Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

মাদারীপুরের পর্বত বাগান



শুরুর কথাঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা আমাদেও এ দেশ । এদেশের কোথাও কোথাও অবহেলিত ,অযত্নভাবে পড়ে আছে এসৌন্দর্য । সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ একটু সৌন্দর্যেও জন্য ছুটে যাচ্ছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত । যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেখানে মানূষ ছুটে গেছে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ সৌন্দর্য যেমন চয়ন করেছে তেমনি লালন করেছে প্রানের আবেগ দিয়ে । এমনি এক প্রকৃতিকপ্রেমি,সৌন্দর্যপিপাসু রাস বিহারী পর্বত মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের বড়বাড্ডা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন । ময়মনসিংহ জমিদার সেরেস্তার নায়েবের চাকরি শেষে আপন শখেই গড়ে তুলেছিলেন বাগান ।

তৈরি হয়েছিল যেভাবেঃ
১৯৩০সালে রাসবিহারী পর্বতদেশ-বিদেশি প্রায় ৫০০ জাতের ফল ও ফুলেরচারা সংগ্রহ কওে প্রায় ২০একর জমির ওপর গড়ে তোলেন এ বাগান । সেই থেকে তার নামানুসারে এ বাগান টি পর্বত বাগান নামে পরিচিত পায় । বাগানের পাশ দিয়ে বযে যাওয়া খরস্রোত কুমারনদ বাগানের আকর্ষনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে বাড়তি সৌন্দর্য এনে দেয় । নানা আকৃতির সুন্দও শৈল্পিক পথ বাগান প্রতিষ্ঠালগ্নে হাজার হাজার নারিকেল ও সুপারি গাছ বাগানটি ঘিরে রেখেছে । ছিল আম ,জাম ,কাঁঠাল,কামরাংগা, আমড়া,কুল,সফেদা , জলপাই, আমলকী, কমলা জামরুল,তেজপাতা,দারুচিনি, লবঙ্গ,এলাচ সহ দেশ বিদেমি বিভিন্ন ফল ও ভেষজ গাছ । বাগাটি নয়নাবিরাম করার জন্য গোলাপ,গন্ধরাজ টগর, কামিনী, হাসনাহেনা বকুল, জুই বেলি ,জবা সহ দেশ বিদেশী সংখ্য ফুলের গাছ ।

পবর্ত বাগানের সৌন্দর্য ও রূপঃ
প্রয়ি ১২ রকমের গোলাপ গাছ ছিল পবর্ত বাগানে । বিচিত্র পাখির কল-কাকলিতে বাগানটি ছিল মুখরিত । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকও পিকনিক পার্টিও আগমন ঘটতো এ বাগানের শোভা দর্শনের প্রত্যাশায় । শীতকালে বাগান সংলগ্ন পুকুরের আগমন ঘটতো বিচিত্র পাখির ।ফলে খুব সহজেই আকৃষ্ট হতো পর্যটক । বাগানের মধ্যে ৬টি শান বাধানো পুকুরও রাজবিহারি পবর্তেও বাসভবনটি সবচেয়ে আকর্ষনীয় । এগুলো এখন পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। এক সময় বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের মধ্যে আর কোথাও চিত্য-বিনোদনের এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এমন নয়নাভিরাম পরিবেশ দ্বিতীয়টি ছিলনা। জানা যায় তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমা শহরে যেসব উচ্চপদস্থ কর্মকতার আগমন ঘটেছিল তাদের প্রত্যেকেই এসেছিলেন এ বাগানে । গাছপালা ও নানা প্রজাতীর পাখির পাশা-পাশি এ বাগানে ছিল বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু । হসুমান , বানরের ছিল অবাধ বিচরন । নিবিঘ্নে তারা ঘুরে বেড়াতো বাগানের এ ডাল থেকে ও ডালে ।

যেভাবে সৌন্দর্য হারালোঃ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও সময় স্থানীয় কিছু রাজকার ও পাকসেনাদের দ্বারা নিমর্মভাবে রাজবিহারি পবর্ত নিহত হন । রাজকার ফকু মাতুব্বর দ্বারা দখল হয়ে যায় তার বাগান বাড়ি । এ মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই বাগানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসে । এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উজার করে দেয় বাগানের গাছপালা । বাগানের মধ্যে এখনো রাসবিহারি পবর্তের ১৪কক্ষ বিশিষ্ট দোতালা বাস ভবন, একটি মন্দির এবং বাবা রাজকুমার পবর্ত ও মা বিধুমুখি পবর্তের দুইটি সমাধি সৌধ ঐতিহ্যের ধরক হয়ে আছে ।

কেমন আছে পবর্ত বাগানের উওরসুরিরাঃ
রাসবিহারি পবর্তের স্ত্রী শোভরানী পবর্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দির্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন । ২ ছেলের মধ্যে বড়ছেলে রাজেন্দ্র বিহারি পবর্ত এখন বাগানের দেখাশোনা করেন এবং ছোট ছেলে রনজিৎ বিহারি পবর্ত স্কুলে শিক্ষকতা করেন । সরেজমিন গিয়ে আলাপ হয় রাসবিহারি পবর্তের বড়ছেলের স্ত্রী মালতী রানী পবর্তে সঙ্গে । তিনি বাড়ির গাছ-পালা ও পুকুর লিজদিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে নানা ধরনের অত্যাচারের কথা বলে জানালেন , এখনো অনেকেরই সম্পওির উপর লোভ আছে । আমরা খুব ভয়ে থাকি ।

বর্তমান অবস্থাঃ
বাগান ঘুরে দেখা যায় বেম কয়েকটি বসত বাড়ি । এদের কেউ কেউ ক্রয় সূত্রে আবার কেউ দখল সূত্রে বাড়ি তৈরি করেছেন । আগের মতো বাগানটির শোভা না থাকালেও কাছাকাছি জমিদার সুরেশ চন্দ্র পোদ্দারের বাড়ি মিলিয়ে এলাকাটি আর্কষনীয় । এব্যাপারে অধ্যাপক ডঃ অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন এ বাগানে অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে , যা রক্ষা করা প্রয়োজন । সরকার ইচ্ছে করলেই দক্ষিন বাংলার ঐতিহ্য এ বাগান টি হতে পারে বিনোদ কেন্দ্র । মৌসুমে বেশ কয়েকটি পিকনিক পার্টি দেখা গেলেও পর্যটকদের তেমন দেখা বেশী একটা দেখাযায় না । বাগানটি রক্ষা হলে আবার হয়তো পরিবেশ প্রেমী সৌন্দর্যপিপাসু পযৃটকদেও পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে ঐতিহ্যবাহী পর্বত বাগান ।

শেষ কথাঃ
বর্তমানে মাদারীপুরে  এত বড় একটি মনোরম বাগান তৈরি করা সম্ভব হবে কি না তা সবার অজানা । তাই দক্ষিন বাংলার পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বাগানটি তৈরি করা সম্ভব । মনো মুগ্ধকর নির্মান শৈলি দিয়ে তৈরি কুমার নদী ঘেরা পর্বত বাগানের নৌ এবং জলপথ প্রবেশের সুবিধা রয়েছে । সরকারের উচিত অচিরেই বাগানটি দক্ষিনবাংলার পর্যটক কেন্দ্র ,বিনোদনকেন্দ্র ও পরিবেশের ভার সাম্য রক্ষার জন্য রক্ষা করা । এছাড়া মাদরীপুর বাসীর দাবী , শুধু সরকারের নয় বাগান রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ সহ সবার এগিয়ে আসা উচিত ।