Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

বাংলা সিনেমার আইকন ‘পথের পাঁচালী’



১৯০০ সালে গ্রাম বাংলার জীবন প্রত্যক্ষ করতে হলে আপনাকে পথের পাঁচালী দেখতে হবে। পথের পাঁচালী গ্রাম বাংলার সুন্দর কিন্তু কঠিন জীবনের প্রতিচ্ছবি। সেই সময়ের জীবন যাত্রার এক প্রামান্য দলিল। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা বাংলা সাহিত্যের এক জীবনীমূলক উপন্যাস 'পথের পাঁচালী'কে নিয়ে সত্যজিৎ রায় ছবি তৈরির কথা চিন্তা করেন। ১৯৪৭/৪৮ সালের দিকে তিনি গল্পটির চিত্রনাট্য তৈরি করেন। সত্যজিৎ রায় তার কিছু জমানো টাকা নিয়ে ১৯৫২ সালে এর শুটিং শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন এর প্রাথমিক শুটিংয়ের ভিডিও দেখিয়ে প্রযোজকদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করবেন। কিন্তু সে ধরনের আর্থিক সহায়তা তার মিলছিল না। তাই অনেক কষ্টে প্রায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে থেমে থেমে এর শুটিং শেষ হয়। ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট ছবিটি কলকাতায় মুক্তি পায়। মুক্তির পর সত্যজিৎকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সিনেমাটি ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়ে পুরো বিশ্বের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিগুলোতেই আলোচিত হয়। আর সত্যজিৎ রায় হয়ে উঠেন চলচ্চিত্র জগতের একজন শ্রেষ্ঠ পরিচালক। সেই 'পথের পাঁচালী' সিনেমা মুক্তির আজ ৬০ বছর পূর্ণ হল।

কি ছিলো সেই গল্পে? কোনো এতো কথা সেই সিনেমাকে ঘিরে? মূলত পথের পাঁচালী গল্পটি একটি মানবিক গল্প। বিশের দশকে বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অপু (সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়) ও তাঁর পরিবারবর্গের জীবনযাত্রার কথাই ছিল পথের পাঁচালী ছবির মুখ্য বিষয়।

সিনেমাটিতে দেখানো হয়, অপুর বাবা হরিহর রায় (কানু বন্দ্যোপাধ্যায়) নিশ্চিন্দিপুরের পৈত্রিক ভিটেয় তাঁর বৃহৎ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পরিবারের তীব্র অর্থসংকটের সময়েও তিনি তাঁর প্রাপ্য বেতন আদায় করার জন্য নিয়োগকর্তাকে তাগাদা দিতে পারেন না। হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া তাঁর দুই সন্তান দুর্গা (উমা দাশগুপ্ত) ও অপু এবং হরিহরের দূর সম্পর্কের বিধবা পিসি ইন্দির ঠাকরুনের (চুনীবালা দেবী) দেখাশোনা করেন। দরিদ্রের সংসার বলে নিজের সংসারে বৃদ্ধ ন্যূজদেহ ইন্দির ঠাকরুনের ভাগ বসানোটা ভাল চোখে দেখেন না সর্বজয়া।

ভাইবোন অপু ও দুর্গার মধ্যে খুব ভাব। দুর্গা দিদি। সেও মায়ের মতোই অপুকে ভালবাসে। তারা কখনও কখনও চুপচাপ গাছতলায় বসে থাকে, কখনও মিঠাইওয়ালার পিছু পিছু ছোটে, কখনও ভ্রাম্যমাণ বায়োস্কোপ-ওয়ালার বায়োস্কোপ দেখে বা যাত্রাপালা দেখে। সন্ধ্যাবেলা দু'জনে দূরাগত ট্রেনের বাঁশি শুনতে পায়। একদিন তারা বাড়িতে না বলে অনেক দূরে চলে আসে ট্রেন দেখবে বলে। কাশের বনে ট্রেন দেখার জন্য অপু-দুর্গার ছোটাছুটির দৃশ্যটি এই ছবি এক স্মরণীয় ক্ষণ। আবার একদিন জঙ্গলের মধ্যে খেলা করতে গিয়ে তারা ইন্দির ঠাকরুনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।

গ্রামে ভালো উপার্জন করতে সক্ষম না হয়ে হরিহর একটা ভালো কাজের আশায় শহরে যায়। হরিহরের অনুপস্তিতিতে বাড়ির অর্থসংকট তীব্রতর হয়। সর্বজয়া অত্যন্ত একা বোধ করতে থাকেন। বর্ষাকালে একদিন দুর্গা অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধায়। ওষুধের অভাবে তার জ্বর বেড়েই চলে। শেষে এক ঝড়ের রাতে দুর্গা মারা যায়। একদিন হরিহর ফিরে আসে। শহর থেকে যা কিছু এনেছে, তা সর্বজয়াকে বের করে দেখাতে থাকে। সর্বজয়া প্রথমে চুপ করে থাকে। পরে স্বামীর পায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। হরিহর বুঝতে পারে যে, সে তার একমাত্র কন্যাকে হারিয়েছে। তারা ঠিক করে গ্রাম ও পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে জীবিকার সন্ধানে। যাত্রার তোড়জোড় শুরু হলে, অপু দুর্গার চুরি করা পুতির মালাটা আবিষ্কার করে। সে মালাটা ডোবার জলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, অপু বাবামায়ের সঙ্গে গরুর গাড়িতে চড়ে নতুন এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলেছে। গল্পের এখানে এসে দর্শক নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না।

দিদি ও দাদিকে হারানো, শৈশবকে হারানো অপুর কষ্ট প্রত্যেক দর্শককেই নাড়া দিয়ে যায়। আর এই কস্ট অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই সত্যজিৎ ছবিটি তৈরি করেছিলেন। যা এখনো অত্যন্ত মানবিক, সেই মানবিকতা এখনো যেকোন ছবিকে ছাড়িয়ে যায় বলেই পথের পাঁচালী এখানো সেরা এপেক ছবির তালিকায় পুরো বিশ্বেই অন্যতম।