আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন স্কুল, কলেজ, অফিসের জন্য দেরি হয়ে যায় ভেবে বা ঘুম থেকে দেরি করে উঠার জন্য বা ওজন কমানোর উদ্দেশে সকালে নাস্তা বা যেকোনো একবেলার খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু তারা জানেন না যে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য এটা কোন ভাবেই একটি ভালো সিদ্ধান্ত নয়। যেকোনো এক বেলার খাবার বাদ দিয়ে কোন ভাবেই একজন মানুষ ওজন কমাতে পারে না বা সকালের নাস্তার মতো দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার বাদ দিয়ে সুস্থ থাকাও সম্ভব নয়।
খাবার বাদ না দেয়ার অনেক কারন রয়েছে এবং এর বেশির ভাগ কারনগুলোরই স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমান করেছেন যে প্রত্যেকের উচিত নির্দিষ্ট সময়ে তিন বেলা খাবার খাওয়া সেটা হতে পারে পরিমানে বেশি বা কম। তাই খাবার বাদ দেয়ার ব্যাপারটি কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর নয় এবং এর কোন ধরনের উপকারিতাও নেই শুধুমাত্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া। প্রথমত প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত যে সময় মতো খাওয়া হচ্ছে একটি ভালো অভ্যাস এবং সুষম খাবার গ্রহন হচ্ছে দ্বিতীয় লক্ষ্য। তাই কোন খাবার বাদ না দেয়ার মাধ্যমে আপনি সুস্থ থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যাও মোকাবেলা করতে পারবেন।
যেকোনো বেলার খাবার বাদ না দেয়ার কারনে কি কি সমস্যা হতে পারে
রক্তের শর্করার মাত্রা
আমাদের দেহে চিনি গৃহিত খাবারের শর্করার ভাঙ্গনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এই শর্করা আমাদের দেহে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে যা দেহের অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন। তাই যখন কোন এক বেলার খাবার বাদ দেয়া হয় তখন দেহের কোন জ্বালানী বা কর্মশক্তি থাকে না এর ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে গিয়ে মাথা ঘুরাতে পারে এবং দেহের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হতে পারে।
মন মেজাজের পরিবর্তন
খাবার বাদ দেয়ার একটি বড় কারন হতে পারে মেজাজের পরিবর্তন। সাধারণত খাবার থেকে গ্লুকোজ সংগৃহীত হয় এবং এই গ্লুকোজ হচ্ছে মস্তিস্কের প্রধান শক্তির উৎস যা মন মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া খাবার বাদ দেয়ার ফলে মস্তিস্কে কম শক্তির সরবরাহ হয় যার ফলে এটা ব্যক্তির মাঝে বদমেজাজ এবং বিরক্তির সৃষ্টি করে।
ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে
অনেকেই জানেন না যে দুপুরের খাবার যদি বাদ দেয়া হয় তাহলে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর কারন সময়মত খাবার গ্রহন না করলে দেহে ইন্সুলিনের প্রতিক্রিয়ায় বিলম্ব হয়।
বিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়
দিনের কোন একসময়ের খাবার বাদ দেয়ার ফলে তা দেহ তন্ত্রের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এর ফলে দেহ স্টারভেশন মুডে চলে যায়। তখন দেহের সংরক্ষিত শক্তি ব্যবহৃত হয় এবং যখন এই শক্তি শেষ হয়ে যায় তখন দেহের সামগ্রিক বিপাক কমে যায়। যার ফলে এটা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
হজমের সমস্যা
অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার একটি প্রধান কারন হচ্ছে খাবার বাদ দেয়ার প্রবণতা। প্রতিবার খাবার বাদ দেবার ফলে পাকস্থলীতে কিছু অ্যাসিড উৎপন্ন হয়ে তা খুব খারাপভাবেই পাকস্থলীকে আক্রান্ত করে যার ফলে আলসার ও পেটের ব্যাথার মতো বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে।
তাই ভালো স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় রাখতে হলে
সবচেয়ে ভালো হয় যদি দিনে কম পরিমানে ৪-৫ বার খাওয়া যায়। এতে করে পেট ভরা থাকার একটা অনুভূতি পাওয়া যায় এবং ক্ষুধা কম অনুভূত হয় যা দ্রুত ওজন কমার উপায় হিসেবে কাজ করে।
আরো একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে দিনের দুইবার খাবারের মধ্যবর্তী সময় যেন কোন ভাবেই ৪ ঘণ্টার বেশি না হয়। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কোন ভাবেই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার সকালের বাদ দেয়া যাবে না।