Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

১০ বছর আগে লিখেছেন

একটি লোকাল বাসের ভিতরের দৈনন্দিন গল্প।

স্থান - ফার্মগেট

কন্ডাক্টার - ঐ যাইবো যাইবো, মহাখালী, বনানী, কাকলী, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, টঙ্গী। ঐ ভাই কই যাইবেন।
- উত্তরা যামু। সিট আছে
কন্ডাক্টার - উঠেন উঠেন আছে মানে। চিটিং সার্ভিস বাস।
- কি ভাই সিট কই? তুমি না কইলা সিট আছে।
কন্ডাক্টার - ভাই চিন্তা কইরেন না কাকলী গেলে বাস খালি হইয়া যাইবো।
প্রথম যাত্রী - ঐ তুই আমাগো সিটিং সার্ভিসের কথা বইলা বাসে তুললি। এখন আবার লোক উঠাস কেন।
কন্ডাক্টার - ভাই আমি কই উঠাইলাম, হে জোড় কইরা উঠলে আমি কি করুম।
দ্বিতীয় যাত্রী - সবাইরে শুনাইয়া, ভাই কতবড় মিথ্যুক দেখলেন। নিজে জোড় কইরা উঠাইলো এখন আবার মিথ্যা কথা বলে।
ড্রাইভার - আরে ভাই দুই একজন উঠলে দোষ কি? ডেইলি ৫০০০ টাকা মালিকরে জমা দেওয়া লাগে। দুই একজন বেশী না নিলে চলবো কেমনে? ৫০০০ টাকা উঠাইতে হইবো লগে আবার গ্যাসের টাকা তারপর না আমাগো পকেটে কিছু থাকবো।
বৃদ্ধ যাত্রী - তোদের কথার ঠিক আছে তোরা তো পারলে কোলের উপর লোক নিয়া যাস।
কন্ডাক্টার - ঐ যাইবো যাইবো, মহাখালী, বনানী, কাকলী, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, টঙ্গী।
তৃতীয় যাত্রী - কিরে তুই কি আজকে এইখানে দিন পার করবি নাকি। দশ মিনিটের উপর দাঁড়াইয়া আছস। যাত্রি কখন বোঝাই হয়ে গেছে। তোরে কিন্তু সিটিং এর ভাড়া দিমুনা কইলাম।
বাসে দাঁড়ানো যাত্রী - এক কাম কর বাসা থেকে লোক ধইরা ধইরা আইন্না বাসে উঠা।

বাসের ভিতর হাউকাউ চিল্লাচিল্লি। অবশেষে ড্রাইভার বাস ছারলো।

বৃদ্ধ যাত্রী - কিরে তোর বাস আস্তে চলে কেন? আজকে কি নিজের লগে লগে বাস রে খাবার দেস নাই। ঐ তাড়াতাড়ি টান সিগন্যাল পরলে আবার ১০ মিনিট বইসা থাকন লাগবো।

সিগন্যাল

তৃতীয় যাত্রী - দেখলেন মুরুব্বী কতো বড় অসভ্য। ইচ্ছা কইরা সিগন্যালে পড়ছে আরো যাত্রী উঠাইবো।
বৃদ্ধ যাত্রী - এর জন্য তো প্রতিদিন মাইর খায়।
কন্ডাক্টার - চাচা ভাড়া দেন।
বৃদ্ধ যাত্রী - পরে নিস আমি ওনেক দূরে যামু।
কন্ডাক্টার - পরে আসতে পারুম না। একবারে ভাড়া কাইট্টা পিছনে যামু আবার সামনে আইসা ভাড়া কাটমু।
বৃদ্ধ যাত্রী - বেশী কথা কইলে ভাড়া দিমুনা। সিটিং কইয়া লোক উঠাইছস। এখনও অনেক গুলা লোক দাড়াই রইছে।
কন্ডাক্টার - এইর লইজ্ঞা বাসে বুড়া মানুষ নিবার চাইনা। কথা বেশী কয়।
বাসে দাঁড়ানো যাত্রী - কেন তোর বাপে বুড়া না। তুই আবার বুড়া বুড়া করস কেন।
প্রথম ছাত্র - বইলেন না ভাই শিক্ষার অভাব। ঠিকমতো শিক্ষা পেলে এরকম ব্যাবহার করতো না।
কন্ডাক্টার - হ, কতো শিক্ষিত লোক দেখছি আপনাগো মতন, কোট টাই পড়া। পরে বাস ভাড়া না দিয়া নাইম্মা গেছে।
বৃদ্ধ যাত্রী - কোট টাই পড়া লোক তোর বাসে উঠবো কেন।
মহিলা - এই ড্রাইভার বাস থামান। মহাখালী এসে পড়ছে।
কন্ডাক্টার - আপা ভাড়া হইছে?
মহিলা - সবার প্রথম ভাড়া তো আমার কাছে থেকে নিলেন?
তৃতীয় যাত্রী - আপা নামেন নামেন ওরা প্রতি স্টেশনে স্টেশনে সবার কাছে থেকে ভাড়া চায়।

সবাই এক সাথে বাসের মধ্যে হাসাহাসি। বাস আবার ছেঁড়ে দিছে

কন্ডাক্টার - ঐ বনানী নামার আছে নাকি কেউ? ওস্তাদ নাই নাই টানেন।
পিছনের যাত্রী - কিরে ভাই ১০০ টাকার নোট দিলাম ভাংতি দিবানা।
কন্ডাক্টার - আরে ভাই মনে আছে তো। যাইবেন তো হেই টঙ্গী, আমি কি আপনার টাকা মাইরা নাইম্মা যামু।
পিছনের যাত্রী - তোমার কাছেতো ভাংতি আছে দিতে সমস্যা কই?
কন্ডাক্টার - কি যে লোক ভাই আপনি? ঐ কাকলী কাকলী, কাকলী নামবেন কেউ? ওস্তাদ ১০০ টাকা ভাংতি দেনতো।
ড্রাইভার - এক কাম কর সামনে সিগন্যাল আছে। আমার জন্য পানির বোতলটা ভর্তি করে নিয়ে আয় আর একটা সিগারেট আনিস।

৫ মিনিট অতিবাহিত এক সিগন্যাল ছেঁড়ে দিছে আরেক সিগন্যালের মধ্যে

পিছনের যাত্রী - এই ড্রাইভার সাহেব, কন্ডাক্টার কই? আমার টাকা নিয়ে চলে গেলো নাকি আবার।
ড্রাইভার - আপনাগো যে ঢাকা শহরে আসার ভিসা দিছে কেডা? কন্ডাক্টার টাকা মারলে আমি আছিনা। আর বিনা কন্ডাক্টার এ আমি গাড়ি চালামু কেমনে?
কন্ডাক্টার - ওস্তাদ। এই লন পানি আর সিগারেট।
ড্রাইভার - ভাইরে আগে ভাংতি টাকা দিয়ানে, খালি টাকা টাকা কইরা চিল্লাইতেছে।

অবশেষে কাকলী সিগন্যাল থেকে বাস ছাড়লো

পিছনের যাত্রী - কি ভাই পাঁচ টাকা কম দিলা কেন, প্রতিদিন তো এই টাকায় যাওয়া আসা করি।
ড্রাইভার - আরে ভাই তেলের দাম বাড়াইছেনা। এখন নতুন রেট।
পিছনের যাত্রী - তেলের দামের সাথে তোমাদের সম্পর্ক কি? তোমাদের গাড়িতো গ্যাসে চলে।
তৃতীয় যাত্রী - আর বইলেন না ভাই ওরা এইরকমি? ওরা কিছুর দাম বাড়লেই ওদের বাস ভাড়া বাড়াইয়া দেয়। কি যে অবস্থা পিয়াজ,রসূন,মাছ যে কোন খাবারের দাম বাড়লে বাস ভাড়া বারে। কি ড্রাইভার সাহেব গাড়ি কি আজকাল এসব খাওয়া শুরু করছে নাকি?
ড্রাইভার - গাড়িনা ভাই গাড়ি যারা চালায় তারা তো মানুষ। না আমাগো মানুষ মনে হয়না। আমাগো কি সংসার নাই? আমরা কি কিছু খাইনা।
প্রথম যাত্রী - ড্রাইভারের উদ্দেশে - প্রফেসর সাহেব আপনি লেকচার কম দিয়া সামনে মনোযোগ দেন। নাইলে এক্সিডেন্ট করবেন।

বাস খিলখেত পার হয়ে এয়ারপোর্ট এর রাস্তায়

প্রথম যাত্রী - কিরে ভাই কি হইলো এতো জোরে টানস কেন? এক্সিডেন্ট করবি নাকি? আস্তে আস্তে টান।
বৃদ্ধ যাত্রী - আরে বইলেন না ভাই এটা আগের বাসের হেল্পার আছিলো এখন ড্রাইভার হইছে।
কন্ডাক্টার - এয়ারপোর্ট নামবেন কেডা এয়ারপোর্ট। ওস্তাদ থামান একজন নামবো।

বাস ১০ সেকেন্ড চলার পর

বৃদ্ধ যাত্রী - ঐ থামাও থামাও, আমি এখানে নামমু।
কন্ডাক্টার - মুরুব্বী এতটুক পথ হাইট্টা যাইতে পারলেন না।

বৃদ্ধ যাত্রী নেমে গেলো

প্রথম যাত্রী - কি লোক রে বাবা। পারলে উনারে একবার বাসার দরজায় নামাইয়া দিয়ে আসলে ভালো হতো।

অতঃপর টঙ্গির পথে বাস, একি ক্যাচাল, চিল্লাচিল্লি সেই নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। চলছে চলবেই।

Likes Comments
০ Share

Comments (3)

  • - মোঃসরোয়ার জাহান

    প্রতিটি দিবস
    কোন না কোন
    কারও না কারও
    আনন্দ কিংবা বেদনার স্মৃতি,
    হারালেই খুঁজি
    থাকবে কি এ ধরায় আছি যতদিন?

    --------darun laglo

    - রুদ্র আমিন

    সুন্দর মন্তব্যে জন্য ধন্যবাদ সরোয়ার ভাইজান। 

    - আমির ইশতিয়াক

    আপনাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। আজ প্রথম নিবন্ধন করলাম। এখানে আপনাকে পেয়ে ভাল লাগল।

    • - রুদ্র আমিন

      এখানে নিবন্ধণ করার জন্য ধন্যবাদ আমির হোসেন ভাই। নববর্ষের শুভেচ্ছা, সুন্দর হোক সবার জীবন এমনটি কামনা করি।

    Load more comments...