ভয় না পেয়ে ডাক্তার দেখান।
৩। ফুসফুসের সংক্রমণঃ
একটি মোম জ্বালান। এবার এটি থেকে ৩০ সেণ্টিমিটার দূরে দাঁড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ফুঁ দিন। যদি এটি না নিভে যায়, তাহলে হতে পারে এটি হাঁপানির প্রাথমিক অবস্থা।
সেই সাথে মিলিয়ে নিন, রাতে কি মাঝে মাঝেই কাশতে কাশতে আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায়, খুব জোরে হাসলে বা শীতকালে হাঁচি বা কাশি শুরু হলে থামতেই চায় না অথবা মাঝে মাঝেই নিঃশ্বাস নেয়ার সময় বুকে চাপ অনুভব হয় বা বাঁশির মত শব্দ হয়?এসব যদি মিলে যায়, তবে ফুসফুস বা শ্বাসনালীর সংক্রমণে ভুগছেন আপনি।
৪।হজমে সমস্যাঃ
আমাদের অনেকেরই কিছু কিছু খাবার শরীরে সহ্য হয় না। কিন্তু না জেনেই আমরা সেগুলো খেতে থাকি আর শরীরিকে ঠেলে দেই ঝুঁকির মুখে। তাই যদি আপনার মনে হয় কোন খাবার আপনার শরীরে অসুবিধে তোইরী করতে পারে, তাহলে মোটামুটি পরিমাণে সেই খাবার নিন।
খাওয়ার আগে নিজের নরমাল পালস মেপে নিন, কবজিতে আঙ্গুল দিয়ে। খাওয়া শেষ করে আবার মাপুন, দেখুন, যদি পালস মিনিটে ১০ বিট বেশী হয়, তাহলে এটি আপনার হজমে সমস্যা তৈরী করে।
৫। ফাঙ্গাসের সংক্রমণ;
সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটি পানি ভর্তি কাঁচের বাটিতে থুতু ফেলুন। ৩০ মিনিট পর যদি থুতুর বুদবুদ গুলো মিলিয়ে না গিয়ে বেড়ে যায় অথবা ধূসর রঙ ধারণ করে, তাহলে সেটি আপনার দেহের ফাঙ্গাসের সংক্রমণের লক্ষণ! শুধু তাই নয়, এর মানে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দূর্বল হয়ে পড়চ্ছে। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
৬। আয়রনের অভাবঃ
হাতের পাতা মেলে দিন টান টান করে, আঙ্গুলগুলো যত্তা সম্ভব পেছনে ঠেলে দিন। স্বাভাবিকভাবেই আপনার হাতের তালু সাদাটে হয়ে আসবে। কিন্তু খেয়াল করুন, হাতের গভীর রেখাগুলোও সাদাটে হয়ে আসছে না তো? হলে এটা হতে পারে এনিমিয়ার লক্ষণ, যা নির্দেশ করে আপনার দেহে আয়রনের ঘাটতিকেও।
৭। হজমশক্তির পরীক্ষাঃ
এজন্যে আপনাকে লোহা খেয়ে দেখাতে হবে না মোটেই। এক গ্লাস পানিতে ১ টেবিল চামচ বাইকার্বনেট সোডা মেশান ও খেয়ে নিন। যদি সাথে সাথেই আপনার ঢেঁকুর ওঠে তবে তা ভালো।
যদি না ওঠে তাহলে তাহলে বুঝতে হবে আপনার পাকস্থলীতে হজমে সহায়ক এসিডের মাত্রা খুবই কমে গেছে এবং খাদ্য থেকে আপনই পর্যাপ্ত পরিমাণণণে পুষ্টি গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছেন। সে কারণে আপনই ভুগতে পারেন পুষ্টিহীনতায়ও!
রোগ নির্ণয়ই কিন্তু শেষ কথা নয়। যদি উপরের পরীক্ষাগুলো করে আপনার মনেই হয় যে আপনার রোগ রয়েছে তবে দেরী না করে ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন। সুস্থ থাকুন।