Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

বাংলার উত্তরের শেষ প্রান্তে






বাংলাদেশের মানচিত্রে একদম উত্তর প্রান্তে তেঁতুলিয়ায়। মহানন্দার তীরে নিরিবিলি ডাকবাংলোতে বসে দেখবেন নদী থেকে পাথর কুড়ানো আর অপর পাড়ে ভারতীয় জনপদে মানুষজনের আনাগোনা। যদি হয় বর্ষাকাল তবে, অঝোরে বৃষ্টি নামবে নির্জন ডাকবাংলোর বারান্দায় এক কাপ ধূমায়িত চা হাতে নিয়ে চুপচাপ শুনবেন বৃষ্টির গান। আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তাহলে তো কথাই নেই-বাংলাদেশে বসেই দেখা যাবে হিমালয়ের অন্যতম বড় পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য!


কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার দরকার নেই। এই বাংলাদেশ থেকেই এমন দৃশ্য দেখা সম্ভব। দার্জিলিং চায়ের স্বাদও নিতে পারেন তেঁতুলিয়ায় বসেই। সিলেটের পর দেশের সবচেয়ে বেশি চায়ের আবাদ যে এখানেই হয়! এখানকার চা বাগানিদের দাবি, তেঁতুলিয়ার চায়ের মান পৃথিবীবিখ্যাত দার্জিলিং চায়ের কাছাকাছি।

দেখতে পারবেন ঐখানকার সমতল ভূমির সুন্দর-সুন্দর সব চা বাগান। পঞ্চগড় শহর থেকে তেঁতুলিয়া রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর রাস্তার দুধারে পাওয়া যাবে চা বাগান।

রাস্তায় চোখে পড়বে আরও একটা জিনিস। এখানকার অনেক এলাকায় মাটি খুঁড়লেই পাওয়া যায় পাথর। তাই অনেক জমির মালিক মাটি খুঁড়ে পাথর তুলে স্তূপ করে রাখেন পথের ধারে, বিক্রির জন্য।

পাথর পাওয়া যায় আরও এক জায়গায়। সেটি মহানন্দা নদী। স্রোতের টানে ভারত থেকে নেমে আসে পাথর। নদী থেকে এসব পাথর সংগ্রহ করে এখানকার দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ।

তেঁতুলিয়ায় মহানন্দার তীরে সরকারি ডাকবাংলোতে আস্তানা গেড়ে সেখান থেকে চলে যাবেন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। বর্তমানে এই একটি মাত্র পথেই বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্য চলে। বাংলাবান্ধা সীমান্তের সব চেয়ে কাছে ১০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহর।

তেঁতুলিয়া আর পঞ্চগড়ে বেড়াতে গিয়ে দেখবেন আরও অনেক কিছু। এরমধ্যে আছে রকস মিউজিয়াম। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে ১৯৯৭ সালে স্থাপিত এটি পাথর সম্পর্কে দেশের প্রথম জাদুঘর। এখানে দেখতে পাবেন প্রাগৈতিহাসিক কালের ছোট-বড় নানারকম পাথর, পাথরের তৈরি অস্ত্রশস্ত্র, পাথরে খোদাই করা লেখা।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ভিতর গড়ে পাবেন মহারাজার দিঘি। এখানেই আছে বন বিভাগের বিশাল শালবন, আছে শালমারা বিল।

সপ্তাহের দুদিন ছুটি সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাতে ওঠে পড়ুন বাসে। ভোরে নামবেন পঞ্চগড়। সেখানে দেখুন রকস মিউজিয়ামসহ আশপাশের এলাকা। বিকেলে চলে যান তেঁতুলিয়া। রাত কাটিয়ে পরদিন ঘুরেফিরে দেখুন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চা বাগানসহ আশপাশের এলাকা। সেদিনই পঞ্চগড় ফিরে রাতের বাস ধরুন, সকালে ফিরে আসবেন ঢাকা।


কীভাবে যাবেন:
রাজধানী থেকে পঞ্চগড়ের সরাসরি বাস পাবেন। হানিফ, শ্যামলীসহ বিভিন্ন পরিবহনের এসব বাসে ভাড়া নেবে ৪০০ টাকা। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ায় বাস চলাচল করে সারাদিন, ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়াও ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় সরাসরি চলাচল করে হানিফ ও বাবুল পরিবহনের বাস, ভাড়া ৫০০ টাকা। পঞ্চগড় বা তেঁতুলিয়ার পথে কোনো এসি বাস নেই। তেঁতুলিয়ায় নেমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চা বাগান বা আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির জন্য স্কুটার ভাড়া করাই ভালো। আর যদি মাইক্রোবাস নিতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই।


কোথায় থাকবেন:
পঞ্চগড়ে অনেক হোটেল আছে, ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এসি কক্ষ। তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদী তীরের ডাকবাংলোতে থাকার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা। বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে, এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। এখানে প্রতি কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা।