সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তানী চলচ্চিত্রকে শাসন করে বলিউড, এমনকি সেদেশে নির্মিত ছবিগুলোর মধ্যে থাকে ভারতে নির্মিত ছবির ছায়া। এই অভিযোগ খন্ডন করতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে বিশ্বমানের পাকিস্তানী চলচ্চিত্র ‘বিন রোয়ে’। বিশ্ব চলচ্চিত্রে নিজস্ব অবস্থান তৈরিতে ছবিটি প্রথম পদক্ষেপ- এমন কথাই বলছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা।
প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বাজেট অনুসরন করেই নির্মিত হয়েছে ছবিটি। নির্মাণ ও প্রযোজনা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, ছবিটির গল্প বা কাহিনির মত কোন কিছু আগে দেখা যায়নি। তবে শুধু চলচ্চিত্রামোদী দর্শক কিংবা সমালোচক নয়- পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ও তারকাদের মুখেও এখন ছবিটির নাম।
অনেকে চলচ্চিত্রটিকে গেম চেঞ্জার হিসেবে মনে করছেন। দেশটির জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিরা খান বলেন, 'ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করছি বিশ্বব্যাপী সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। পাকিস্তান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা একটা মাইলস্টোনও বটে। এই ছবি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যেও অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমিতো বুঝতেই পারিনি আগ্রহটা এতো বেশি! আমরা শুটিংয়ের কাজ শেষে ঘরে ফিরেছি আবার শুটিংয়ের কাজে বেরিয়েছি। আসলে মুক্তির আগেই সিনেমা নিয়ে এই আগ্রহ, অপেক্ষার বিষয়টা বুঝার কোন অবকাশই ছিলনা। পাকিস্তানের কোন সিনেমা নিয়ে এত আগ্রহ এটা সত্যিই বিস্ময়কর এবং বড় একটা পাওয়া'।
পাকিস্তান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি ‘বিন রোয়ে’। ছবির প্রচারে যেন কমতি না থাকে, সেদিকেও দৃষ্টি ছিল সজাগ। এই প্রথম কোন পাকিস্তানী ছবির প্রিমিয়ার শো হলে পশ্চিমা দেশে এবং কয়েকটি দেশে একযোগে মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটির পরিচালক ও প্রযোজক মোমেনা দুরাইত মনে করছেন তারা স্বপন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, 'পাকিস্তানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনার আশা আর স্বপ্ন আমাদের সবার মধ্যেই আছে এবং আমরা সবাই এই লক্ষ্য পূরণেই কাজ করে চলেছি। বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে নতুন নতুন ছবি হচ্ছে এবং কাহিনীগুলোও খুব সচেতনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে । আমার মনে হচ্ছে যে আমি এই ইন্ডাস্ট্রির পুন:জীবনের জন্য কাজ করছি এবং আমার মতো আরও অনেকের সিনেমা নিয়ে কাজ করা উচিত, যেন আমরা এই চলচ্চিত্র শিল্পটাকে একটা শক্তিশালী জায়গায় দাড় করাতে পারি'।
বিন রয়ের কাহিনী সম্পূর্ণ রোমান্টিক। রোমান্টিক গান ও নাচে সমৃদ্ধ ছবিটি তাই আলাদাভাবে দর্শকদের আকৃষ্ট করবে বলে মনে করছেন অভিনেতা রোহান শেখ। তিনি বলেন, 'নব্বইয়ের দশকে সিনেমার তুলনায় এখনকার সিনেমা অনেক আলাদা। তখনকার নির্মাণ একরকম ছিল, সেটাই দর্শকদের টানত। এখন প্রযুক্তির যুগ আর খুব সহজেই সব ঘটনা, খবর পাওয়া যায়। সিনেমার কাজেও এখন নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে নতুন নতুন ভিডিও ক্যামেরা, এডিটিং সফটওয়্যার সবকিছু কাজে লাগিয়ে সিনেমা তৈরি হচ্ছে। কাহিনীতেও বৈচিত্র্য এসেছে। হিন্দি সিনেমার নির্মাতা, অভিনেতারাও এখানে আসছেন, অনেক সিনেমার শুটিং হচ্ছে পাকিস্তানে। সুতরাং এখন ভালো করার অনেক সুযোগ'।
‘বিন রোয়ে’ যদি বক্স অফিস হিট করে তাহলে এটা নিশ্চিত যে পাকিস্তান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক সিনেমা নির্মাণ করা হবে।