প্রায় একবছর অভিনয় থেকে বিরত ছিলেন ভাবনা। নিয়মিত অভিনয়শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সঙ্গে এই হঠাৎ বিচ্ছেদে তার কষ্ট হয়েছে অনেক । তবু জিরো ডিগ্রি’র পর অনিমেষ আইচ এর দ্বিতীয় ছবি ‘ভয়ংকর সুন্দর’ এর প্রস্তুতিহেতু এ বিচ্ছেদ তাকে মেনে নিতে হয়েছিলো। অবশেষে শুরু হয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত চলচ্চিত্রের শুটিং। ইতোমধ্যেই অনিমেষ আইচ সদরঘাট, বরিশাল ও কুয়াকাটায় শুটিং করেছেন। ২২ এপ্রিল আসছেন এ চলচ্চিত্রের নায়ক পরমব্রত। তার আগে ভাবনার সঙ্গে কিছুক্ষণ…
কেন ‘ভয়ংকর সুন্দর’
রুদ্র, আমি জানি না কেন এ ফিল্মটির নাম ভয়ংকর সুন্দর। অনিমেষ আইচ বলতে পারবেন কেন তিনি এ সিনেমার নাম ভয়ংকর সুন্দর রেখেছেন। তবে আমার যেটা ধারণা তা হলো, এ সিনেমায় আমার যে চরিত্র তার নাম নয়নতারা। নয়নতারা খুব সুন্দর একটা মেয়ে। শুধু যে দেখতে তাই নয়, তার ব্যক্তিত্ব আচার-আচরণ সবই সুন্দর। তবে এই খুব সুন্দর মেয়েটা একসময় ভয়ংকর রূপ ধারণ করে, এ জন্যই হয়তো সিনেমার নাম ভয়ংকর।
এটা কি নায়িকা প্রধাণ সিনেমা?
না এটাকে আমি নায়িকা প্রধাণ সিনেমা বলবো না। বলবো গল্প প্রধাণ সিনেমা। এ সিনেমার প্রধাণ আকর্ষণ হচ্ছে এর গল্প।
খুব নির্মোহভাবে বলো, অনিমেষ আইচ কেমন নির্মাতা
অনিমেষ আইচ আমার প্রিয় নির্মাতা। ওনার নির্মাণের সবগুলো দিকই আমার ভালো লাগে। বিশেষ করে তার লেখা। অনেক নাটকে কাজ করি আমি। অনেক স্ক্রিপ্ট হাতে আসে। কিন্তু যখন তার গল্প হাতে পাই, আমার মুখে তখন হাসি ফুটে উঠে। ফলে তার লেখার ফ্যান আমি বরাবরই। আর নির্মাণের জায়গায় অনিমেষ আইচ খুব যত্নশীল একজন নির্মাতা। পর্দায় তিনি প্রত্যেকটা চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। একটা উদাহরণ দেই, ভয়ংকর সুন্দরের শুটিংয়ের জন্য আমরা গিয়েছিলাম সদরঘাট। সেখানে একটা ছোট্ট ছেলের সাথে আমার সিকোয়েন্স আছে। ছেলেটার দুটো ডায়লগ। অনিমেষ দা বাইরের কোন আর্টিস্ট নিলেন না।
তিনি শুটিং টিম নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন সদরঘাটে। তার বিশ্বাস তিনি ওখানেই কোন ছেলেকে পেয়ে যাবেন। আমরা অনেক বোঝালাম। সেখানে গিয়ে কাউকে নাও পাওয়া যেতে পারে। অনিমেষ শুনলেন না। ওখানে গিয়ে ঠিকই তিনি একজন ছেলেকে খুঁজে বের করলেন। এবং শুধুমাত্র দুটো ডায়ালগের জন্য তার সঙ্গে আট ঘন্টা সময় ব্যয় করলেন। সবশেষে ছেলেটা যখন পারফর্ম করলো দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।এই হচ্ছে অনিমেষ আইচ। উনি যখন ক্যামেরার পেছনে থাকেন তখন আমি খুব নির্ভার থাকি। কোন বাড়তি কাজ করতে হয়না আমার। জাস্ট উনি যা বলেন তা করলেই একটা চমৎকার কাজ হয়ে যায় ওটা।
সিনেমার প্রস্তুতি
আমি এস.এস.সি পরীক্ষার পর অভিনয়ে যুক্ত হই। যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি আসলে অভিনয়টাই করতে চাই, তখন আমার মনে হল যে ধরণের জীবন আমি ছুঁতে পারবো না সে ধরণের ক্যারেক্টার আমাকে করতে হবে। অভিনয়টাকে আমি খুব ভালোবেসে ফেললাম। কখনোই ফিল্মের ব্যপারে না ছিলো না। প্রথম থেকেই সিনেমার ব্যাপারে আমার ইচ্ছে ছিলো। অনেক বড় বড় জায়গা থেকে অফার এসেছিলো। কিন্তু আমি অপেক্ষা করেছি। মনে হয়েছে আমি যদি কখনো ভালো গল্প পাই তবেই সিনেমা করবো। অনিমেষ আইচের এই স্ক্রিপ্ট টা হাতে পেয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এক কথায় বলতে গেলে ‘ওয়াও’ হয়েছি। তারপরই তো শুরু…
এই সিনেমাটার জন্য কেমন প্রস্তুতি ছিলো?
সর্বশেষ গত রোজার ঈদে আমি তিনটা কাজ করেছিলাম। তারপর থেকে প্রায় একবছর আমি অভিনয় করি নি। এটাই আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তবু আমি করিনি। অনেক পছন্দের নির্মাতার ভালো গল্প, পছন্দের স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়েও ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। খুব কষ্ট হয়েছে। অনিমেষ আমাকে বলেছিলো, ‘তোমার অভিনয়ের ক্ষুধাটা জন্মাক ।’ এ ক্ষুধাটা আমার এমনভাবে জন্মেছিলো যে আমি অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। তবে এই ফাঁকে আমি ‘নয়নতারা’কে সময় দিতে পেরেছি। একদম খুঁটিনাটি সময় দিতে পেরেছি স্ক্রিপ্ট টাকে। ফলে সিদ্ধান্তটা আমার জন্য ভালোই ছিলো বলে মনে হয়। আরো অনেক প্রস্তুতি ছিলো, সেসব আমি ধীরে ধীরে জানাতে চাই। একটা বলে দেই, চার কেজি ওজন কমিয়েছি।
নায়িকা জীবন তো শুরু হয়ে গেলো…
হ্যাঁ, অবশেষে। সিনেমার শুটিং বেশ মজার। নাটকের মতো প্রতিদিন বারোটা সিন করতে হবে এমন তাড়া নেই। সারাদিন ধরে খুব যত্ন নিয়ে হয়তো একটা সিনই হচ্ছে। সারাক্ষন পাশে মেক-আপ আর্টিস্টরা আছে, ঠোঁটের পাশে একটা চুল এলেও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সারাক্ষন আমার ডায়লগের দিকে খেয়াল রাখছে সহকারী পরিচালকরা। সারাক্ষন টেক কেয়ার হচ্ছে। এটা অনেক মজার। তবে আমার মধ্যে অতো নায়িকা নায়িকা ভাব নেই। আমি নায়িকার চেয়ার ছেড়ে টুলেও বসছি। টিমের সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব আমার।
শুটিং নিয়ে একটু লুকোচুরি ছিলো…
এটা আসলে লুকোচুরি ছিলে না। অনিমেষ আইচ আসলে অতোটা প্রচার চান না। কাজের সময় উনি প্রচারের কোলাহল এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন, এমনটাই মনে হয়েছে আমার।
সিনেমার গল্পটা কেমন?
এটা রোমান্টিক ফিল্ম। কমার্শিয়াল ছবি। তবে একজন নারীর সঙ্কট এখানে যেমন উঠে এসেছে তেমনি পারিবারিক ও রাস্ট্রিয় সংকটও এতে উপস্থিত।
এই সিনেমার পরের গল্পটা কেমন?
এখনো জানি না রুদ্র। আমার মনে হচ্ছে আমি সেই ছোটবেলার মতো সিলেবাসের জীবনে ঢুকে পড়েছি। প্রতিদিন সিলেবাস অনুযায়ী কাজ করছি। প্রচুর হোমওয়ার্ক করতে হচ্ছে। সিনেমাটা শেষ না হলে বলতে পারছি না এরপর কি করবো। তবে খুব ভালো একটা সিনেমার অফার পেয়েছি। অনেক বড় ডিরেক্টর অনেক ভালো গল্প, অনেক ভালো বাজেট। কিন্তু আমি জানি না কি হবে। এই যাত্রা আগে শেষ হোক..