মুন্নুজানের বহুবছর আগের এক দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়ে। সিফাত আব্বা তখন ক্লাস টেনে পড়ে। স্কুল থেকে ফেরার পথে বন্ধুদের সাথে ভেলপুরি খেয়ে ছেলের পেট খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বরাবর সিফাত আব্বার স্বাস্থ্যটা তার চোখে না ধরলেও অন্যদের চোখে ধরত। একবেলার মধ্যে সেই ছেলের শরীর পাখির মত হালকা হয়ে গেল। শেষটায় ঢাকা নিয়ে রক্ষা। এক চামচ স্যালাইনও ছেলেটাকে কখনো খাওয়াতে পারেননি তিনি। দিলেই বলবে, তিতা লাগে মা। কী অবস্থা ছেলেটার! আহা বৌমা একা কি সামলাতে পারবে? মুন্নুজানের ছটফটানি দেখে নাজিমুদ্দিন একটা আপাত কার্যকরী সমাধান দেন।
-তুমি বৌমাকে ফোন দিচ্ছো না কেনো?
মুন্নুজান এনবার এক চেষ্টাতেই ফোনে মিতুকে পেয়ে যান। গলা নিঙড়ানো মমতায় প্রশ্ন করেন,
-বৌমা...আমার আব্বা এখন কেমন আছে?
-ভাল আছে মা... টেনশন করবেন না।
- টেনশন তো করবই মা। রাতে কিছু খাইতে দিছিলা? একটু জাউ আর কাঁচকলা ভর্তা কইরা দিও ছেলেটাকে।
-মা ভাববেন না। হালকা খাবারই দিব। আর স্যালাইনতো খাওয়ালাম একটা।
মুন্নুজান মিতুর কথা ঠিক বুঝতে পারেন না। আবার প্রশ্ন করেন,
-স্যালাইন? আমার আব্বাতো স্যালাইন খাইতে পারে না! স্যালাইন খাইয়া আবার বমি হয় নাই তো মা?
-কী যে বলেন না মা...স্যালাইন খেয়ে বমি হবে কেন? ও তো স্যালাইন খায়। আরেকটা বানিয়ে রেখেছি। রাতে দিব।
মুন্নুজান মোবাইলটা স্বামীর হাতে দিয়ে খাটের এক কোণে বসে পড়েন। পরম করুণাময়ের কাছে দুই হাত তুলে ছেলের জন্য প্রার্থণা সেরে উপরে তাকান। তার ঝাপসা চোখ পরিচ্ছন্ন সিলিঙের পশ্চিম কোণে আটকে যায়। মুন্নুজান কাতর হয়ে দেখেন সেখানে দুটো মাকড়শা নতুন জাল বুনছে।
(সময়কাল: ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩ খ্রিঃ-১ জানুয়ারি, ২০১৪ খ্রিঃ)
(আগে প্রকাশিত)