অন্যান্য ভয়াবহ কিছু রোগের মত মাদকাসক্তি একটি জটিল রোগ। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এই রোগ চিকিৎসা ও সু-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। দিনের পর দিন মাদক নেয়ার ফলে ব্যক্তি নিজে যেমন অনেক অসহায় হন তেমনি তার পরিবার ও আপনজনেরা বিমর্ষ আশাহত হয়ে পড়েন।
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারেন তার এই রোগটি দিন দিন জটিল হচ্ছে কিন্তু মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে নিজেকে উদ্ধার করার কোন মানসিক শক্তি আর অবশিষ্ট থাকেনা। তাই বুঝলেও তিনি কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন না এবং কেউ তাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসলেও তাদেরকে ভুল বুঝেন। এই রোগ নিরাময়ে কোন ব্যক্তি একা নয় বরং সম্মিলিত ভাবে একটি টিম গঠন করে কাজ করতে হয়।
মাদকাসক্ত নিরাময়কারী টিমের সদস্যরা হলেন:
১. মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজে
২. ব্যক্তিটির পরিবার
৩. মাদকাসক্ত নিরাময়কারী প্রতিষ্ঠান
৪. একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট
৫. একজন সাইকিয়াট্রিস্ট (severe বা গুরুতর হলে)
যেমন প্রত্যেক রোগের স্টেজ বা পর্যায় থাকে তেমনি মাদকেরও কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় (মাদকাসক্ত শুরুর প্রথম ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে যদি মাদকাসক্ত নিরাময়ের পরিকল্পনা নেয় যায় তবে খুব ভাল ফলাফল হয়। তবে কয়েক বছর যাবত মাদকাসক্তিও নিরাময় সম্ভব।
মাদকাসক্ত নিরাময়ের তিন রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে:
ক. শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের মাধ্যমে
খ. ঔষধ ও মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার মাধ্যমে
গ. নিরাময় কেন্দ্রে থেকে ঔষধ ও মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার মাধ্যমে
এখানে উল্লেখযোগ্য যে সর্বশেষ পদ্ধতিটি অত্যন্ত কার্যকর। তবে বেশীরভাগ নিরাময় কেন্দ্রে ১৫ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত থেকে সেবা নেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ৬ মাস সময় পর্যন্ত থেকে এই সেবা নিলে সেটি অনেক বেশী উপকারী।
যদিও এই ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি এত দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থাকতে চান না। যদি দীর্ঘসময় কার্যকর চিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে সেই মাদকাসক্ত ব্যক্তিটি পুনরায় অন্যান্য মাদক মুক্ত মানুষের মতই সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। আর এই জন্য তাকে নিরাময় কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পরেও স্ব-ব্যবস্থাপনায় মাদক মুক্ত থাকার পদক্ষেপ নিতে হয়।
একজন মাদকাসক্ত রোগী চিকিৎসা নেয়ার সময়ে পরিবার যেহেতু নিরাময়কারী টিমের সদস্য তাই পরিবারেরও বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছেঃ
প্রথমত, পরিবারের লোকজন একত্রে মাদকাসক্তি নিরাময় নিয়ে পড়াশুনা করবেন বা তথ্য সংগ্রহ করবেন। কারণ তথ্য না জানা থাকার কারণে ঘাবড়ে গিয়ে পরিবারের পরিবেশ ও শান্তি বিনষ্ট হয়। পরিবারটি সমাজের চোখে নিজেকে ছোট মনে করে হীনমন্যতায় ভুগে।
দ্বিতীয়ত, মাদকাসক্ত ব্যক্তিটিকে ‘Addict’ বা ’নেশাখোর’ বলে গালমন্দ না করা। প্রত্যেকের ভুল আছে। আপনার পরিবারের এই সদস্যটিও ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তাই দোষারোপ না করে তার ভুলগুলো শুধরে নিতে তাকে সহযোগিতা করুন।
তৃতীয়ত, মাদকাসক্ত নিরাময়ের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী নিয়ম মানা এবং খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপনের পরিবর্তনের ব্যাপারে ব্যক্তিটিকে সহযোগিতা করুন এবং উৎসাহ দিন।
চতুর্থত, চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট বা Addiction specialist Doctor এর নিয়মিত চেক-আপ ও Counseling Psychologist বা Addiction counselor এর কাছে কাউন্সেলিং সেশন নিয়মিত নেয়া।
কয়েকটি মাদকাসক্ত নিরাময়ের কেন্দ্রের ঠিকানা ও তথ্য নিচে দেয়া হলঃ
১. আপন (মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র শিশু ছেলে, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য)
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ।
২. লাইফ এন্ড লাইট হসপিটাল (মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র পুরুষ ও মহিলাদের জন্য)
ফার্মগেট, ঢাকা।
৩. ক্রিয়া (মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র)
১/৪০, বি.সি. দাস লেন,লালবাগ, ঢাকা।