মার্ভেল! নামটা শুনতেই চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় থর, আয়রন ম্যান, স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, হাল্কসহ অনেক সুপারহিরো চরিত্রের মুখ। মার্ভেলের তৈরি কমিক চরিত্রগুলো সত্যিই আমাদের অন্যরকম একটি জগতে নিয়ে গেছে।
কিন্তু মার্ভেলের তৈরি চরিত্র স্পাইডারম্যান বা ফ্যান্টাস্টিক ফোর এখন আর মার্ভেলের মালিকানায় নেই! হাতছাড়া হওয়া মার্ভেলের তৈরি বিখ্যাত এই চরিত্রগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।
স্পাইডারম্যান ( সনি পিকচার্স )
স্পাইডারম্যান চলচ্চিত্র নির্মাণের অনেক আগেই কমিক চরিত্র হিসেবে স্পাইডারম্যানকে বিক্রি করে দেয় মার্ভেল। একটা সময় নানারকম চুক্তি ও হাতের রকমফেরে এই স্পাইডারম্যান গিয়ে যুক্ত হয় সনি পিকচার্সের সাথে। একে একে স্পাইডারম্যানের ওপর নির্মিত নানা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একের পর এক রেকর্ড ভাঙতে থাকে সনি। সেই সাথে প্রচুর আয় করতে থাকে এটি। এক পর্যায়ে, মার্ভেল স্টুডিওর সাথে সংঘর্ষ লাগে সনির। তখন একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, মার্ভেল ক্যাপ্টেন আমেরিকাতে স্পাইডারম্যানকে ব্যবহার করতে পারবেন। চরিত্রটিকে নিয়ে আরো কমিকও লিখতে পারবেন। তবে সনি স্বাধীনভাবে স্পাইডারম্যানকে ঠিকঠাক করে ও নির্বাচন করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখবে।
দ্য ফ্যান্টাস্টিক ফোর ( ২০ সেঞ্চুরি ফক্স )
ফ্যান্টাস্টিক ফোর মার্ভেল কমিকসের জনপ্রিয় একটি কমিক। তবে একটা সময় এই কমিকটিরও সব ধরনের মালিকানা হারিয়ে ফেলেন মার্ভেল। ২০ সেঞ্চুরি ফক্সকে পুরোপুরি এর সত্ত্ব দিয়ে দেয় মার্ভেল। ২০০৫ সালে শুরু হয় ২০ সেঞ্চুরীর হাত ধরে ফ্যান্টাস্টিক ফোরের পথচলা। চলচ্চিত্র জগতে বেশ সাড়া ফেলে এটি। তবে তার কিছুদিন পরই মার্ভেল ফ্যান্টাস্টিক ফোরের লেখকদেরকে অদ্ভুত নির্দেশ দেয়- নতুন করে আর কোন চরিত্র না বানাতে। কারণ চুক্তি অনুসারে মার্ভেল এই কমিকে কোন কিছু যোগ করলেই সেটা সাথে সাথে ফক্সের অধিকারে চলে যাবে। মাঝে অবশ্য একবার গুজব ছড়িয়েছিল যে ফক্স ফ্যান্টাস্টিক ফোরকে মার্ভেলের হাতে আবার ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছে। তবে সে গুজব কেবল গুজবই রয়ে গেছে।
এক্স ম্যান ( ২০ সেঞ্চুরি ফক্স )
এক্স ম্যান চলচ্চিত্র হিসেবে ২০০০ সাল থেকে খুব ভালো করতে থাকে বক্স অফিসে। তবে চুক্তি অনুযায়ী এটি তখন ফক্সের অধিকারে। তবে ফক্স ও মার্ভেলের চুক্তির কিছু অদ্ভূত বিষয় রয়েছে এক্স ম্যানের ব্যাপারে। সেগুলো হচ্ছে, একদিক দিয়ে এক্স ম্যান বা এর যে কোন চরিত্রের যে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ফক্সের অধিকারে যাবে। তবে আরেক দিক দিয়ে অ্যাভেঞ্জার্সে থাকা মার্ভেলের চরিত্রগুলোর মালিকানা, অর্থ্যাত্ প্রিন্টিং মালিকানা কিন্তু মার্ভেলের। আর তাই এক্স ম্যান ও অ্যাভেঞ্জার্সের ভেতরে পড়ে গিয়ে বেশ অদ্ভূত এক ঝামেলায় পড়ে গিয়েছে মার্ভেলের দুটো চরিত্র। স্কারলেট উইচ আর কুইকসিলভার। তবে এতটুকুই খালি নয়। চুক্তি অনুযায়ী এই দুটো চরিত্রকে মার্ভেল ব্যবহার করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে তাদের উত্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে না তারা। আর সেজন্যেই এইজ অব আলট্রনে গিয়ে স্কারলেট আর কুইকসিলভারকে অন্যভাবে তৈরি হওয়ার বা জন্ম দেয়ার পথ বের করতে হয়েছে মার্ভেলকে।
ডেডপুল ( ২০ সেঞ্চুরি ফক্স )
২০০৯ সালে প্রথম বড়পর্দায় দেখা যায় ডেডপুল। রাগত ভক্তদেরকে অনেকটা সন্তুষ্ট করতে ফক্সকে সাহায্য করে এটি। সামনেও আবার আসছে ডেডপুলের আরেকটি চলচ্চিত্র। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভক্তরা সামনের মাসেই চলচ্চিত্রটিকে উপভোগ করতে পারবেন। তবে আরো অনেক চরিত্রের মতো এই চরিত্রকেও হারিয়েছে মার্ভেল। বর্তমানে ডেডপুলের ব্যাপারে কোন কিছু করার কোনরকম অধিকার নেই এই প্রতিষ্ঠানটির।
নেমোর ( ইউনিভার্সাল )
মার্ভেলের আরো জনপ্রিয় একটি কমিক চরিত্র নেমোর। তখন মার্ভেলের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। দেউলিয়া হওয়ার মতো অবস্থা। সে সময় একে একে নিজের নানা অংশ বেঁচে দিচ্ছিল মার্ভেল। নেমোরকে তখন খুঁজে পায় তারা। তারপরই নেমোরের রাস্তা ধরে চলে আসে একের পর এক আরো বেশ কিছু সুপারহিরো। বেশ জনপ্রিয়তা পায়। উঠে দাঁড়ায় মার্ভেল। তবে এই নেমোরকে নিয়েও বেশ ঝামেলা রয়েছে মার্ভেল আর ইউনিভার্সালের। চুক্তি অনুযায়ী ইউনিভার্সাল বা মার্ভেল- পরস্পরের অনুমতি ছাড়া কেউই নিজের ইচ্ছানুযায়ী কোনরকমের কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে না। ফলে নিজেদের নানা কাজেই এখন অব্দি নেমোরকে নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে দুই পক্ষকে।
দ্য সিলভার সার্ফার ( ২০ সেঞ্চুরি ফক্স )
ফ্যান্টাস্টিক ফোরের মাধ্যমে প্রথম সবাই পর্দায় পরিচিত হয় সিলভার সার্ফারের সাথে। এরপর আর এর সম্পর্কে খুব একটা এগোয়নি ফক্স। এই চরিত্রটি নিয়ে মার্ভেলের যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও ফক্সের নেই, আবার পরের ফ্যানটাস্টিক ফোরের আকর্ষণ হিসেবে সিলভার সার্ফারকে রাখতে চাইছে ফক্স- এমন অনেক গুজব ছড়ানো রয়েছে এ দুটো প্রতিষ্ঠান আর সিলভার সার্ফারকে নিয়ে। যদিও এর কোনটাই এখনো অব্দি সত্যি হওয়ার প্রমাণ পায়নি।