অফিস থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল সায়েম।হঠাৎই রাস্তার ওপারে দেখলো কিছু মানুষের জটলা।তাই সেদিকে এগিয়ে গেল।ভিড় ঠেলে দেখতে পেল একটি ছেলে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে।মাথা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
তাড়াতাড়ি ছেলেটির কাছে এগিয়ে গেল সায়েম।ভালই ইনজুরড হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।তাদের ঘিরে দাড়িয়ে আছে মানুষগুলো।তারা যেন বায়োস্কোপ দেখছে।তাই কিছুটা রেগেই সায়েম বললো-
‘আপনারা দাঁড়িয়ে থেকে কি তামাশা দেখছেন?একটা অ্যাম্বুলেন্স তো ডাকতে পারেন কেউ?এই যে ভাই,একটু ধরুন না।ওকে হসপিটালে নিতে হবে।’
এবার পাবলিকের একটু টনক নড়লো মনে হয়।দুতিনজন গিয়ে একটা সিএনজি যোগাড় করলো।ধরাধরি করে ছেলেটাকে সিএনজিতে উঠানো হলো।গন্তব্য হাসপাতাল।
সায়েম জড়িয়ে রেখেছে ছেলেটাকে।রক্তে ওর সাদা শার্ট রঙিন হয়ে উঠেছে।এতকিছু খেয়াল করার সময় নেই এখন।কিভাবে অ্যাকসিডেন্ট হলো,ছেলেটার আত্মপরিচয় কিছুই জানে না সায়েম।জানার প্রয়োজনও নেই এখন।একটি জীবন বলে কথা...
হাসপাতালে পৌঁছে দ্রুতই ছেলেটাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হলো।এখন ছেলেটার একটু খোঁজ দেয়া লাগে ওর পরিবারকে।না জানি ফ্যামিলি কত টেনশন করছে ছেলেটার জন্য। বেশি বয়স হবে না ওর।হয়তো ফাইভ-সিক্সে পড়বে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা যেন বেশি কিছু না হয়;ভাবতে থাকে সায়েম।
ছেলেটা স্কুল থেকে ফিরছিল।তাই সাথে স্কুলের একটা ব্যাগ আর টিফিন বক্স ছাড়া আর কিছু নেই।ব্যাগ খুঁজে একটা স্কুলের একটা ডায়েরী পেল।সেটিতেও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া গেল না।ভাল মুশকিল তো,মনে মনে ভাবলো সায়েম।
ঘড়িতে রাত তখন আটটা।আইসিইউ থেকে ডাক্তার বের হতেই সায়েম জিজ্ঞেস করলো-
‘কি অবস্থা ডাক্তার?’
‘আরজেন্ট ব্লাড লাগবে।ও পজিটিভ।’
‘আমার ও পজিটিভ,ডাক্তার।’
‘ওকে।আসুন আমার সাথে।’
সায়েম ডাক্তারের পিছন পিছন রওনা হলো।ছেলেটার ফ্যামিলিকে পরেও জানানো যাবে,আগে রক্ত দেয়াটা বেশি প্রয়োজন।তাই আর বেশি সময় নষ্ট করলো না সায়েম।
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা।ছেলেটাকে নরমাল বেডে আনা হয়েছে।কিন্ত ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।ও ঘুমাচ্ছে।সায়েমেরও বাসায় যাওয়া প্রয়োজন।প্রচুর ক্লান্ত ও এখন।ছেলেটার বাসায় জানানো গেল না।উপায় নেই।ছেলেটা একটু সুস্থ হোক তারপর ওর থেকে খবর নিয়েই না হয়...সায়েম ভাবলো।
*******
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় একটা বেজে গেছে।
দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।লাইটের সুইচটা অন করলো।সায়েম একাই থাকে বাসায়।তাই লাগামহীন জীবন-যাপন ওর।তেমন কোনো বাঁধা নেই।ড্রেস চেইঞ্জ করে নিল সায়েম।রাতের খাওয়াও হয়নি।এখন আবার রান্নাঘরে প্রবেশ করতে মন চাইছে না।তাই ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে।
আগামীকালের প্ল্যান রেডি করে ফেলে সায়েম।সকালে হাসপাতালে যেতে হবে ছেলেটাকে দেখতে।যদি ডাক্তাররা রিলিজ করে দেয় তাহলে ওর থেকে ঠিকানা নিয়ে ওকে বাসায় পৌঁছে দিতে হবে।ছেলেটার বাবা মা নিশ্চয়ই খুব অস্থির হয়ে আছে,ব্যাপারটা কত অদ্ভূত,তাই না?মনে মনে ভাবে সায়েম।আপনজনের একটু খোঁজ না পেলেই আমরা কেমন ছটফট বোধ করি।
ভাবতে ভাবতে ঘুম জড়িয়ে পড়ছিল সায়েমের চোখে।হঠাৎ চোখদুটো মেলে উঠে বিছানায় বসে।আজ কত তারিখ?মোবাইলটা টেবিল থেকে উঠিয়ে নিয়ে চোখ বুলায় সায়েম।২৪ এপ্রিল।দুদিন আগে থেকে সায়েম মনে রেখেছিল এই তারিখটার কথা।মনে রা্খার মতোই একটি দিন।
ফেসবুকে ঢুকলো সায়েম।মীরার প্রোফাইলটা দেখতে ইচ্ছা করছে।যদিও টাইমলাইনে প্রাইভেসি দেয়া।তারপরও কোনো নতুন ছবি দিল কিনা এটুকু দেখতে পারলেই হবে।
হতাশই হতে হলো সায়েমকে।প্রোফাইলটা আগের মতোই রয়েছে।সায়েম মেসেজে ঢুকে একটা মেসেজ লিখলো।সেন্ড করবে কিনা বুঝতে পারছে না।পরক্ষণেই আবার মেসেজটা কেটে দিল।থাক!!!কি দরকার ওকে আবার কষ্টে ফেলার?মীরার তো কখনোই দোষ ছিল না...
******
সায়েমের সাথে মীরার পরিচয় ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে।পরিচয় না,একেবারে সম্পর্কই বলা যায়।ভার্সিটিতে এই কাপলটাকে দেখে যে কেউ ঈর্ষা করতো।সুন্দর এবং মধুর সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় সবই ছিল ওদের রিলেশনে।দুজনই ছিল ভাল স্টুডেন্ট।আবার দুজনই প্রতিভাবান।
সায়েম ছিল বিতার্কিক এবং আবৃত্তিকার।ওদিকে মীরার কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভার্সিটির স্যার-ম্যাডামরা পর্যন্ত শুনতে চাইতো।তাই বন্ধুমহলে ওদের ভীষণ সুখ্যাতিই ছিল বটে।
অনার্সের প্রায় শেষ হতে চলেছে।দিনটা ছিল রবিবার।সকাল বেলাতেই সায়েমের কাছে মীরার ফোন-
‘আজ ভার্সিটি যাবো না।তুমি একটু জলদি আমার বাসায় চলে এসো।’
‘কেন,বলো তো?’
‘উফফ!!!এত প্রশ্ন করো কেন?আসতে বলেছি।তাই আসবে।’
‘হাহাহাহা...আচ্ছা বাবা আসতেছি।’
‘জলদি।এখন রাখি।বাই।’
‘ওকে বাই।’
উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হলো সায়েম।একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়লো রিকশায়।সায়েমের মনটা কেন যেন খুব ভাল আজ।খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে ও।মীরাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে মন চাইছে হঠাৎ করে।উম...কি দেয়া যায়?ভেবেই পায় না সায়েম।রাস্তার পাশে কিছু ফুলের দোকানের দিকে চোখ পড়লো সায়েমের।মীরার জন্য কিছু ফুল নিয়ে নেয়া যাক।এতদিনের সম্পর্কে সায়েম কখনোই মীরাকে ফুল গিফট করেনি।ফুলের গন্ধ তেমন সহ্য হয় না সায়েমের।কিন্তু আজ কেন জানি সহ্য হচ্ছে।
কলিংবেল বাজাতেই মীরা দরজা খুললো।হালকা নীল রংয়ের একটা শাড়ি পরেছে ও।কপালে নীল রংয়ের টিপ।মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো সায়েম।
‘কি ভেতরে আসবে না?নাকি বাইরেই হা করে দাঁড়িয়ে থাকবে?’-মীরা বললো।
‘ও হ্যাঁ।’-বলে ভিতরে প্রবেশ করলো সায়েম।
‘তুমি ফুল এনেছ??’-অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে মীরা।
‘হ্যাঁ,তোমার জন্য।’-হাসিমুখে বলে সায়েম।
‘আমাকে অবাক করার জন্য নিয়ে এসে এখন দেখছি তুমিই অবাক হয়ে আছ।ঘটনা কি?’-মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করে মীরা।
‘আরে নাহ,কিছু না।’-লাজুক ভাবে বলে সায়েম।
মীরার মা এর মধ্যে চা নিয়ে প্রবেশ করলেন।সায়েম উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল।হালকা কিছু আলাপ হলো।চা শেষ হতে হতেই মীরার তাড়া সায়েমকে নিয়ে বের হবে।
ওরা বের হল।রিকশায় কিছুক্ষণ ঘোরার শখ হলো মীরার।সায়েমেরও সম্মতি তাতে।বসুন্ধরার রাস্তা ধরে এগুচ্ছে রিকশা।মীরা সায়েমের হাতটা জড়িয়ে রেখেছে।
‘তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে,মীরা।’
‘এতক্ষণ পর বলার সাহস হলো?’
‘(হেসে)...তা না।’ বলে একটা ফুল মীরার খোপায় বেঁধে দিল সায়েম।
‘একটা গুড নিউজ আছে সায়েম।’
‘কি?তাড়াতাড়ি বলো।’
‘আমি মা হতে যাচ্ছি।’
কথাটা শুনে সায়েমের ভ্রূঁ কুচকে গেল। ‘কি বললে?’
‘হ্যাঁ,তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি আমি।’
‘এবোরশন করে ফেল।’-সহজ ভাবে বললো সায়েম।
‘না সায়েম,আমি তা পারবো না।’
‘কেন পারবে না?তোমার ফ্যামিলিকে কি বলবে?আমি মাস্টার্স শেষ না করে বিয়ের কথা ভাবতেই পারবো না।’
‘তুমি সময় নাও।কোন অসুবিধা হবে না।আমার ফ্যামিলিকে আমি ম্যানেজ করবো।’
‘না মীরা।এটা হয় না।তুমি কেন বুঝছো না?’
‘আমি বুঝেছি সায়েম।কিন্তু আমার সন্তানকে আমি নষ্ট করতে পারবো না।’
‘মীরা,তুমি পাগল হয়ে গিয়েছ।জাস্ট পাগল।’
‘হ্যাঁ আমি পাগল।আমি তোমার সন্তানের মা হবার জন্য পাগল।’-কাঁদতে কাঁদতে বললো মীরা।
সাযেম মীরাকে ওখানে রেখেই চলে যায়।এরপর মীরার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেনি।সম্পর্কের ইতি সেখানেই।
******
সকাল সকালই ঘুম ভাঙলো সায়েমের।হাতে মোবাইলটা ধরে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।তাই স্ক্রীণে চোখ পড়তেই মীরার ছবিটা দেখলো আর রাতের কথাগুলো মনে পড়লো।সেই সব ভেবেই ও ঘুমের জগতে চলে যায়।মনে পড়লো ছেলেটার কথা যাকে হাসপাতালে রেখে এসেছে।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখল ছেলেটা শুয়ে আছে।সায়েম ওর মাথার কাছে গিয়ে বসলো।
‘বাবা,কেমন আছো তুমি?’
‘এইতো আংকেল,ভাল্।’
‘তোমার নাম কি?’
‘আমি অর্ক।আপনি?’
‘আমি সায়েম।কাল তোমাকে আমিই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম।’
‘ও,আপনাকে ধন্যবাদ।’
‘তোমার বাসা কোথায়?তোমার স্কুলের ব্যাগ খুঁজে তেমন কিছু পেলাম না।এজন্য তোমার ফ্যামিলিকে জানাতেও পারিনি।কারো নম্বর মনে আছে তোমার?তাহলে বলো।।ফোন করে দিচ্ছি।’
‘জ্বি,মনে আছে।0192...’
সায়েম ফোন করলো।ওপাশে একজন ভদ্রমহিলা ফোন রিসিভ করলেন উদ্বেগ কন্ঠে-
‘আসসালামুআলাইকুম,এটা কি অর্কদের বাসা?’
‘জ্বি।কে বলছেন?অর্ক কোথায়?’
সায়েম সব খুলে বললো।এবং হাসপাতালের ঠিকানা দিল।সায়েমও মনে মনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো।
‘তারপর,এখন কেমন লাগছে?ব্যথা আছে শরীরে?’
‘হুম,হাঁটুতে একটু আছে।’
‘কিভাবে অ্যাকসিডেন্ট করলে?’
‘রাস্তা পার হওয়ার সময় বাস ধাক্কা দেয়।’
‘একটু দেখেশুনে পার হবে ঠিক আছে?ভাগ্য ভাল তেমন বড় রকমের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
‘আংকেল,আমি কি আজ রিলিজ পাবো?’
‘দেখি কথা বলে।তুমি খেয়েছ কিছু?’
‘জ্বি খেয়েছি।’
‘আচ্ছা,আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি।তুমি রেস্ট নাও।’
‘আচ্ছা।’
সায়েম ডাক্তারের সাথে কথা বলতে যায়।তারা আজকেই রিলিজ করে দিবে অর্ককে।কিছু ঔষধ লিখে দেয়।এগুলো কিনে বেডে ফিরে দেখে অর্কের পরিবারের লোকজন চলে এসেছে।
‘মা,আপনি?’-অবাক চোখে মীরার মাকে জিজ্ঞাসা করে সায়েম।
‘বাবা তুমি এখানে?’-চোখ মুছতে মুছতে মীরার মা জিজ্ঞেস করে।
‘আমিই আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম।’
সায়েম আর মীরার মা বেডের বাইরে গেল।
‘অর্ক তোমারই ছেলে।’
‘কি বলছেন?মীরা কোথায়?’
‘তুমি যেদিন মীরাকে ফিরিয়ে দিলে সেদিনের পর থেকে মীরা ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিল।অবশ্য আর গিয়েও লাভ হতো না।জীবনের শেষ সময়টুকু ও অর্কর জন্যই রেখেছিল।তুমি জানতে না।মীরা কখনোই তোমাকে বলতে চাইনি।কারণ,বললে তোমার কষ্টটাই বেশি হতো।মীরার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছিল।অর্কর বয়স যখন চার বছর তখন মীরা চলে যায়।তুমি হয়তো ওকে খুব খারাপ ভেবেছো।আমাদের পরিবারের ব্যাপারেও খারাপ ধারণা করেছো।কিন্তু বাবা,তুমিই বলো,কোন মা কি নিজের সন্তানের জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ না করে থাকতে পারে?আর তাইতো...’-বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন মীরার মা।
‘মীরা একটি ডায়েরী লিখে রেখে গিয়েছিল।যেটা এখন অর্কর কাছে।ও প্রতিদিন রাতে মায়ের ডায়েরী পড়ে।বাবা-মা হীন একটা বাচ্চা কিভাবে যে বড় হচ্ছে তা একমাত্র আমরা এবং আল্লাহপাক জানেন।’
সব শুনে সায়েমের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।ভাগ্যের কি পরিহাস।নিজের সন্তানকে নিজেই রক্ত দিয়ে বাঁচালো সায়েম।উপর থেকে সব দেখে নিশ্চয়ই খুশি হচ্ছে মীরা...
বেডে প্রবেশ করলো সায়েম।অর্কের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো-
‘চলো বাবা,আমরা এখন বাসায় যাব।’
‘আপনিও যাবেন আমাদের বাসায় আংকেল?’
‘আমি তোমার আংকেল না।আমি তোমার বাবা।’
গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে রইলো অর্ক। ‘সত্যি বলছেন?’
‘হ্যাঁ সত্যি।’
‘তুমি এতদিন কেন রাগ করেছিলে বাবা?আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছিল।ডায়েরীতে লিখে গিয়েছে তোমার উপর অভিমান করে।’
কিছু বলার ভাষা পেল না সায়েম।অর্ককে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
******
ডায়রির পাতা গুলো উলটিয়ে পড়তে থাকলো সায়েম।মাঝে দুটো পাতায় গোলাপের পাপড়ি মোড়ানো।
সায়েম,কবে তুমি এ পাতাগুলো পড়বে জানি না।আদৌও কোনোদিন পড়বে কিনা তাও জানি না।তোমার দেয়া গোলাপের পাপড়ি রেখে গেলাম পাতাগুলোতে।সাথে আমার মনের কথাগুলো লিখে যাচ্ছি।আমাকে ভুল বুঝো না তুমি।আমি খারাপ মেয়ে নই।আমি তোমাকে খুব ভালবেসেছি এটাই আমার অপরাধ ছিল।কারণ,আমি তোমাকে সুখ দিতে পারতাম না।তোমার জীবনে জড়িয়ে থাকতে পারতাম না নিজের মতোন করে।তবুও কেন তোমাকে ভালবেসেছি,এটাই ছিল আমার অপরাধ।তুমি কিভাবে থাকবে আমাকে ছাড়া তা কখনোই কল্পনা করতে পারতাম না।আমি যেদিন জেনেছি আমি বেশিদিন বাঁচবো না সেদিন সবথেকে বেশি কেঁদেছি তোমার জন্য।আর তারপর রবিবারই তোমাকে বলেছিলাম তোমার সন্তানের মা হতে চলেছি।
তোমার মনে আছে আমাদের যেদিন সম্পর্কের শুরু সেদিনও ছিল রবিবার?আমি তোমাকে তেমন জোর করিনি,তোমাকে আটকাইনি।হয়তো তুমি এজন্য আরো বেশি কষ্ট পেতে পারো কিন্তু বিশ্বাস করো সায়েম তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি আমি।কি করতে পারতাম আমি বলো?আমি হারিয়ে গেলে তুমি হয়তো বেশি কষ্ট পেতে এজন্যই অর্ককে পৃথিবীর বুকে আনা।যাতে কোনেদিন তুমি সত্যিটা জানতে পেরে আমাকে মাফ করতো পারো।অর্ককে সব জানিয়ে গেলাম।যাতে ও কোনোদিন তোমাকে ভূল না বুঝে।ডায়েরীর এ দুটো পাতা তোমার জন্য।বাকী সবই অর্কের জন্য।ওকে খুব ভালবেসো।আমার জন্য হলেও..প্লিজ।
আমাকে ক্ষমা করে দিও সায়েম।ভাল থেকো...
মীরা।
‘মীরার ফেসবুক আইড কি তাহলে তুমি চালাও?’-অর্ককে জিজ্ঞাসা করে সায়েম।
‘হ্যাঁ বাবা।মা লিখে গিয়েছে তুমি চুপি চুপি তার ছবিগুলো দেখতে ফেসবুকে ঢুকবে।আর যদি কোনোদিন অভিমান ভূলে মেসেজ দাও তাহলে আমি যেন তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি।আজতো আম্মুর জন্মদিন।আজ তার ছবি পরিবর্তন করার কথা আমার।প্রতিবারই তো করি।কিন্তু এবার তো...’
হুম মীরার আজ জন্মদিন।যে মীরাকে সায়েম নিজের থেকেও বেশি ভালবাসতো।আবার যে মীরাকেই সবথেকে বেশি কষ্ট দিয়েছে সায়েম।সায়েমের অভিমান না হয় ভাংলো।ফিরেও এলো।কিন্তু মীরা?অভিমানগুলো জমিয়ে রেখে সব হিসেব-নিকেশের উর্ধ্বে,সব বন্ধন ছেড়ে চলে গেল অনন্তর পথে।
বুকের মাঝে তী্ব্র এক শূন্যতা অনুভব করলো সায়েম।