আমাদের পুরো দেহের গঠনটাই ধরে থাকে হাড়ের তৈরি কঙ্কাল। একটিবার ভেবে দেখেছেন আমাদের দেহের হাড় যদি সঠিক অবস্থানে না থাকতো তাহলে দেহের গঠন কোন দিকে মোড় নিতে পারতো? আমরা অনেকেই ভাবি না এইসকল বিষয়। সৃষ্টিকর্তার দেয়া অপূর্ব সব উপহারগুলো অবহেলায় অপকারই বেশী করে থাকি। এর জন্য অবশ্য সাজাও আমাদেরই ভোগ করতে হয়। কারণ, অবহেলা এবং অযত্নের কারণে অনেক সময়েই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আমরা। মাঝে মাঝে এমন কিছু মারাত্মক রোগ দেহে বাসা বাঁধে যা নিরাময় অসম্ভব। মৃত্যুই অবধারিত। হাড় সংক্রান্ত এমন অনেক রোগ রয়েছে যার পরিণাম বেশ ভয়াবহ। তাই হাড়ের সুস্থতার জন্য আমাদের নিজেদেরই। চিরকাল হাড়ের সুস্থতা ধরে রাখতে চাইলে কি জরুরী বিষয় ভুলে গেলে চলবে না একেবারেই।
১) গাঢ় সবুজ শাক সবজি, ব্রকলি, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ভিটামিন ডি এর অন্যতম প্রধান উৎস সমূহ যা হাড়ের জন্য অসাধারণ কার্যকরী খাবার। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত একটি খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরী।
২) চিরকাল হাড়ের সুস্থতায় কাজ করে খাবারের সালফার উপাদান। আর পেঁয়াজ ও রসুনের সালফার তাই হাড়ের সুস্থতার জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী। গন্ধের কারণে রসুন খাওয়া বাদ দিলে চলবে না। প্রয়োজনে প্রতিদিনের খাবারে পেঁয়াজ রসুনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
৩) কার্বোনেটেড কোমল পানীয়গুলো তাৎক্ষণিকভাবে তেষ্টা মেটাতে পারে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই জাতীয় কোমল পানীয়গুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী। এইসকল কার্বোনেটেড পানীয় পান করার ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে আপনার দেহের হাড়। কোমল পানিয়ের ফসফরাস আমাদের দেহ থেকে ক্যালসিয়াম এবং কালসিয়ামের কর্মক্ষমতা দূর করে দেয়। সুতরাং সাবধান।
৪) উচ্চমাত্রা প্রাণীজ প্রোটিনের দিকে ঝোঁক সকলেরই বেশী থাকে। কারণ শাক সবজির চাইতে মুখে আমাদের স্বাদ বেশী লাগে এইসকল প্রাণীজ প্রোটিন। কিন্তু উচ্চ মাত্রার প্রাণীজ প্রোটিন অনেক বেশী পরিমাণে অর্থাৎ প্রতিদিনের হিসেব ছাড়া খাওয়া হাড়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ এতেও আমাদের দেহ ক্যালসিয়ামের কার্যকারিতা হারায়।
৫) চা/কফি পান করা ছাড়া একেবারেই দিন ও কাজের সময় কাটতে চায় না? তাহলে জেনে রাখুন এই অতিরিক্ত চা/কফি পানের কারণে আপনার হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি করতে চলেছেন আপনি। এর চাইতে এক গ্লাস দুধ পান করে ফেলুন, হাড় মজবুত করতে এবং সঠিক গঠনে কাজে দেবে।
৬) বাদাম ক্যালসিয়ামের সব থেকে ভালো উৎস। এক কাপ বাদামে রয়েছে ৩৮৫-৪০ মিলি গ্রাম পর্যন্ত ক্যালসিয়াম, যেখানে এক কাপ দুধে রয়েছে মাত্র ৩০০ মিলি গ্রাম। প্রতিদিন অন্তত একমুঠো বাদাম শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পুরন করে হাড়কে ভেতর থেকে মজবুত করবে।
৭) প্রতিদিনই ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ব্যায়াম করার সময় না পেলে হাঁটাহাঁটি করে ব্যায়াম না করার ক্ষতি পূরণ করে নিন। যতো বেসিহ বসে থাকবেন আপনার দেহের হাড়ের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ততো বাড়বে। সিঁড়ি বেয়ে উঠা-নামা, হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, জগিং করুন প্রতিদিনই।
৮) সকালে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করুন। ভোরের কুসুম সূর্যের আলো আপনার দেহের ভিটামিন ডি এর অভাব পুরনে সহায়তা করবে। অন্তত ১৫ মিনিট সকালের এই কুসুম কুসুম রোদ দেহে লাগিয়ে নিন।
৯) ধূমপান ও মদ্যপানের মতো বাজে অভ্যাসগুলো আজ থেকেই দূর করে দিন। কারণ এই বাজে অভ্যাসগুলো হাড়ের ক্ষয় এবং ক্যান্সারের জন্য দায়ী থাকে। নিজের সুস্থতার পাশাপাশি পারিবারিক সুস্থতার কথা চিন্তা করে হলেও বন্ধ করুন এই বদঅভ্যাস।
১০) অনেকেই খাবারে একটু বাড়তি লবন নিতে পছন্দ করেন যা হাড়ের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। লবনের সোডিয়াম খাবারের ক্যালসিয়ামকে পুরো দেহে ছড়িয়ে দেয়। এতে হাড়ে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়। অস্টিওপেসিস রোগের সম্ভাবনা দেখা দেয়। সুতরাং বাড়তি লবন এড়িয়ে চলুন।