হোসনী দালান পুরানো ঢাকায় অবস্থিত শিয়া সম্প্রদায়ের একটি ইমারত। বাংলায় নির্মিত মোগল শাসনামলের দর্শনীয় স্থাপনার মধ্যে ঢাকার হোসেনী দালান একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য নিয়ে আজও টিকে রয়েছে। দালানটি মূলত একটি স্মৃতিসৌধ। হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হওয়ার কারণে এর নামকরণও হয়েছে তারই নামানুসারে অর্থাৎ হোসেনী দালান। হোসেনী দালানটি নির্মিত হয় মোগল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র বাংলার সুবাদার শাহ সুজার আমলে। শাহ সুজা ছিলেন শিয়া মতাবলম্বী শাসক। তিনি যখন সুবাদার হয়ে বাংলায় আগমন করেন, তখন তার সঙ্গে করে তিন শতাধিক শিয়া অনুচর ও তাদের পরিবার এদেশে নিয়ে আসেন। শাহ সুজার নৌবাহিনী প্রধান-শিয়া মতাবলম্বী অনুচর সৈয়দ মীর মুরাদ এই হোসেনী দালান তৈরি করেন।
কথিত রয়েছে, সৈয়দ মীর মুরাদ এক রাতে স্বপ্নে দেখতে পান, কারবালার যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করছেন এবং স্বপ্নে মীর মুরাদকেও অনুরূপ একটি দালান নির্মাণের নির্দেশ দিচ্ছেন। স্বপ্নে নির্দেশ লাভ করে মীর মুরাদ ১৬৪২ খিস্ট্রাব্দ নাগাদ হোসেনী দালানটি নির্মাণ করেন। বাংলায় মোগল নির্মিত অন্য সব স্থাপনার মতো এটিও মোগল স্থাপত্য রীতি-নীতি অনুসারে নির্মিত হয়। ঢাকার নায়েব নাজিমগণ শিয়া মতাবলম্বী হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন তারাই হোসেনী দালানটির মুতাওয়াল্লী ছিলেন।
দালানের দুই দিকে রয়েছে দুইটি মিনার, দক্ষিণ দিক ঘেঁষে বিশাল পুকুর আর উত্তর দিকে প্রশস্ত মাঠের পর বিশাল গেটওয়ে। ভবনটি দ্বিতল আকৃতি বিশিষ্ট। নিচে রয়েছে কবরখানা। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে জরিখানা, হুক্কাখানা, নিশিত খাঁ নামের তিনটি কক্ষ। হোসেনী দালানটি নির্মাণের পর এখান থেকে বিভিন্ন উৎসবে জাঁকজমকপূর্ণ ও সজ্জিত মিছিল বের হতো। এছাড়া রয়েছে নহবতখানা, যেখানে প্রতিটি চাঁদ দেখার রাত থেকেই শুরু হতো নহবত বাজানো।