মারমা ভাষায় কুম মানে হল জলপ্রপাত। বান্দরবানের প্রাণ সাঙ্গু নদী পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে অজস্র ছোট খুম বা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। রেমাক্রিখুম ও নাফাখুম এর মধ্যে অন্যতম। নাফাখুম যেতে হলে থানচী যেতে হয় বলে বান্দরবানে। থানচী পর্যন্ত ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। সরাসরি জিপ বা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। থানচী পর্যন্ত চান্দের গাড়ির ভাড়া ৪ হাজার টাকা। চান্দেরগাড়ি হচ্ছে টেম্পো বা লেগুনার মতো। এক গাড়িতে ১২ জন অনায়াসে বসতে পারে। পাহাড়ি রাস্তা। পাহাড়ের কিনার ঘেঁষে রাস্তা, কিছু রাস্তা এমন যে ব্রেক ঠিক সময়ে না কষলেই সোজা কয়েকশ’ ফিট নিচে পড়ে চুরমার হয়ে যাব। একটি রাস্তায় আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা। এর নাম পিক ৬৯।
থানচী পৌঁছে নৌকায় জনপ্রতি ৫ টাকা দিয়ে নদী পার হওয়া যায়। সাঙ্গু নদীটি এখানে খালের মতো হয়ে আছে। এর ওপর দিয়ে একটি অসমাপ্ত ব্রিজ। যাত্রা এখানেই শেষ নয়। আসল অ্যাডভেঞ্চার এখান থেকে শুরু। থানচীর নৌকা ঘাটে গিয়ে গাইড সমিতি থেকে গাইড নিতে হবে । যিনি নাফাকুম নিয়ে যাবেন। তাকে দিতে হবে দিনপ্রতি ৬০০ টাকা। ক্যাম্পে নাম, ঠিকানা এন্ট্রি করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করা যাবে যাওয়া-আসা ৪ হাজার টাকায়।
পরদিন সকাল ৭টায় নৌকায় উঠবেন। উদ্দেশ্য নাফাখুম। ২ ঘণ্টায় সাঙ্গুর ওপর দিয়ে গেলে তিন্দু বাজার। ছোট একটি ঝরনা দেখতে পাবেন। গাইড জানাবেন প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে সামনে রাজা পাথর। খুব কঠিন পথ। যেতে যেতে পথে হঠাৎ নৌকার সামনে পড়বে নৌকার চেয়েও বড় পাথর। আশপাশে বিশালাকার পাথর, একটির চেয়ে আরেকটি বড়। বাড়ি খেলে নৌকা গুঁড়িয়ে যাবে।
কয়েকজন নৌকা থেকে নেমে যাওয়া ভালো , পানি কম থাকবে, কিন্তু এই পানিতেই অনেক স্রোত। নদীর মাঝে বিশাল বিশাল পাথরকে পাশ কাটিয়ে যেতে হবে। রাজা পাথর শেষে মাঝি নামিয়ে দিবে। এবার পাহাড়ি বন দিয়ে হেঁটে যেতে হবে ৪০ মিনিট পথ। গাইডকে পদানুসরণ করে রেমাক্রি পৌঁছাবেন। দেখতে পাবেন রেমাক্রিখুম বা রেমাক্রি ঝরনা। গাইডকে বললে নিয়ে যাবে রেমাক্রি বাজারের সর্দার লাল পিয়ম ব্যোম-এর কাছে। রাতটা রেমাক্রি গেস্ট হাউসে কাটাতে পারবেন। রাতপ্রতি ১ রুম ভাড়া ৬০ টাকা। সব ব্যবস্থা লাল পিয়ম করে দিবে। পরদিন সকাল ৮টায় রওনা দিবেন নাফাকুমের উদ্দেশ্যে।
রেমাক্রি খাল ধরে ৩-৪ ঘণ্টা হাঁটার পর অনেক জলরাশির ঝমঝম শব্দে কান তালা লেগে যাবে। বুঝতে পারবেন ওটা কিসের আওয়াজ। অবশেষে দেখতে পাবেন বাংলার নায়াগ্রা নাফাকুম। সত্যি গর্ব করার মতো। অনবরত শীতল, নির্মল জলরাশি পড়ছে এই নাফাকুমে। এর পানি চোখে মুখে লাগাতেই চলে যাবে এতদূর পথ ভ্রমণের ক্লান্তি, কষ্ট মনটা সব ভুলে আনন্দে নেচে উঠবে।