Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তাপস কিরণ রায়

৯ বছর আগে লিখেছেন

ভালবাসার দিনরাত্রি (ছোট গল্প)


ব্যাপারটা ভেবে দেখার মত বটে। ভালবাসা সময়ের
ডোরে বাঁধা। সময় ফুরলে সে ফুড়ুৎ--এক ঝাঁক বিরহ নিয়ে নন্দন এখন দিকহারা। এমনটাই হয়, ভালবাসা বিরহ-বাহীআজ আছে,কাল সে পরবাসী। তবে মনের মাঝে জমে থাকা ধারণাগুলি ? তা কি তবে মিথ্যা ? মনের মাঝে এর যে একটা অনন্য সাধন রূপ পরিগ্রহ করে আছে, তা কি মিথ্যা ?আসলে ভালবাসা ভালবাসার জাগায় স্থায়ী,সুন্দর,অনিন্দ্য,সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে তার স্থায়িত্বের সময়টুকু খুব বেশী নয়। যেমন নন্দনের কাছ থেকে কুসুম ছুটে গিয়ে ছিল। 

নন্দন শুনেছে ভালবাসার নন্দিত বন্দিত কথা। বয়সের একটা সময় আসে যখন,ফুলের বনে যাকে দেখি তারেই লাগে ভালো'র অবস্থা। নন্দনের ভাবনায় ছেদ পড়ে, কিন্তু ভালবাসা নাকি একজনকে দিতে হয় ! একান্তর লক্ষণটা নাকি ভালবাসার বৈলক্ষণ্য ! তার মানে এখানে এসে ভালবাসা সংসারাঙ্গনে মিশে গেছে। সংসার সমাজকে টিকিয়ে রাখতে গেলে কিন্তু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। ঘর বাঁচিয়ে রাখার জন্যে প্রেমিকা বদল করা চলে না। প্রেমিকা এখানে নিজের স্ত্রী,তাকে নিয়েই  ঘর-সংসার, সাজানো ছক,এদিক ওদিক বেশী ঝাঁকাঝাঁকি করলেই বিপত্তিঘরে ফাটল ধরা শুরু হয়

শুরুর জীবনে নন্দনও চেয়ে ছিল শুধু কুসুমই হবে তার একমাত্র ভালবাসার সঙ্গিনী। কিন্তু সময় সবকিছু দূরে ঠেলে দিয়েছিল। 

সময় মানুষকে পরিপক্ব করে তোলে। নন্দন জানে, প্রত্যেক মানুষের মাঝে মৌবনের গোপন কুঠরি রচিত হয়ভালবাসা,ভাল লাগা সেখানে গোপনে লালিত পালিত হতে থাকে। নন্দনের মনে প্রশ্ন জাগে, গড়পড়তা মানুষের বয়স ধরে সময়ের দৈর্ঘ্য পার করতে শুধু মাত্র একজন প্রেমিকা বা প্রেমিকই কি পর্যাপ্ত

নন্দন তাই দিনের আলোর কুসুমকে ভালবেসে ছিল। কুসুমের চোখ মুখ এমন কি দেহে বিচ্ছুরিত হত ভালবাসার লক্ষণগুলিআর নন্দনের মাঝেও কি ছিল না তার প্রকাশ ? প্রকাশ থাকতেই হয়,  তা না হলে একই ধারার বস্তু একান্ত হবে কি করে ? লোহার সাথে চুম্বকের ভালবাসা, কিম্বা ঘৃতের সঙ্গে অগ্নির জ্বলে যাবার ইচ্ছেতে না হলে ভালবাসা ফুটে উঠবে কি করে ?

নন্দনের কুসুম ছিল দিনের ভালবাসা।স্বতঃস্ফূর্ত সেকুসুম একদিন নন্দনকে বলেছিল,নন্দন দা,তোমার ফুল ভাল লাগে ?

--কেন লাগবে না রে ? এই যে তুই, তোকে তো আমার ভালো লাগে—মৃদু হেসে বলেছিল নন্দন। 

--ধ্যাত,আমি ফুল নাকি ? বলেছিল কুসুম। 

হ্যাঁ রে--তুই তো ফুল—তুই ত ফুলের মতই সুন্দর--

চুপ করে থেকেছে কুসুম, খানিক মাথা নিচু করে থেকে এক সময় নন্দনের মুখের দিকে তাকিয়েছে--নন্দন তখন কুসুমকেই দেখছে। সে ছিল ভালবাসার নীরবতা পালন--গভীর দর্শনে একে অন্যকে চিনে নেওয়া। যেন কোন তপ্ত দিবসের মাঝে হঠাৎ হিমেল কুয়াশার ছুঁয়ে যাওয়া। না,তখনও প্রজাপতি,মৌমাছির  ফুলের মধু শুষে খাবার সময় আসে নি। ভাল লাগার মগ্নতায় ভালবাসার জন্ম নিচ্ছিল। 

কিন্তু রাত ? রাতের ভালবাসা কি অনেকটা অন্যরকম, দিনের ভালবাসা থেকে ?পল্টু, নন্দনের এক বন্ধু বলত, আরে ধুস, আসলে মধু, বুঝেছিস ? চুমু দিয়ে শুরু...বাকীটা শরীরের সুখ ! এটাই ভালবাসার পরিণতি--বুঝেছিস ?পল্টু এক সময় ভালবাসায় বিশ্বাসী ছিল ঠিকই কিন্তু দেহ সঙ্গের অভিজ্ঞতায় তার নষ্ট চরিত্র অন্য রকম বিশ্বাস নিয়ে এসে ছিল 

নন্দনও দেখেছে,কখনও মানুষের উষ্ণতা বেড়ে যায়। দিনের ভালবাসায় রাতের ভালবাসায় ফারাক এসে যায়স্বপ্নালু চোখের ভাষা মানুষকে ভুলিয়ে দেয়। তাই তো নন্দনের রাতের ঝর্ণাকে ভালো লাগত। ঝর্ণার রূপ যতটা না তার চে প্রসাধনী চমক ছিল তার অনেক বেশী। রাত্র কী রানী যাকে বলে! খলবলে হাসি তার,তিরছি নজর তার,মোহজাল ছড়িয়ে যেত যেন।

নন্দনের মনে হত, রাতের আলো আঁধারির ভিতর মনের উতল ইচ্ছাগুলি রাতকে ভালবাসতে শেখায়মনে হত ওই ঝর্নাকেও  বুঝি নন্দন ভালবাসত !ঝর্ণা যদি মিষ্টি কথা বলত, উচ্ছলতায়যদি বলত, নন্দন, তোমায় আমি ভালোবাসি, তবে নন্দন পারত, নিশ্চয় পারতসে ভালোবাসার আগুনে ঝাঁপ মারতে। ঝর্ণাকে সে হাসতে দেখত, নিয়ন বাতির তলে, আধ-আলোক মোমের তলায় কখনও ঝর্ণা যেন অনেকের জন্যে গলে যেতে থাকত, এমন কি নন্দনের জন্যেও।   

সমাপ্ত           

Likes Comments
০ Share

Comments (6)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    অনেক মাতৃভাষার শুভেচ্ছা রইল দাদা

    - টি.আই.সরকার (তৌহিদ)

    অনেক ধন্যবাদ ! আপনাদের মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা দাদা !

    - টোকাই

    সুন্দর ভালো লাগলো । সনেট হতে হতে হয়ে উঠেনি । আরো আসুক কবি । শুভেচ্ছা রইলো অফুরান ।

    • - টি.আই.সরকার (তৌহিদ)

      ভাল লাগাটুকু আমার সৌভাগ্য । ভাল কিছু লিখতে চাই । দোয়া রাখবেন । আর সত্যি বলতে সনেট লিখার চেষ্টাই করেছিলাম, কেন হতে হতে হয়নি জানালে কৃতজ্ঞ হব । আশা করি জানাবেন ।