শীতকালে মাথা ব্যাথা, পেটে সমস্যা এসবও শীতকালে অহরহ হয়ে থাকে। নাক বন্ধ, গলা ব্যাথা এসব সমস্যার কারণে শীতকাল অনেকের কাছেই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে ও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এসব সমস্যা থেকে অনেকখানি সমাধান পাওয়া যায়।
সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা এগুলো শীতে বেশি সমস্যা করে থাকে। এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু সহজ উপায় আলোচনা করা হল –
# সর্দির সমস্যার সমাধান :
১। নাক দিয়ে জল পড়লে নাকের প্রত্যেক কোণায় অন্তত ১০ বার করে চাপ প্রয়োগ করুন। এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করবেন যাতে নাক প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চোখের যে অংশ দিয়ে জল বের হয় তার ঠিক নিচে অনুরূপে ১০ বার চাপ প্রয়োগ করুন। কানের লতি ম্যাসাজ করুন ১০ সেকেন্ড। নাক জল দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং বড় করে শ্বাস নিন এবং শ্বাস ছাড়ুন।
২। নাক ঝাড়ুন কিন্তু বেশি জোরে নয়।
৩। ভিক্স বা একই রকম গন্ধযুক্ত কিছু নাকের ঠিক নিচে লাগান। ভিক্সের কৌটার কাছে নাক নিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নিন।
৪। জল ফুটিয়ে একটি পাত্রে রাখুন। পাত্রের একটু উপরে মুখ নিন এবং জলের উত্তপ্ত বাষ্পে বড় করে শ্বাস নিন। এটি করার সময় একটি বড় তোয়ালে দিয়ে মাথা ও পাত্র ঢাকার চেষ্টা করুন যাতে বাষ্প সরাসরি মুখে আসে এবং তা উত্তপ্ত থাকে। জলে একটু কর্পূর মিশিয়ে নিলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এটি বন্ধ নাক খুলতে অনেক কার্যকর।
৫। যেকোন ভালো অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ সেবন করলে তা কাজে দেয়। যেমন – ফেনাডিন, ওরাডিন প্রভৃতি। তবে এটি করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
# কাশি ও তার সমাধান :
১। খুশখুশে কাশি দূর করতে আদা চা বা যেকোন গরম পানীয় বেশ কার্যকর। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। গলা শুকনো থাকলে কাশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২। মধুও ঠান্ডার সমাধানে অনেক কাজে দেয়। কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে তা কাশি থেকে যথেষ্ট আরাম দেয়।
৩। স্ট্রেপসিল কাশির জন্য কার্যকর। এছাড়া মিন্টযুক্ত লজেন্স, যেমন – সেন্টারফ্রেশ, মেন্টস প্রভৃতি অনেক সময় কাজে দেয়।
৪। কাশি বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কফ সিরাপ সেবন করুন। তবে তার আগে জেনে নিন সেই সিরাপে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা বা রিঅ্যাকশন হবে কিনা। কিছু হার্বাল সিরাপ, যেমন – স্কয়ার ফার্মার অ্যাডোভাস, ডাবরের হানিটাস প্রভৃতি অনেক কার্যকর। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত হওয়ায় এগুলো ব্যবহারে অন্য কোন সমস্যা দেখা দেয় না।
৫। নিম, বাসক পাতা প্রভৃতির রস কাশির সমাধানে খুব কাজে দেয়। এছাড়া ঠান্ডার অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও এগুলো কার্যকর।
# গলা ব্যাথার সমাধান :
১। গলা ব্যাথার জন্য গরম পানীয় খুব কার্যকর। আদা চা, কফি, মধু মিশানো জল, গরম দুধ প্রভৃতি গ্রহণ করুন।
২। গলা ব্যাথা বেশি হলে শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অনেক সময় টনসিল ফুলে গলা ব্যাথা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।
৩। গলা ব্যাথার সাথে যদি ঢোক গেলার সময় কাঁটা কাঁটা অনুভূতি হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। গ্ল্যান্ড ফুলে, গ্ল্যান্ডে ইনফেকশন হলে এরকম হয়ে থাকে। সময়মত চিকিৎসা না করালে পরবর্তীতে এটি থেকে জ্বর ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে এসব সমস্যা থেকে অনেকখানি সমাধান পাওয়া যায়। তবে একটি প্রবাদ আছে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো।
শীতকালে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরুন। ভোর সকালে বা সন্ধ্যায় বের হওয়ার সময় মাথা ঢেকে বের হন। মাফলার, টুপি প্রভৃতি ব্যবহার করুন। মাথায় কুয়াশা পড়লে তা থেকে মারাত্মক ঠান্ডা লেগে থাকে। যাদের টনসিলের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই গলা ঢেকে রাখবেন। ঠান্ড পানীয় পান, ঠান্ডা জল ব্যবহার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। শীতে রোগ থেকে মুক্ত থাকুন এবং শীতের হিমেল পরিবেশ উপভোগ করুন