Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

এবং হিমু

১০ বছর আগে লিখেছেন

অত:পর প্রেম...

‘কিরে! কি অবস্থা?’-অনলাইনে তৃষাকে পেয়েই নক করলো ধুসর।

‘খুব ভাল অবস্থা দোস্ত তোর কি খবর?’-তৃষার পাল্টা জবাব

‘খুব ভাল অবস্থা???বাব্বাহ!!! আমার আর কি?এইতো চলছে।’-ধুসর উত্তর দেয়।

‘হুম দোস্ত,মন ভাল হওয়ার মতো একটা সুখবর আছে।’-তৃষা বলে।

‘তাই নাকি?তাড়াতাড়ি বলে ফেল।’-আগ্রহের সাথে জানতে চায় ধূসর।

‘নিয়াজের সাথে আমার এংগেজমেন্ট আগামী সপ্তাহে’-থুশিমনে বলে তৃষা।

‘ওয়াও!!!হোয়াট এ গ্রেট নিউ্জ।কত্তদিন পর বিয়ে খেতে পারবো।যদি তুই দাওয়াত দিস’-হাসতে হাসতে বলে ধূসর।

‘মজা নিচ্ছিস?মাইর খাবি।তোর এবার একটা স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে দোস্ত’-হাসতে হাসতে বলে তৃষা।

‘ই্য়াপ!!!এইবার অবশেষে আপনার সাথে আমার দেখা হবে’-বলে ধূসর

‘হিহিহিহি....দোস্ত এখন যাই।নিয়াজ ফোন দিয়েছে।পরে কথা হবে।’-বলেই অফলাইনে চলে যায় তৃষা।ধুসর থেকে প্রত্যুত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না।

ল্যাপটপের স্ক্রীণে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ধূসর।

*****

ধূসর-তৃষার পরিচয়টা ফেসবুকেই।সেই ২০০৭ থেকে ওদের বন্ধূত্ব শুরু।এরপর পার হয়েছে কত মাস,বছর...ওদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটি আরো গাঢ় হয়েছে এর মধ্যে।কিন্তু আক্ষেপ একটিই,ওদের কখনো দেখা হয়নি।ধূসর থাকে ঢাকায় আর তৃষা খুলনাতে।এদিক থেকে আক্ষেপটা ধূসরের একটু বেশিই।কারণ অনেকবার দেখা করার অ্যাটেম্পট নিতে চাইলেও তৃষার বাঁধার মুখে পড়ে দেখা আর হয়নি।তৃষার এক কথা-‘সময় হবে দেখা করার।’ সেই সময় যে অবশেষে আসছে ভেবে কিছুটা খুশি ধূসর।

বন্ধুত্বে শেয়ারিং-কেয়ারিং বলতে যা বোঝায় সবই ছিল ওদের সম্পর্কে।সেদিক থেকে ধূসরই একটু এগিয়ে।সময়মতো সব কিছুর খোঁজ ধূসরই আগে নিত।আসলে তৃষার জন্য ধূসরের মনে একটা ভাললাগা কাজ করতো যেটি কখনোই ও প্রকাশ করার সাহস পায় নি।কারণ,যখন থেকে ধূসর বুঝতে পারে ও তৃষাকে পছন্দ করা শুরু করেছে তখন থেকেই নিয়াজের সাথে তৃষার সম্পর্ক।তাই নিজের ভাললাগাকে গোপন করে রাখাটাই ওর কাছে শ্রেয় মনে হল,কারণ সব কিছুর পরেও বন্ধূত্বের মর্যাদাটুকু যে রাখতে হবে।সেই মর্যাদা
রাখার তাগিদে এখনো তৃষার কাছে ওর ফোন নম্বরটি চাওয়ারও সাহস করেনি ধূসর।কারণ যা কিছুই হোক না কেন তৃষাকে তো আর ধূসর ওর মতোন করে পাবে না।ওরও তো একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে।সে জীবনে যে ধূসর কখনোই প্রবেশ করতে পারবে না।

(দু-তিন দিন পর ধূসর-তৃষার চ্যাটিং)

-‘তারপর বউ ম্যাডাম,খবর কি?’

-‘মানে কি?এখনও তো এংগেজমেন্টই হলো না।তার আগেই বউ বানিয়ে ফেলছিস?’

-‘আরে ঐতো একি।আজ হোক,কাল হোক।আয়োজন তো শুরু হয়ে গিয়েছে।এখন তো হবু বউ।’

-‘হুহ!!!বলছে তোকে।এতকিছু জানিস কেমনে?’

-‘আরে বলবেই তো।চার-পাঁচটা বিয়ে করে ফেলছি আর আমি জানবো না?আচ্ছা,তৃষা তোর কাছে এখনকার দিনগুলো কেমন লাগছে?’

-‘কেন বলতো?’

-‘না,এমনি,জানতে ইচ্ছে হলো।বল না।’

-‘খুব ভাল লাগছে।সত্যি কথা বলতে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি,ভেবেই কেমন যেন লাগছে।আমার স্বপ্ন
গুলো পুরণ হওয়ার পথে।’

-‘হুম...নিয়াজ ভাইয়ের খবর কি?উনিও কি স্বপ্নে বিভোর?’

-‘মজা নিচ্ছিস আবার?নিয়াজ একটু ব্যস্ত।সবকিছু গোছানো নিয়ে।আচ্ছা শোন,এ কয়দিন আমি অনলাইনে তেমন আসতে পারবো না।তোর সাথে ফোনে যোগাযোগ হবে।0168....... আমার নম্বর।’

-‘এখন তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।নম্বর দিয়ে আর কি করবো?’

-‘মানে?আগে পেলে কি হতো?’

-‘তা,জানি না।তবে হতো কিছু একটা।’

-‘তুই কোনদিন নম্বর চেয়েছিস?’

-‘চাইলে দিতি?’

-‘আরে দিব না কেন গাধা?তুই আমার সেই কবেকার ফ্রেন্ড।’

-‘ইশশ...চান্সটা মিস।’

-‘হইছে বাবা থামো।বান্ধবীর বিয়ে তো খাচ্ছো।এবার তোরটা খাওয়ানোর প্রস্তুতি নে।’

-‘আমার?উম...হবে।দেখা যাক।’

-‘দেখা যাক কি?খেয়ার বাসায় প্রস্তাব পাঠা শীঘ্রই।নইলে কিন্তু ভাগবে।’

-‘অলরেডি ভাগার পথে।’

-‘মানে কি?’

-‘আরে কিছু না।এমনি।’

-‘তুই বুঝছিস...’

-‘হুম..আমি ধূসর।’

-‘আসলেই ধূসর তুই।বোঝা যায় না।বাই দ্য ওয়ে,যাই দোস্ত।মা ডাকছে।’

-‘ওকে।টাটা বউ ম্যাডাম।’

-‘ফাজিল।বাই।’

এটিই ছিল ধূসর আর তৃষার শেষ চ্যাটিং।এংগেজমেন্টের আগ পর্যন্ত তৃষার সাথে ফোনেই যোগাযোগ হতো ধূসরের।শেষ কথা হয় এংগেজমেন্টের দিন।এরপরও বেশ কয়েকদিন ওদের যোগাযোগ হয়।তৃষার বিয়ের সময় খুব ঘনিয়ে আসছে।ধূসরও খুলনা যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।বিয়ের ঠিক তিন দিন আগে থেকে তৃষার সাথে ধূসরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় হঠাৎ করে।অনলাইনে তো পাওয়াই যাচ্ছে না।ওদিকে ফোনও ধরছে না।তৃষার বাসার ঠিকানা নেয়ার কথা ধূসরের।সেটাও নেয়া হলো না।ধুসর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।তৃষার কিছু হলো কিনা এসব ভেবেই ও দিশেহারা।

প্রায় এক মাস পর তৃষাকে পাওয়া যায় অনলাইনে-

-‘এতদিন পর?কই ছিলি?জানিস তোকে কত খুঁজেছি?কেমন আছিস?’

-‘এইতো...’

-‘মাঝে কই ডুব দিয়েছিলি?ফোনে,অনলাইনে কোথাও পেলাম না যে?’

-‘একটু ব্যস্ত ছিলাম।’

-‘তৃষা,আর ইউ ওকে?’

-‘হুম।’-বলেই অফলাইনে চলে গেল তৃষা।

এই তৃষাকে ধুসরের অপরিচিত মনে হচ্ছে।কিছুদিন আগের তৃষা আর এখনকার তৃষার মাঝে বিস্তর ব্যবধান।হঠাৎ করে কিইবা হলো ভেবে পাচ্ছে না ধূসর।

অনেক হয়েছে।এভাবে আর না।একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে,ভাবে ধূসর।

*****

কলিংবেল বেজে উঠলো।দরজা খুললো তৃষার মা।

-‘আসসলামু আলাইকুম।এটা কি তৃষাদের বাসা?’

-‘ওয়ালাইকুম সালাম।হ্যাঁ,তুমি কে?’

-‘আমি ধূসর।তৃষার ফ্রেন্ড।’

-‘ও আচ্ছা।এসো বাবা,ভেতরে এসে বসো।’

ধূসর ভেতরে প্রবেশ করলো।ঘামে ভেজা ওর পুরো শরীর।ধূসরের মা এক গ্লাস শরবত নিয়ে এল।এক চুমুকে পুরোটা শেষ করলো ধূসর।

-‘আন্টি,তৃষা কই?’

-‘ও ছাদে।’

-‘আন্টি ওর কি হয়েছে?ফোন দিলে ফোন ধরছে না।শেষ কথা হয়েছিল ওর বিয়ের কিছুদিন আগে...’

-‘হুম..(দীর্ঘশ্বাস নিয়ে) ওর বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।’

-‘কি বলছেন?কেন?’

‘মেয়েটা কত হাসিখুশি ছিল।এতটা খুশি ওকে কখনোই দেখিনি আমি।ওর জীবনে যে ধাক্কাটা পেয়েছিল সেটি ও প্রায় ভূলতে বসেছিল।কিন্তু,কিছুই হলো না।আবার সেই পুরনো কষ্টে মেয়েটা ধুঁকছে।’-বলতে বলতে ওনার চোখে পানি চলে এল।

‘প্লিজ আন্টি,সব খুলে বলুন।’-ধূসর আগ্রহের সাথে জানতে চাইলো।

‘তৃষা খুব ভাল নাচতে পারতো।ওর খুব শখ ছিল নাচার।ক্লাস ফাইভে ওর স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে নাচতে তৃষা যাচ্ছিলো ওর বাবার সাথে।তৃষা ওর বাবার মোটর সাইকেলে করেই চলা ফেরা করতো।সেদিন যাওয়ার পথে অ্যাকসিডেন্ট হয়।তৃষার বাবা সেখানেই মারা যান।আর তৃষাকে মুমূর্ষ অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।ও বাম পায়ে প্রচুর আঘাত পায়।যার ফলে সেই পা টি কেটে ফেলতে হয়।’-বলতে বলতে ফুপিয়ে কাঁদা শুরু করেন তৃষার মা।

ঘটনা শুনে ধূসর পুরোপুরি হতবাক।আর ওর কাছে এখন পরিস্কার হয় কেন তৃষা ওর সাথে দেখা করতে চাইতো না।

‘মেয়েটার সেই থেকে সব হাসি নিভে গেল।কোথাও যেত না,কারো সাথে দেখা করতো না।ভার্সিটিতে উঠে নিয়াজের সাথে পরিচয়।খুব ভাল চলছিল ওদের সম্পর্ক।।নিয়াজকে পেয়ে আমার তৃষা আগের হাসিমুখ কিছুটা মনে হয় ফিরে পেল।নিয়াজের পরিবার ওদের সম্পর্কটা তেমন সায় দিচ্ছিল না প্রথম থেকেই।তারপরেও কোনোমতে সব কিছু ঠিক করে ওদের এংগেজমেন্টও হয়ে যায়।কিন্তু বিয়ের তিন দিন আগে নিয়াজের পরিবার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।পঙ্গু মেয়েকে তারা বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।আমার মেয়েটার সব স্বপ্নগুলো সেদিনই শেষ হয়ে যায় বাবা।মা হয়ে ওর জন্য,ওর হাসির জন্য কিছুই করতে পারলাম না।’-কাঁদতে কাঁদতে বললো তৃষার মা।

ধূসর সব শুনে সোজা উঠে ছাদে চলে গেল।দরজা ভিড়ে প্রবেশ করতেই দেখল রেলিং বরাবর ক্র্যাচে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে তৃষা।

পেছন থেকে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো ধূসর।
পেছন ফিরে ধূসরকে দেখে কোনোমতে চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিল তৃষা।

‘কেমন আছিস?’-জিজ্ঞেস করলো ধূসর।

‘এইতো ভাল।তুই কখন এলি?’-তৃষা জিজ্ঞাসা করে।

‘কিছুক্ষণ।আমাকে দেখে অবাক হলি না?’-পাল্টা প্রশ্ন ধূসরের।

আবার রেলিং ধরে ওপাশ ফিরে দাঁড়ায় তৃষা,

‘আমার সব অনুভূতি মরে গেছে রে।’

তৃষার পাশে এসে দাঁড়ায় ধূসর,

‘অনুভূতি কখনো মরে যায় না।মরচে পড়ে যায়।সময়মতো সেই অনুভূতি আবার ঠিকই জেগে উঠে।’

‘কষ্টের শেষ ধাপে যখন চলে আসে কোনো মানুষ তখন তার আর অনুভূতি কাজ করে না।’-তৃষা বলে।

‘আনন্দ-কষ্টের শেষ বলে কিছু নেই।জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এগুলো পর্যায়ক্রমে আসে।’-ধূসরের পাল্টা জবাব।

‘আমার মৃত্যু তাহলে ঘনিয়েই আসছে।’-স্বাভাবিকগলায় বলে তৃষা।

তৃষাকে দুহাত দিয়ে ধরে ধূসর-

‘কখ্খনো না।আমি তোকে কখনো মরতে দিব না।আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ তৃষা।’

হাসি দিয়ে কথাগুলো উড়িয়ে দেয তৃষা।হাত ছাড়িয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাটতে হাটতে-

‘করুণা করছিস?একটা পঙ্গু মেয়েকে করুণা দেখাতে এসেছিস নিয়াজের মতো?ওরকম সবাই দেখায় রে।আর তুই একসাথে কতজনকে ভালবাসবি?খেয়াকে নিয়ে ভাল থাক।আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।চলে যা।’

ধূসর দৌড়ে আসে তৃষার সামনে।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-

‘খেয়া নামের কেউ নেই আমার জীবনে।ওটা পুরোটাই বানানো।তোর সাথে পরিচয়ের কিছুদিন পরেই আমি বুঝতে পারি আমি তোকে শুধূ বন্ধূর চোখে দেখছি না।কিন্তু বলার আগেই জানলাম তোর আর নিয়াজের সম্পর্কের কথা।তাই সেদিন থেকেই খেয়া নামের কোন এক কাল্পনিক চরিত্র বানিয়ে তোর সামনে হাজির করি।তোকে দেখার জন্য সোজা এখানে চলে এসেছি।তোদের বাসার ঠিকানা পর্যন্ত তুই আমাকে দিসনি।হন্নে হয়ে খুঁজেছি এই দুদিন।

আর করুণার কথা বললি?ভালবাসার মানুষের সাথে কেউ করুণা দেখাতে পারে না কখনো।যদি করুণাই দেখাতাম তাহলে আন্টির কাছে সব শুনে তোকে কিছুক্ষণ সিমপ্যাথি দেখিয়ে চলে যেতে পারতাম।তোকে আমি কখনো হতাশাগ্রস্ত দেখতে চাইনি।সবকিছুর আগে আমি চেয়েছি তোর ভাল থাকার কথা চিন্তা করা।নিয়াজকে নিয়ে তুই ভাল ছিল্তিখন পারতাম না তোকে বলতে আমার কথাগুলো?কিন্তু না।বলিনি।কারণ,আমি চাইনি তোর আমার সম্পর্ক কখনো শেষ হোক।আমি তা পারবো না।কারণ,তোকে আমি ভালবাসি।’

ধূসরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো তৃষা।ওর কথাগুলো সত্যি।নয়তো ওর চোখের দিকে তাকিয়ে তৃষার ভেতরের অনুভূতিগুলো কেন জেগে উঠবে?

ধূসরকে জড়িয়ে ধরলো তৃষা দুহাত দিয়ে।চোখ দিয়ে আনন্দের কান্না বেয়ে পড়ছে।

হাত থেকে ক্র্যাচ দুটো পড়ে গেল।এখন তৃষা ক্র্যাচ ছাড়াই চলতে পারবে।কারণ,ওর সাথে যে ওর অবলম্বন আছে...

Likes Comments
০ Share

Comments (3)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    • - চারু মান্নান

      thanks kobi,,,,,,,,,