Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

বাঙালি না হলেও বাংলাদেশ দলকেই চুমু খেতাম



বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। জয়-পরাজয়ের খবরও অনেক আগেই জেনে গেছেন সবাই। কিন্তু রেশটা রয়েই গেছে। বাংলাদেশ আজ হারলেও জিতে গেছে! এটাই বলছেন সবাই। বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী কবির সুমনও বললেন বাংলাদেশের পক্ষেই। সন্ধ্যার পর নিজের ফেসবুকে একটি স্টেটাস দিয়ে তাই জানালেন তিনি। 

‘আমি প্রাণপণে চাইছিলাম বাংলাদেশ দল জিতুন, যা আমি তাঁদের কোনও আন্তর্জাতিক খেলা থাকলে সব সময়ে চাই। বাংলাদেশ দল পারলেন না। ফলে, তাঁরা জিতলে যে আনন্দটা হতো তার জায়গায় বিষাদ। কিন্তু এরই মধ্যে আমি যা বুঝেছি: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জন্ম নেয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। তার আগে সেখানে, অর্থাৎ সেকালের পূর্ব পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলার চল কতোটা ছিল, কতোটা ব্যাপক অনুশীলন হতো তা আমি ঠিক জানি না। কিন্তু ভারতে ১৯৭১ সালের ঢের আগে থেকে যে পরিমাণ ও যে মাত্রায় ক্রিকেট চর্চা ও অনুশীলন হতো সেই তুলনায় তা খুব একটা আগুয়ান ছিল বলে মনে হয় না।

আয়তনে ভারত বিরাট। তার নানান জায়গায় ক্রিকেট চর্চা হয়ে থাকে এবং সেইসব জায়গা থেকে প্রতিভাবান ও কৃতী খেলোয়াড়দের নিয়ে জাতীয় দল গঠন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সে-তুলনায় কতো ছোট। ক্রিকেটের সঙ্গে বিত্তের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। ভারতে সেই প্রিন্সদের আমল থেকে (ব্রিটিশ আমল) ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রাজা রাজড়ারা। তাঁরা খেলতেনও। যেমন মহারাজকুমার অফ বিজয়নাগরম। আর একজন ছিলেন গায়েকওয়াড়। তেমনি আরও কেউ কেউ। বাংলাদেশ কিন্তু আর্থিক দিক দিয়ে বিত্তশালী নয়। অবিভক্ত ভারতে পূর্ববঙ্গ বা পশ্চিমবঙ্গের জমিদাররা ঘটা করে ক্রিকেট খেলতেন, ক্রিকেট চর্চা করতেন, জমিদারনন্দনরা ক্রিকেট অনুশীলন করে নাম করেছিলেন বলে আমি তো জানি না। বরং অবিভক্ত ভারতে যে ক'জন বাঙ্গালি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছিলেন তাঁরা মোটের ওপর মধ্যবিত্ত শ্রেণীরই।

স্বাধীন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট চর্চা ও অনুশীলন শুরু হয়েছে বেশিদিন আগে না। আয়তনে ছোট এবং কারিগরি শিল্পে ভারতের চেয়ে কম উন্নত, কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশে অল্প সময়ের মধ্যে এই খেলাটিতে যে উন্নতি হয়েছে তা চমকপ্রদ। ক্রিকেটের বিশ্ব ইতিহাসে এর নজির খুব কমই। শ্রীলঙ্কার কথা মনে আসে। আমি অবশ্য বিশেষজ্ঞ নই, নেহাতই মামুলি খবরাখবর রাখি। এখন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যে মানের খেলা খেলছেন তাতে আশা জাগে আর কিছু বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে আরও ভালো ফল করবে।

বাঙ্গালি হওয়ার দরকার নেই। ভারতের যে-কোনও স্বাভাবিক বোধভাষ্যিসম্পন্ন মানুষ যদি আজকের দিনে একবার কল্পনা করেন যে ভারতের কোনও অঙ্গরাজ্য, যেমন পশ্চিমবঙ্গ বা ওড়িশা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাকি-ভারতের জাতীয় দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলছেন তাহলেই তাঁর বুঝতে সুবিধে হবে ব্যাপারটা। ভারতীয় দল ভালো খেলেছেন এবং জিতেছেন। সাবাশ। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের বিবর্তনের পথ ধরে আজ ভারতের খেলোয়াড় ও খেলাপ্রেমীরা কল্পনাও করতে পারেন না এমন অবস্থায় (ক্রিকেট খেলার নিরিখে) বাংলাদেশের জাতীয় দল যে খেলা দেখালেন, ভারতের তথা বিশ্বের নির্বাচিত কিছু তুখোড় খেলোয়াড়ের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে নানান চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে যেভাবে সচেষ্ট হলেন তাতে আমি বাঙ্গালি না হলেও তাঁদেরই আলিঙ্গন করতাম, গালে চুমু খেতাম - বিজয়ী ভারতীয় দলকে বারবার করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করেও।

রূপকথার আমল হলে রাজকুমারী কিন্তু আজ তাঁর হৃদয় দিতেন বাংলাদেশকে। যদি এমন হতো যে ম্যাচবিজয়ীকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বরমাল্য দিতে সেই রাজকুমারী বাধ্য তাহলে তিনি প্রথা অনুযায়ী সেটাই করতেন, কিন্তু মনে মনে অপেক্ষা করতেন - কবে 'বাংলাদেশ'-কুমার ঘোড়া ছুটিয়ে আসবেন, কবে সেই কুমার তাঁর বলিষ্ঠ হাত বাড়িয়ে রাজকুমারীকে তুলে নিয়ে পাড়ি দেবেন অজানায়।

আজকের দিনটা শেষ হয়ে এলো ব'লে। বাংলার ধূসর গোধূলি নেমে আসছে। জীবনসায়াহ্নে এই ধূসরিমা বিষন্নবিধুর। তাও আমি কল্পনা করে আনন্দ পাচ্ছি -গ্যালপ করছে ঝিকমিকে কালো তেজি ঘোড়া। লাগাম হাতে বাংলাদেশ-কুমার ঘোড়া ছোটাচ্ছেন। তাঁর কোমর জড়িয়ে ধরে তাঁর পিঠে মুখ রেখে সদ্যমুক্ত রাজকুমারী স্বপ্ন দেখছেন।’