চোখ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ। এই চোখকে কীভাবে নিরাপদ রাখতে হয় তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আবার অনেকে জেনেও সচেতনতার অভাবে তা মানি না। এবার চোখের সমস্যা ও প্রতিকার হয় বা কী করলে চোখ ভালো থাকবে তা নিয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দেয়া হলো।
লক্ষণ ও উপসর্গ
কঞ্জাঙ্কটিভার সবরকম প্রদাহের ক্ষেত্রেই চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে ওঠে। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
কঞ্জাঙ্কটিভার প্রদাহ যখন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন হয়
চোখ থেকে পুজের মতো ঘন পদার্থ নিসৃত হয় এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাপড়িগুলো শক্ত এবং জড়সড় হয়ে ওঠে।
কঞ্জাঙ্কটিভার প্রদাহ যখন ভাইরাস দ্বারা উৎপন্ন হয়
চোখ থেকে পানির মতো ঘন পদার্থ বের হওয়া, প্রায়শই যেকোন একটি চোখ থেকে এই নি:সরণ ঘটা এবং
মাঝে মধ্যে চোখের পাতা যুক্ত হয়ে যাওয়া।
কঞ্জাঙ্কটিভার প্রদাহ যখন এ্যলাজির দ্বারা উৎপন্ন হয়
চোখের চারপাশের ত্বকগুলো ফুলে ওঠে
চোখে চুলকানির মতো হয়
চোখে জ্বলা-পোড়া হয় এবং পানি পড়তে থাকে
নাক দিয়ে পানি পড়া, এবং হাঁব্জি হওয়া
কঞ্জাঙ্কটিভার প্রদাহ যখন পরিবেগত প্রভাবক দ্বারা উৎপন্ন হয়
চোখের ভেতর কিছু ঢুকেছে বলে মনে হওয়া
চোখে জ্বলা-পোড়া হয় এবং পানি পড়তে থাকা
কী করা উচিত
ডায়াবেটিস ও চোখের ছানি :
চোখের লেন্স বা এর আবরণ (ক্যাপসুল) ঘোলা হয়ে যাওয়াকেই বলা হয় ছানি বা ক্যাটার্যাক্ট। আমাদের দেশে অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে চোখের ছানি। ছানির প্রথম অবস্থায় লেন্সের কিছু অংশ ঘোলাটে হয় এবং খুব ধীরে ধীরে দৃষ্টির প্রখরতা কমতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করলে দৃষ্টির প্রখরতা বাড়ানো সম্ভব। তবে ক্রমে ক্রমে লেন্স আরও ঘোলাটে হতে থাকে এবং ২-৩ বছরের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ লেন্সই ঘোলা হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ এ অবস্থাকে ‘ছানি পাকা’ বলে অভিহিত করেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ম্যাচিওর ক্যাটার্যাক্ট। সাধারণত ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সের মধ্যে এ ধরনের ছানি পড়তে দেখা যায়। অবশ্য অনেকের বংশগত কারণে এ বয়সের আগে বা পরে ছানি পড়তে পারে। এই বয়সজনিত ছানিকে বলা হয় সেনাইল ক্যাটার্যাক্ট। বয়সজনিত ছানি ছাড়া ডায়াবেটিস, চোখের বিভিন্ন প্রদাহ ও অসুখে, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা বা অন্য কোনো জীবাণুর প্রদাহ, শারীরিক কিছু অসুখ ইত্যাদি নানা কারণে চোখে যে কোনো বয়সে ছানি পড়তে পারে।
ডায়াবেটিসে ছানি পড়ার ঝুঁকি বেশি :
ডায়াবেটিসে সন্দেহাতীতভাবে ছানি পড়ার ঝুঁকি খুব বেশি। ‘ফ্রামিংহাম আই স্টাডি’ নামের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নন-ডায়াবেটিকের তুলনায় ডায়াবেটিক রোগীদের ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত ছানি হওয়ার হার কিছুটা বেশি। কিন্তু ৫০-৬০ বছরে এই হার ২-৩ গুণ বেশি। আবার ৬৯ বছর বয়সের পর ডায়াবেটিক ও নন-ডায়াবেটিক রোগীদের ছানি হওয়ার হার সমান সমান। সুতরাং এ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ডায়াবেটিক রোগীদের বেলায় ৬৯ বছর বয়সের আগে পর্যন্ত বয়সজনিত ছানি তুলনামূলকভাবে দ্রুত শুরু হয় এবং তাদের চিকিত্সা বা ছানি অপারেশন তুলনামূলক কম বয়সে সম্পন্ন করা প্রয়োজন হয়।
কিন্তু অল্প বয়স্ক জুভেনাইল ডায়াবেটিকদের চোখে এক ধরনের ছানি দেখা যায়, যা দেখতে সাদা ফোঁটা ফোঁটা হতে পারে বা সাদা ফোঁটা ও দাগের মতো দেখা যায়। স্লিট ল্যাম্প যন্ত্রের সাহায্যে এই ছানিকে তুষারকণার মতো মনে হয়। অনেকের চেখে আবার সূক্ষ্ম সূঁচের মতো ঘোলা দাগ দেখা যায়। এই দুই ধরনের ছানিকে বলা হয় মূল ডায়াবেটিক ছানি। মূল ডায়াবেটিক ছানি সাধারণত জুভেনাইল ডায়াবেটিক, যাদের রক্তের শর্করা খুবই উঁচু মাত্রায় থাকে এবং অনিয়ন্ত্রিত বিপাক প্রক্রিয়া বিদ্যমান, তাদের বেলাতেই বেশি দেখা যায়।
এ কারণে উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এবং উন্নয়নশীল দেশে মূল ডায়াবেটিক ছানি বেশি দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এই ছানি ধরা পড়লে এবং ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করলে ঘোলা লেন্সের দাগ আবার পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে, অর্থাত্ এই ছানিকে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিত্সা করালে আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হয়।
রক্তে শর্করা বেশি মাত্রায় হয়ে গেলে লেন্সে সরবিটল জমা হতে থাকে। অ্যালডোজ্ রিডাকটেজ নামক একটি এনজাইম এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এ অবস্থায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েকদিনের মধ্যে ছানি পড়ে যেতে পারে। অ্যালডোজ রিডাকটেজের এই ভূমিকার কথা বিবেচনা করে চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা ছানি প্রতিরোধ করার উপায় হিসেবে ওই এনজাইমের সংবাধক ব্যবহার করেছেন। যদিও আজ পর্যন্ত ছানি প্রতিরোধক কোনো এনজাইম বা ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।
ছানির চিকিৎসা:
ছানির প্রাথমিক অবস্থায় চশমার সাহায্যে দৃষ্টির প্রখরতা বাড়ানো গেলেও আস্তে আস্তে রোগী যখন তার স্বাভাবিক কাজকর্মে অসুবিধা অনুভব করেন, তখনই ছানির একমাত্র চিকিত্সা অপারেশন করতে হবে। আমাদের দেশে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে, রোগীর ছানি সম্পূর্ণ না পাকলে তা অপারেশনের যোগ্য হয় না। এই ধারণাটি একেবারেই ঠিক নয়। বরং বেশি পেকে গেলেই চোখের অনেক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে এবং পরে অপারেশন করেও আশানুরূপ দৃষ্টি ফিরে নাও আসতে পারে।
চোখ ওঠা রোগ প্রতিরোধ :
চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ জ্বালা, চোখে বালুর মতো কিছু পড়েছে বলে মনে হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের কোণে পিঁচুটি জমা, চোখে চুলকানি, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া—এসবই চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস রোগের লক্ষণ।
চোখের সাদা অংশ, যাকে কনজাংকটাইভা বলে, এর প্রদাহকে বলে চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস। সাধারণত এক চোখে শুরু হয় রোগটি। পরে দুই চোখই আক্রান্ত হয়। চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস রোগ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অ্যালার্জিসহ বেশ কয়েকটি কারণে হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত কারণে হওয়া চোখ ওঠা রোগ বড়ই ছোঁয়াচে।
সরাসরি হাতের স্পর্শ, ফোমাইট, বাতাস, এমনকি হাত-মুখ ধোয়া ও অজু-গোসলের সময় পুকুর, নদী বা সুইমিংপুলের পানির মাধ্যমেও জীবাণুগুলো ছড়াতে পারে। কনজাংকটিভাইটিসে আক্রান্ত চোখে আঙুল বা হাত লাগালে হাতে লেগে থাকা জীবাণু রুমাল, তোয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার, কলম, পেনসিল, বইয়ের পাতা, খাতা, টেবিল, চেয়ার, দরজার সিটকিনি, কলের ট্যাপ ইত্যাদিতে লেগে থাকতে পারে। এগুলোকে তখন চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ফোমাইট। রুমাল, তোয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার দিয়ে আক্রান্ত চোখ মুছলেও এগুলোতে জীবাণু লেগে থাকবে। এসব ফোমাইটের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়িয়ে যেতে পারে অন্যের চোখে।
রাতকানা
লক্ষণ:
চোখের সাদা অংশের রং পরিবর্তন হয়ে বাদামি হয়ে যায়
চোখের পানি কমে গিয়ে সাদা অংশ শুষ্ক হয়ে যায়
চোখ লাল হয়ে যায়
অল্প আলোতে চোখে ঝাপসা বা কম দেখে
উজ্জল আলোর দিকে সরাসরি তাকাতে পারে না
চোখে ফুলি পড়ে (বিটট স্পট)
চোখের মণিতে ঘা হয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়
কারণ:
ভিটামিন-এ’র অভাব
শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ানো
বাড়তি খাবারে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাদ্য কম বা না থাকলে
শিশুর স্বাভাবিক খাবারে ভিটামিন-এ জাতীয় খাদ্য কম থাকলে কিংবা ডায়রিয়া বা হাম হলে
প্রতিকার:
এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুদেরকে প্রতি বছরে ৬ মাস অন্তর অস্তর ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন-কলিজা, মাছের তেল, ডিম, মাখন এবং গাঢ় রঙ্গিন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া
শাক-সবজি রান্নায় অবশ্যই পরিমিত তেল ব্যবহার করা
শালদুধ সহ যতদিন সম্ভব বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো
লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসা করা
অপুষ্টিজনিত সমস্যা:
আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে। অপুষ্টি হলো প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব। অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুরা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে এমনকি অপরিণত বয়সে মারাও যেতে পারে। পুষ্টিহীণতার কারণে সাধারণত শিশুরা রাতকানা, রক্ত স্বল্পতা বা এনিমিয়া, হাড্ডিসার বা ম্যারাসমাস এবং গা ফোলা বা কোয়াশিওরকর রোগে ভোগে। এ রোগগুলো খুবই মারাত্মক ।
রাতকানা রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার
মুখে বা ঠোঁটের কোণায় ঘা রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার/প্রতিরোধ
রক্তস্বল্পতার লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার/প্রতিরোধ
হাড্ডিসারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার/প্রতিরোধ
গা ফোলা রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার/প্রতিরোধ
ম্যারাসমিক-কোয়াশিয়রকর রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার/প্রতিরোধ
আয়োডিনের অভাব জনিত রোগ
স্কার্ভির লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার/প্রতিরোধ
রিকেটস্ রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার/প্রতিরোধ
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ।