আমেরিকায় আসার আগে আমি কখনোই কল্পনাও করিনি, এখানে এসেও কোন একদিন আমি বাগান করবো। তাও আবার নিজের হাতে বাগান করে দেশীয় সবজি আর ফল খাওয়া। প্রথম দিকে অবশ্য এতটা দেখিনি, কিন্তু এখন আমরা এশিয়ানরা এসে, একজনের দেখাদেখি আরেকজন, এক এক করে সবাই নিজের হাতেই দেশীয় সবজির বাগান করছে। আমাদের দেশীয়রা সবাই, যারা এপার্টমেন্টে বা ভাড়া বাসায় থাকেন তারাও বারান্দায় কিংবা অল্প একটু জায়গা পেলেই টবের মধ্যেই গাছ-গাছালী লাগিয়ে থাকেন। আর নিজের বাড়ি হলে তো কোনো কথাই নেই। দেশীয় লাউ, কুমড়া, সীম, ঢেঁড়স, মুলাশাক, লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, কচুশাক আর কচুর লতি, আরো কত্তকি! এই সবই যখন যা পাওয়া যায়, তাই সবাই বাগানে লাগিয়ে থাকে। বাগান করা যেন আমাদের বংশ-পরম্পরা। আমার আব্বুর চাকুরীর সুবাদে দেশের অনেক জায়গায় যেতে হয়েছিল। তখন দেখতাম আমার আব্বু, যেখানেই যেতেন অফিসে কিংবা বাসার আশেপাশে যেটুকু জায়গা পেতেন, তাতেই লোক লাগিয়ে দিতেন বাগান করতে। দেখা যেত, আমার আব্বুকে দেখে অফিসের লোকেরাও খুব উৎসাহ পেতেন বাগান করার জন্য। তখন তো শুধুই দেখতাম কিন্তু আকর্ষণটা ঠিকই রয়ে গিয়েছে।
এখানে তো শীতের সময় কিছুই করা যায় না। কিন্তু আমার বাড়ীর ব্যাক-ইয়ার্ডে প্রতিবছরই গরমের সময় কিছু সবজি, ফুল আর ফলের বাগান করে থাকি। এত বেশি সব্জি না হলেও, নিজের হাতে গাছ থেকে সবজি তুলে আনা সে এক অন্যরকম আনন্দ। সবচেয়ে বেশী আনন্দ লাগে এই ভেবে যে আমি সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে থেকেও আমার নিজের করা বাগানের গাছ থেকে কিছু দেশীয় সবজি তুলে নিতে পারছি। এই বাগান করার পর তা থেকে নিজেদের হয়ত ২/৩ বার খাওয়া হয়। আর বাকিটা অল্প করে হলেও এবং সবাইকে না পারলেও, যে কয়জনকে পারি, পরিচিত আর বন্ধুদের মাঝে বিলিয়ে দিতে চেষ্টা করি। শুধু আমিই না, এখানে আমরা সবাই এমনটি করে থাকি। তাতে মনে কিযে তৃপ্তি লাগে! সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। তখন ইচ্ছে জাগে মনে, 'ইসস! সব্বাইকে যদি বেশী বেশী করে দিতে পারতাম, তাহলে কিযে শান্তি লাগত।' কিন্তু সবাইকে তো আর দেওয়া সম্ভব নয়। যাদের দিতে পারিনা তারা হয়ত মনে মনে একটু কষ্ট পেয়েও থাকে। কিন্ত তাতে তো আমার কিছুই করার নেই। তবে আমার সাধ্যমত যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করি সবাইকে নিয়ে বা দিয়ে খেতে। বাগানে যখন সবজি গুলো হয় তখন কিযে আনন্দ লাগে। সেই আনন্দে সব্জিগুলো তুলে এনে কিছু কিছু ছবিও তুলে রাখি। আর আজ আমার সেই আনন্দটাকে প্রকাশ করার জন্যই আমার বাগানের কিছু ছবি সবার সাথে শেয়ার করছি।
সীম এবং সীম গাছ....
লাউ গাছ.....
মিষ্টিকুমড়া গাছ....
মরিচ গাছ.....
পুইশাক.....
ছবি দিতে দিতে আমি ভিশন ক্লান্ত হয়ে গেলাম। আজ এই পর্যন্তই সমাপ্ত করছি।