Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তাপস কিরণ রায়

৯ বছর আগে লিখেছেন

এইলোক অন্যলোক (ভৌতিক গল্প)


শেষ অংশ... 
আধঘণ্টা পর ওঝা একটু সুস্থ
হলেন, বললেন, বাবা সকল, একটা কথা বলিআমায় দিয়ে এ পেত্নী ছাড়ানো সম্ভব হবে নাআমায় তোমরা বিদায় দাও!

এর পর আর কথা চলে না এ ওঝাকে বিদায় দেওয়া হলওঝা আপন প্রাণ বাঁচাবার জন্যে নিজের ঘরের দিকে রওনা হলেন

পর দিন সকালে পৌঁছলেন মহারাষ্ট্রের চাঁদা জেলার ওঝাইনি বাঙালী উদ্বাস্তু, চাঁদা জিলায় সরকারী পুনর্বাসন পেয়েছেন

ওঝা তাঁর নিজের আসন পাতলেন  আবার সেই পুজা আর যজ্ঞের আয়োজন হল

অমরেশ তেমনি তর্জন গর্জন করতে থাকলেনআগের দিনের মত যজ্ঞের সামনে জোর করে তাঁকে বসানো হলতেমনি পেত্নীর গলায় ওঝাকে মেরে ফেলার হুমকি দিলেন অমরেশ এই ভাবে যজ্ঞ পূজা চলতে থাকলওঝা এক সময় অমরেশকে জিজ্ঞেস করল, তুই কে ?

ওঝার বেশ কয়েকবার প্রশ্ন করার পর, পেত্নীর মোটা গলার আওয়াজ আসল, তুই বল, তুই কে ? বারবার ওঝার প্রশ্নর পর এক সময় পেত্নীর জড়ানো ভারী গলায় জবাব এলো, আমি অনিমা !

গ্রামের লোকেরা চমকে উঠলো, এক বছর আগেই অনিমা মারা গেছেএই ক্যাম্পেই সে থাকত তার স্বামী খুব পিটাত বলে একদিন ফাঁসলটকে সে মারা যায়অনিমার বয়স চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ ছিল

গ্রামের সবাই জানতে পারল,পেত্নী অন্য কেউ নয়,এই ক্যাপের সেই অনিমা ! এদিকে ওঝার প্রশ্ন চলছে,তুই মাষ্টামশাইকে ছেড়ে দে !

বারবার পেত্নী একই জবাব দিয়ে যাচ্ছে,না,আমি যাবো না

এমনি ভাবে অনেক সময় কেটে গেলনা,কে,হ্যাঁ,কোন মতেই করানো যাচ্ছে না!

ইতিমধ্যে তৃতীয় ওঝা এসে হাজির হলেনমধ্যপ্রদেশের ছত্তিসগড়ের ওঝাভূতের মন্ত্রতন্ত্র ছাড়াও ইনি তন্ত্রমন্ত্র বিশারদ

দুই ওঝা এবার এক সাথে তাদের তন্ত্রমন্ত্র সেধে উঠলেন,অমরেশ তখন প্রাণপণে চীৎকার করছেন,না আমি যাবো না,কিছুতেই যাবো না,আমায় মাছ দে,আমায় মাংস দে, বারবার বলে যেতে লাগলেন

তুমুল মন্ত্রপাঠের ধুম উঠলো,তৃতীয় ওঝা তাদের ছত্তিসগরী ভাষায় উচ্চারণ করতে লাগলেন ভূত তাড়ানোর মন্ত্র যজ্ঞের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে লাগলএবার পেত্নীর কান্না শুরু হল,নানান সুরে সে কেঁদে চলল ! আমায় ছেড়ে দে,আমায় ছেড়ে দে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে !

দিনের শেষে সন্ধ্যে নেমে আসলদিনভরের যজ্ঞ পূজার ধুমধাম বিশাল কর্মকাণ্ড চলছে তখনও তখনও অনেক গ্রামের লোক অপেক্ষারত,  কর্মকাণ্ডের চমৎকারী পরিণাম দেখার জন্যেঅমরেশ তখন অনেক শান্ত

হঠাৎ অমরেশ চীৎকার করলেন,মেয়েলী শব্দ বের হল তার কণ্ঠ থেকে উঃ,আঃ,কাতর শব্দ বেরোতে লাগল তাঁর গলা চিরে, তোরা আমায় থাকতে দিলি না রে,ব্যাস,এটুকু কথা বলার পর অমরেশ মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন

ছাত্ররা ও সহকর্মীরা দেখলেন অমরেশ অজ্ঞান হয়ে গেছেনছত্তিস গড়ের ওঝা ইশারাতে তাঁকে বিরক্ত না করতে বললেন

পুরো একটি ঘণ্টা এমনি ভাবে কেটে গেলহঠাৎ দেখা গেল,ঘরের পাশের আম গাছ থেকে একটা কাঁচা ডাল হুড়মুড় করে ভেঙে মাটিতে এসে পড়ল !উপস্থিত লোকেরা সব কাণ্ড কারখানা দেখলদেখল,অমরেশ বাবুর শরীর থেকে ওঝারা কি ভাবে ভূত তাড়ালেন !

সঙ্গে সঙ্গে ছত্তিসঘরী ওঝা বলে উঠলেন,দেখো,দেখো,ও চলী গয়ী ! দুষ্ট আত্মা ভাগ গয়ী !

বাঙালী ওঝা বললেন,আর ভয় নেই,ওনার জ্ঞান ফিরলে আবার আগের জীবন ফিরে পাবেন

অমরেশ বাবু পূর্বের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেলেনতবে এখনো যখন সন্ধ্যে নামে,যখন আশপাশ অন্ধকারে ছেয়ে যায়,তাঁর মন উদাসীনতায় ভরে যায়তিনি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন তিনি নিজেই জানেন না যে স্বাভাবিক জীবন যাত্রার মাঝে কখন ঢুকে পড়ে পুরনো স্মৃতির ঢেউ !

সে অমরেশ বাবু এখন কলকাতা থাকেনকেন্দ্রীয় সরকারের সারপ্লাস সেলের মাধ্যমে তিনি কলকাতা দূরদর্শনের অফিসার পদে পদস্থ হনআজ ক বছর হল তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন

আমার আজও মনে পড়ে আবছা আলো অন্ধকারে কখনো উদাসী, চিন্তা খিন্ন সেই মানুষটাকেমনে হয় আজও যদি তাঁকে কোন কফি হাউজে দেখতে পাই, দেখব,তেমনি তিনি কোন চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন দেখবো,দিনের সমস্ত স্বাভাবিকতার শেষে কর্ম ক্লান্তির ভাবনা ক্লিষ্টতায় ঝুঁকে থাকা তাঁর সেই মুখ !
সমাপ্ত 

Likes Comments
০ Share