Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আসাদুস জামান বাবু

১০ বছর আগে লিখেছেন

মুক্তিযুদ্ধে সবহারা এক রশিদের গল্প ‌‌‌(প্রতিযোগিতার জন্য)


ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, অর্জন করেছি রক্তে মাখা লাল সবুজের পতাকা, স্বাধীন সমৃদ্ধ বাংলার মানচিত্র।
প্রতি বছরেই স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে শহীদদেরকে আমরা প্রাণভরে স্মরণ করি, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
যুদ্ধ আমি দেখিনি, যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করিনি বটে কিন্তু আমি বুক ফুলে গর্ব করে বলতে পারি আমার বাংলাদেশ। ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে পেয়েছি এই বাংলাদেশ। কত ভাই রক্ত দিয়েছে, কত মা-বোন তাঁর সম্ভ্রম হারিয়েছে, কত মায়ের বুক খালি হয়েছে তা আমার চোখে দেখা না হলেও সে দিনের সেই ভয়াল কথা গুলো শুনলে শরীর আমার শিউরে উঠে।
আমার সহকর্মী আব্দুর রশিদ ভাই। তার বেশ নামডাক রয়েছে বাবুর্চি হিসেবে। সে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের শস্য গুদাম ঋণ কর্মসূচীতে কুক কাম-কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত। খুব ভালো রান্না করে সে, কারো বিয়ে বাড়ী বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার জন্য তাকে বাবুর্চি হিসেবে নিয়ে যায়। তাঁর রান্না ও ভালো ব্যবহারে বেশ সুনাম রয়েছে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করায় তাঁর সাথে আমার পরিচয়।
তাঁকে দেখে বোঝাই যায় না যে, এই লোকটির চোখের সামনে মা-বাবা-ভাই-বোনসহ পরিবারের দশ জনকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।
রশিদ ভাই’র বাড়ী নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বাঁশবাড়ীতে। ৭১’র মুক্তি যুদ্ধকালে খুবই ছোট ছিল সে। সে সময়ে সৈয়দপুরে বেশি ভাগই অবাঙ্গালীরা বসবাস করতো। তৎকালীন তাদের ভীষণ দাপট ছিল। এখানকার বহু অবাঙ্গালী মনে করতো তারাই প্রকৃত পাকিস্তানী। ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামে আন্দোলনরত বাঙ্গালী জাতি পরিণত হয় তাদের দুশমন।
৭১’র যুদ্ধের সময় তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনীরা বাঙ্গালীদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সে সময় যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে সৈয়দপুর বিমান বন্দর নির্মাণের কাজ চলছিল। পাকিস্তানী ও তাদের দোসররা গ্রামে গ্রামে পুরুষদের ধরে নিয়ে এসে কাজ করাতো। আর তাদের উপর অমানসিক নির্যাতন চালাতো।
ঠিক সেই সময়ে ১৯৭১’র সালে ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) এক উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিতনেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণার পর সারা দেশের ন্যায় সৈয়দপুর অশান্ত হয়ে ওঠে। পাড়ায় পাড়ায় পাকিস্তানী দোসররা নিরহ বাঙ্গালীদের মেরে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠে। যারাই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতো তাদেরকে মেরে ফেলতো।
সে সময়ে রশিদ ভাই’র পরিবার ছিল পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিশেষ নজরদারীতে। তাঁর দাদা, বাবা আর বড় ভাইসহ এলাকার পুরুষদের বিমান বন্দর নির্মাণের কাজে প্রতিদন সকালে ধরে নিয়ে যেত আর রাতে বাড়ীতে রেখে যেত।
১৯৭১ সালের একদিন, চৈত্রের বিকেলে হঠাৎ পাড়ার কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করছিল আর তখনেই শুরু হয় বাঙ্গালীদের উপর পৈশাচিক নির্যাতন। ওই দিন রশিদ ভাই ও তার ছোট ভাই বোন বাহিরে খেলা করছিলো। সেদিন বিমান বন্দর নির্মাণের কাজে তাঁর বাবা ও বড় ভাই কাজে গেলেও দাদা অসুস্থতার কারণে কাজে যেতে পারেনি। তাঁর দাদা বারান্দার চেয়ারে বসে পান চিবুচ্ছিল। ঠিক সে সময় পাকিস্তানী ও তাঁর দোসররা বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। আর সে সময়ে তারা রশিদ ভাইয়ের দাদাকে চেয়ারে বসতে দেখে প্তি হয়ে ওঠে। তাদেরকে দেখে দাদা চেয়ার থেকে দাড়িয়ে উঠে, তিনি কিছু বলার আগেই তারা ছুরি চালিয়ে দেয় তাঁর পেটে, গড়িয়ে পড়ে মাটিতে, রক্তে লাল হয়ে যায় বারান্দা। রশিদ ভাইয়ের দাদী চিৎকার করে আহাজারী করলে রশীদ ভাই ও তার ছোট ভাই বোন ছুটে আসে বাড়িতে।   এসে দেখে তাঁর দাদার নিথর দেহ বারান্দার পড়ে আছে। তাদের সামনে দাদার লাশ বারান্দা থেকে নামিয়ে পাশে তাদের চোখের সামনে তাঁর দাদাকে মাটি চাপা দিয়ে চলে যায়।
রশিদ ভাই’র বাবা ও বড় ভাই সাকের সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাড়ী ফিরলে কান্নার রোল পড়ে যায় বাড়ীতে। পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের মাতম। এ সময় এক অবাঙ্গালী তাদেরকে পরামর্শ দেয় পালিয়ে যেতে বা আত্মগোপনে থাকতে। তার কথায় বাবা ও বড় সাকের পালিয়ে যায় পাশের বাড়ীতে।
সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়। পাড়ার লোকেরা তখন ঘুমে আচ্ছন্ন, রশিদ ভাই’র ছোট ভাই রাশেদ ও ছোট বোন হাসিনা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু রশিদ ভাই ভয়ে আর ঘুমাতে পারেনি।  কিভাবে ঘুমাবে সে চোখের সামনে দাদাকে খুন হতে দেখেছে।
গভীর রাতে হঠাৎ পাশের ঘর থেকে আত্ম চিৎকার শুনতে পায় সে। বিছানা থেকে উঠে চুপি সারে পাশে ঘরে উকি মেরে দেখে রাশেদ ও হাসিনার রক্তাক্ত দেহ বিছানায় পড়ে আছে। তাঁর মা ও দাদীকেও একের উপর এক ছুরিকাঘাত করছে আর বলছে তোমার স্বামী ও ছেলে কোথায়? মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পাশের বাড়ীতে দেখিয়ে দেয়।
নরপশুরা সদ্য বিবাহিত বড় বোন নূর জাহানের উপর পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করে রশিদ ভাইয়ের সামনে। লুকিয়ে থাকা রশিদের বড় ভাই ও বাবাকে ঐ বাড়ী থেকে ফসলের ক্ষেতের দিকে ধরে নিয়ে আসে। বড় ভাইকে মারতে মারতে সেপ্টি টেংকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে আর বাবাকে চিৎ করে শুয়ে নির্মমভাবে জবাই করে পাকিস্তানী ও তাঁর দোসররা। এভাবেই তাঁর পরিবার ও আরো দুই জন আত্বীয়কে হত্যা করে। এ সময় রশিদ ভাই লুকিয়ে থাকলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। পরদিন সকালে পাকিস্তানী দোসরদের হাতে ধরা পড়ে সে, পরে নিঃসন্তান এক অবাঙ্গালী পরিবার তাঁকে উদ্ধার করে। সেখানেই রশিদ ভাই পেল স্নেহ ভালোবাসার এক মা, তবে অবাঙ্গালী মা।
 

Likes ১৫ Comments
০ Share

Comments (15)

  • - মোকসেদুল ইসলাম

    বাহ্ চমৎকার। ভাল লাগল

    • - মাসুম বাদল

      অশেষ ধন্যবাদ ও শুভকামনা ...

    - আলমগীর সরকার লিটন

    হু বাদল দা

    অসাধারণ বোধময় কবিতা

    শুভ কামনা---------

    • - মাসুম বাদল

      অনেক অনেক শুভকামনা, লিটন ভাই...

    - ওয়াহিদ মামুন

    ভালোবাসা নিতে হলে তো ভালোবাসা দিতেও হয়।

    ভালোবাসা দিলেই বোঝা যায় অপরের ভালোবাসা ফুরিয়ে যায় নি, মৃয়মান অগ্নিতে ঘি ঢালার মতই তা হয়ে ওঠে বেগবান।

    চমৎকার তাৎপর্যপূর্ণ কবিতা।

     

    • - মাসুম বাদল

      সালাম ও শুভকামনা।

      চমৎকার মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ...

    Load more comments...