নানা সময়ে নানান হিসাব কষে বলা হয়েছে যে মানুষ তাঁর জীবনের মূল্যবান এক তৃতীয়াংশ সময় অপচয় করে শুধুমাত্র ঘুমিয়ে। এই সময় বাঁচানোর প্রচেষ্টারও কমতি ছিল না বিখ্যাত সব লোকেদের। যেমন ধরুন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মারগারেট থ্যাচার ,যিনি রাতে ঘুমাতেন মাত্র ৪ ঘণ্টা। কিংবা ধরুন শিল্পী সালভাদর দালি’র কথা, যে কিনা চেষ্টা করতেন যতটা কম সম্ভব ঘুমিয়ে সমস্ত নষ্ট না করতে। কিন্তু আসলে কি এই স্বল্প ঘুম সাধারন একজন মানুষের শরীর ও সুস্থতার জন্য যথেষ্ট?
লেখক ও গবেষক জিম হর্ন তাঁর ‘ Sleepfaring’ বই তে লিখেছেন গড়ে ৮০% মানুষ রাতে ছয় থেকে নয় ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটান, এবং বাকি 20% অন্যান্যদের তুলনায় বেশী বা কম ঘুমান। অর্থাৎ, বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন তাদের শরীরের জন্য নুন্যতম ৬-৯ ঘণ্টার ঘুম প্রয়াজন। ধরুন আপনাকে বলা হল নিজের প্রাত্যহিক ঘুমের সময়সূচি পরিবর্তন জন্য।
কিন্তু এই সময়সূচি পরিবর্তন আপনার জন্য কতটা সহজ হবে? যদি আপনি নিজেকে প্রতিদিন বিছানা থেকে কয়েক ঘন্টা আগেই উঠিয়ে নিতে চান পর্যাপ্ত না ঘুমিয়ে এবং আশা করেন যে আপনার শরীর শেষ পর্যন্ত অভ্যস্ত হয়ে যাবে… তবে দুঃখজনকভাবে সেই চেষ্টার ফলাফল হবে নেতিবাচক। স্বল্প ঘুমের অভ্যাস আপনার জীবনে তা কেমন প্রভাব ফেলতে পারে আসুন দেখে নেই।
সঠিক মাত্রার ঘুমের অভাবে বিরূপ প্রভাবের প্রচুর প্রমাণ আছে। আর সেগুলো যে শুধু স্বল্প মেয়াদী তাই নয়, বরং তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো আরও উদ্বেজনক বলে প্রমানিত হয়েছে গবেষণায়। স্বল্প মেয়াদী প্রভাবের ফলাফলে সাধারণত দেখা যায় যে স্বল্প ঘুম প্রাথমিক ভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ডে মনোযোগের অভাব ঘটায়। আর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোর আমাদের বিভ্রান্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত তোলে। অপর্যাপ্ত ঘুম বাড়িয়ে দেয় স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও ঝুঁকি ।
এবার তবে প্রশ্ন আসতে পারে বিখ্যাত সব লোকেদের অল্প ঘুমের কাহিনী গুলো নিয়ে, সেগুলোর অর্থ কি? এই যেমন নেপোলিয়ান মনে করতেন ঘুম হল অলস ব্যক্তিদের জন্য, আর তাই তিনি ঘুমাতেন না। কিন্তু আসলে কি জানেন, তিনি কিন্তু আরাম করেই ঘুমাতেন এবং বেশ ভালো একটা সময়ের জন্যই ঘুমাতেন। যেটুকু তাঁর প্রয়োজন, ঠিক সেটুকুই ঘুমিয়ে নিতেন।
তাঁর মতন কিছু ব্যতিক্রম মানুষ আছেন, যাদের কিনা স্বল্প ঘুমেই শরীর প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পেয়ে যায়। একদল লোক আছেন যারা কোন ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই রাতে মাত্র গড়ে ৫ ঘণ্টা ঘুমিয়েও দিব্যি চালিয়ে যান। এই সব খুব বিরল ব্যক্তিরা তাই কখনো কখনো “sleepless elite” বা “নিদ্রাহীন অভিজাত” নামে পরিচিত হয়।