পহেলা বৈশাখে ঘটে যাওয়া কতিপয় পুরুষের হাতে নারীর শ্লীলতাহানীর ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ। সারাদেশের মানুষের সাথে এবার কন্ঠ তুলেছেন নির্মাতা থেকে অভিনয়শিল্পী সকলেই। সবাই ধীক্কার জানানোর পাশাপাশি দাবি তুলেছেন এর যথাযথ বিচারের। নারীর প্রতি পুরুষের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ঘর ছেড়ে পথে নামতে আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই দাবি তুলেছেন জোরালো প্রতিবাদের। আর চুপ করে থাকা নয়। এবার চাই সত্যিকারের প্রতিবাদ। দিল্লিতে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলো ভারত। তেমন উদারহরণ তুলে ধরে নিজেদের ধীক্কার জানিয়েছেন তারকারা। প্রশ্ন তুলেছেন আমরা জাগবো কবে? কবে আমাদের নারীদের বিরুদ্ধে পুরুষের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা গনজোয়ার তুলবো? পুরুষ নামের নপুংশকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ১৮ এপ্রিল বিকেলে তারকারা প্রেসক্লাবের সামনে মানব্বন্ধন করেছেন। এ মৌন অবস্থান শুধু মৌন অবস্থানই নয় এখান থেকে ডাক এসেছে- ‘তারুণ্য আর একবার রুখে দাড়াও এই শহরে/পুরুষ নামের নপুংসকদের বিরুদ্ধে, নারী নিগ্রহের বিরুদ্ধে হোক প্রতিবাদ’।
অনেক তারকাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রশমিত করেছেন। অনেকেই ফেসবুক ছেড়ে রাস্তায় নামতে আহ্বান জানিয়েছেন মানুষকে। সবমিলে ডাক এসেছে নারী নির্যাতনে বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।
নারীর মর্যাদা রক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারকারা। জেগে উঠুক বাংলাদেশ…
দিনভর শিল্পীদের দেয়া স্ট্যাটাসের আরো কিছু অংশ সংযোজিত হলো..
লজ্জা ছি!-ওমর সানী
ওমর সানী বলেন, হায়েনা না, নিজেদেরকে মানুষ বলি। আমরা আশরাফুল মাখলুকাত। মেয়েরা মায়ের জাত, আসুন সবাই ওনাদের সম্মান করি। আর করতে অক্ষম হইলে চলেন নিজরা চিড়িয়া খানার পশু হয়ে খাচা বন্দি করে রাখি আমাদেরকে। লজ্জা ছি!
আপনি আপনার জিপার সামলান:ফারুকী
নারীর উপর যৌন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে মুখর রয়েছেন গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। তিনি তার ফেসবুকে লিখেন, ‘পরিষ্কার কথা , যার পছন্দ হবে জিন্স- টিশার্ট পরবে, যার পছন্দ হবে বোরখা পরবে। মেয়েরা কি পরবে এই বিষয়ে আপনি পন্ডিতি করবেন না । আপনি আপনার জিপার সামলান।
মনে রাখবেন, বাংলাদেশে জিন্স টিশার্ট পরার কারণে কোনো নারীকে পথের মধ্যে কটু কথা বলা আর সিডনিতে বোরখা পরার কারনে কোনো মুসলিম নারীকে অপমান করা একই রকম অপরাধ।’
সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই: প্রীতম
সঙ্গীত শিল্পী প্রিতম আহমেদ তার ফেসবুকের কাভার ছবি চেঞ্জ করেন একটি ব্যানার দিয়ে যেখানে লিখা ছিল নষ্ট পুরুষ নিপাত যাক, নারী অধিকার মুক্তি পাক। এ ছাড়া ব্যানারের উপরেই লিখেন, ‘কিছু নোংরা মানুষের জন্য আমাদের পুরুষ সমাজ নানা ভাবেই অভিযুক্ত । এই অভিযোগটি নারীর প্রতি পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবের, অন্যায় আচরণের, অসম্মানের । এমন নয় যে কোন নারী কোন পুরুষের সঙ্গে এমন আচরন করেনি কখনো, তথাপী পুরুষ দারা নারী নির্যাতন বা নিষ্পেষণ সকল বর্বরতাকে হার মানায় । ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের একটি অংশে কিছু নষ্ট মানসিকতার পুরুষ আবারো সেই নারীদের অসম্মান করে কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে । মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি এই আচরন আসলে একটি মানসিক অসুস্থতা । শুধু মাত্র প্রশাসনিক প্রতিকার দিয়ে এই অসুস্থতা বা পশুবৃতি দমন করা সম্ভব নয় । রাস্তায় একটি মেয়েকে আকর্ষণীয় পোষাকে দেখলেই তাকে ভোগ করার জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে এই অসুস্থতার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই । যে দেশের পরিবারে মায়েরাই সব চেয়ে বেশি দায়িত্ব পূর্ণ ভুমিকা রাখেন । যে দেশের প্রধান মন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী । যে দেশের মেয়েরা হিমালয় জয় করেন সেই দেশের নারীদের প্রতি অসম্মান সহ্য করা কাপুরুষতার সামিল । আমি আশা করবো যার ঘরে একটি কন্যা সন্তানও আছেন তারা তার সন্তানের প্রতি,শ্রদ্ধাশীল হয়ে, যিনি মাকে ভালবাসেন তিনি তার মায়ের সম্মান অক্ষুন্য রাখতে এই সামাজিক সচেতনতার আন্দোলনে যোগ দেন । আমরা চাইনা কোন ধর্ষক এই সমাজের কোন বাড়িতে আশ্রয় পাক । আসুন আমরা এই স্লোগানটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করি । সবাই পশুবৃত্তির বিরুধ্যে একত্রিত হই ।
মুখ আর জিপার সামলান: প্রসূণ আজাদ
অভিনেত্রী প্রসূণ আজাদ তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘মেয়েরা কি পোশাক পরবে তা নিয়ে বিবেচনা করার দায়িত্ব আল্লাহ আপনারেও দেন না আমাকেও দেন নাই। তার গায়ে হাত দেয়ার দায়িত্ব আপনাকে আল্লাহ দেয় নাই। তার কাপড় খোলার সাহস আল্লাহ আপনাকে দেয় নাই। আপনি আপনার হাত , মুখ আর জিপার সামলান।’
এই নোংরামি বন্ধ করেতে হবে-বাঁধন
পহেলা বৈশাখে নারীর উপর যৌন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে শুরু থেকেই সরব ছিলেন অভিনেত্রী বাঁধন। তিনি রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদসহ প্রেসক্লাবের মানব বন্ধনেও অংশ নেন। এদিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যোটাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কি স্ট্যাটাস দিবো!!! আমি, শুধু বলতে চাই আমি আমার মেয়েকে নিয়ে সব জায়গায় যেতে চাই। আমার যেভাবে ইচ্ছে ঘুরতে চাই। কোনো নোংরা মানুষের জন্য আমি কোথাও যাওয়া বন্ধ করবো না। কিন্তু ওদের নোংরামি বন্ধ করবো।অনেক হয়েছে আর না।এই নোংরামি বন্ধ করেতে হবে। আমরা মেয়ে তাই সবদোষ আমাদের!
কতদিন চুপ থাকবো?: মৌসুমী হামিদ
মৌসুমী হামিদ বর্তমানে আছেন থাইল্যান্ডে। সেখান থেকেই তিনি এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘পাতায়া বসে অনেকগুলো অনলাইন নিউজব্যাপারে ঘটনাটা পড়েছি। পড়ে আমার শুধু একটা কথাই মনে হয়েছে যে আমি যদি ঢাকায় থাকতাম আমি আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে ঐ খানে ঘুরতে যেতাম, এমন ঘটনায় শিকার হতাম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। বাংলাদেশ এর প্রতিটা শিক্ষার্থী এখানে পড়ার স্বপ্ন দেখে। তারপরও তাদের এই হাল? যারা এই নোংরা কাজটা করেছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, তুই মেয়েটার জামা টেনে ছেড়ার সময় দেখলি ঐ টা তোর বোন অথবা মা অথবা বউ। ঐ মুহুর্তটা একবার চিন্তা কর অমানুষ। আমরা মিডিয়াতে যারা কাজ করি তারা কিছু বললে খুব দোষ হয় চুপ চাপ ছিলাম কিন্তু কাজী সামি হাসান ভাইয়ার একটা স্ট্যাটাস দেখে মনে হলো আমিও তো একটা মেয়ে, তো কতদিন চুপ থাকবো? এই নোংরামির বিচার চাই।