হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরের এমন একটি অঙ্গ যা ছাড়া জীবনধারণের কথা চিন্তাও করা যায় না। শরীরের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া একে ছাড়া অচল। এ সব তো আমাদের জানা। কিন্তু হৃৎপিণ্ড এমন কিছু কাজ করতে সক্ষম যা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আসুন জেনে নেই আমাদের শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এই অঙ্গটির কিছু বিস্ময়কর ক্ষমতা।
হৃৎপিণ্ড নিজে থেকেই স্পন্দিত হতে পারে:
আপনার একটি হাত কেটে আলাদা করে নিন। শরীরের বাকি অংশ থেকে আলাদা হয়ে তা নিজে থেকে কিছুই করতে পারবে না। মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া চল্বেও না। কিন্তু হৃৎপিণ্ড এদিক থেকে অনেকটা “স্বয়ংক্রিয়” বলা যায়।
কারণ শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেলেও কিছুটা সময় স্পন্দিত হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটলেও স্বল্প সময়ের জন্য হৃৎপিণ্ড নিজ থেকেই সচল থাকতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত অক্সিজেনের সরবরাহ থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত হৃৎপিণ্ড সচল থাকে।
হৃৎপিণ্ড দিনে মোটামুটি ১ লক্ষ বার স্পন্দিত হয়:
আমরা দিনে ১ লক্ষ বার একটি কাজ করতে পারবো? পারবো না। কিন্তু আমাদের হৃৎপিণ্ড কোনো রকম বিরতি না দিয়ে দিনে ১ লক্ষ বারের মতো স্পন্দিত হয়ে যাচ্ছে। সারাদিনে আমাদের রক্ত ধমনি-শিরা-উপশিরার মধ্য দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার মাইলের সমান পথ অতিক্রম করে যায়। আমাদের একেক জনের জীবনে গড়ে ৩ বিলিয়ন বার স্পন্দিত হয় একটি হৃদয়।
পুরুষের চাইতে নারীরা হৃদরোগে বেশি মৃত্যুবরণ করেন:
যদিও ধারণা করা হয় পুরুষেরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন, আসল পরিস্থিতি কিন্তু তার উল্টো। হৃদরোগে বেশিরভাগ সময়ে নারীরা মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতি মানুষের হার্ট রেট ভিন্ন:
প্রতি মিনিটে যতবার হৃৎপিণ্ড স্পন্দিৎ হয়, তা প্রতি মানুষের জন্ন ভিন্ন। তার বয়স, শারীরিক সুস্থতা, শারীরিক আকার-আকৃতি এবং ঔষধপত্র গ্রহণের ওপরে হার্ট রেট নির্ভর করে। বিশ্রামরত অবস্থায় একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার্ট রেট থাকে মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ এর মাঝে।
রক্তচাপ হলো দুইটি সংখ্যা:
যারা রক্তচাপ পরিমাপ করান তারা এটা জানেন বটে। কিন্তু অন্যরা অনেকেই জানেন না যে, দুইটি সংখ্যা দিয়ে রক্তচাপ পরিমাপ করতে হয়।
একটি হলো সিস্টোলিক প্রেসার, যখন হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হতে থাকে তখন এই সংখ্যা পরিমাপ করা হয়। আরেকটি হলো ডায়াস্টোলিক প্রেসার, যখন হৃৎপিণ্ড দুইটি স্পন্দনের মাঝামাঝি অবস্থানে স্থির থাকে। সাধারণত সিস্টোলিক প্রেসার থাকে ১২০ এর নিচে, আর ডায়াস্টওলিক প্রেসার থাকে ৮০ এর নিচে।
দুই হাত থেকেই রক্তচাপ মাপা উচিৎ:
ডাক্তারের সাথে দেখা করতে যাবার সময়ে বেশিরভাগ মানুষ এক হাত থেকে রক্তচাপ মাপান। কিন্তু দুই হাত থেকেই মাপানো উচিৎ। এতে রোগীর আসল রক্তচাপ নির্ণয় সহজ হয়। এমনকি যেসব মানুষের দুই হাত থেকে পাওয়া রক্তচাপ আলাদা হয়, তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
জীবনসঙ্গীর মৃত্যু থেকে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে:
বয়স্ক মানুষদের স্বামী বা স্ত্রী যখন মারা যান, তখন তাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।