উপরে নীল আকাশ, চারদিকে শান্ত জলরাশি। স্বচ্ছ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অপরূপ প্রতিচ্ছবি। নৌকা নিয়ে গোটা বিল চষে বেড়ানো, পাশেই উড়ন্ত বড় বকের ঝাঁক, নিচে বসা কালো লেজ জৌরালি ও দাগিলেজ জৌরালির ঝাঁক। চারপাশ জুড়ে চেনা-অচেনা পাখিদের মিলন মেলা শীতের ভ্রমণের অন্যতম এক আকর্ষণ। শীতের সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে উড়ে আসা পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে আমাদের দেশের এসব হাওর অঞ্চল। শীতের সময়ে এসব হাওরের রূপ-বৈচিত্র্য দেখার জন্য ঘুরে আসতে পারেন।
কিভাবে যাবেন ?
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি সিলেটে যেতে হবে। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন পেয়ে যাবেন। ভাড়া পড়বে ৩৫০-৫০০ টাকা। এ ছাড়া কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ও বুধবার ছাড়া প্রতিদিনই পেয়ে যাবেন পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৫০-৭০০ টাকা। সিলেট শহর থেকে যে কোনো স্থানেই ভ্রমণের জন্য বাস, সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা পেয়ে যাবেন।
কোথায় থাকবেন ?
এসব হাওরের আশপাশে থাকার জন্য তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। সারা দিন বেড়ানোর পর সিলেটের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল শহরসহ আশপাশে অনেক হোটেল-মোটেল বা রিসোর্ট পাবেন। এসব হোটেল-রিসোর্টে ৫০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় রুম পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি। পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় ও পূর্বে পাথারিয়া মাধব পাহাড় বেষ্টিত হাকালুকি হাওর সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিস্তৃত। ছোট-বড় প্রায় ২৩৮টিরও বেশি বিল ও ছোট-বড় ১০টি নদী নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওর বর্ষাকালে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। থই থই জল আর হিজল বনের রূপকথার গন্ধ মিলবে হাকালুকিতে। ঘন কুয়াশার সকাল, তপ্ত দুপুর আর লাল গোধূলি এখন এই অপরূপের দেশে। ধানের ক্ষেত হাওয়ায় দোলে, জলাশয়ে ছোট্ট ডিঙি, রাখালের গরুর পাল নিয়ে হেঁটে চলা এ যেন সেই বাংলা, যা হারিয়ে যেতে বসেছে।
হাকালুকি হাওরে রয়েছে ২৭৬টির মতো ছোট-বড় গভীর-অগভীর বিল। কোন দিকে যে তার শেষ, হদিস করা যায় না। মাঝেমধ্যে সদ্য যৌবন পাওয়া হিজল বন। শিয়াল আর মেছো বিড়ালের বাড়ি এখানে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে হাকালুকি বিখ্যাত পাখির জন্য। বিশেষ করে শীতের পাখি।
হাকালুকি হাওরকে জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডারও বলা যায়। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী পাওয়া যায় এই হাওরে। হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি, ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি, ১৪১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ১০৭ প্রজাতির মাছের দেখা মিলবে। হাওয়াবন্যা ছাড়াও হাওরখাল বিল ও পিংলা বিলে হাজার হাজার পাখির দেখা মিলবে।
সবচেয়ে বেশি হাঁস দেখা যায় হাওরখাল বিলে। একসাথে এত হাঁস বসে থাকে যে টেলিস্কোপ লাগিয়েও গোনা যায় না। এগুলোর মধ্যে উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, উত্তুরে খুন্তেহাঁস, গাডওয়াল হাঁস, খয়রা চকাচকি, পাতি চকাচকি, ফালকেট হাঁস, গিরিয়া হাঁস ও টিকি হাঁস অন্যতম।
মেঘালয়ের সুবিশাল ও বিস্তৃত পাহাড়ের হাজারো ছড়া ও বেশ কিছু ঝরনা হলো টাঙ্গুয়ার হাওরের পানির উৎস। শীতকালে এই হাওরে অনেক কান্দা বা পাড় জেগে ওঠে। পুরো হাওর অনেক বিলে ভাগ হয়ে যায়। তবে বর্ষাকালে এই হাওর যেন এক বিশাল সমুদ্র। আর সেই সমুদ্রের উত্তর পারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়।