Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Sports Image

৬ টি ইউরোপিয়ান কাপ জয়ী একমাত্র প্লেয়ার



রিয়াল মাদ্রিদ, ১১ নং জার্সি এবং ‘তিনি’ এই ৩ টি শব্ধ যেন একই সূত্রে গাথাঁ। হ্যাঁ আমি এমন একজনের কথা বলছি যিনি হলেন ফুটবল বিশ্বের প্রথম পরিপূর্ণ উইংগার। তাকে সমুদ্রের বাতাসের সাথে তুলনা করা হত। আপনারা হয়ত রোনালদো কিংবা গ্যারেথ বেলের দৌঁড় দেখে দিশেহারা হয়ে যান কিন্তু জানেন কি ফুটবলের মাঠে যে এমনভাবে দৌঁড়ানো যায় তার আবিষ্কারক কে ? হ্যাঁ তিনি আর কেউ নন, দ্যা এল সুপারসনিক খ্যাত ‘ফ্রান্সিস্ক গেন্তো লোপেজ’।

২১ অক্টোবর,১৯৩৩ সালে স্পেইনের ঐতিহ্যবাহী ক্যান্টাব্রিয়া সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন গেন্তো। দরিদ্রতায় বড় হওয়া এই লিজেন্ড মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ছোটবেলা থেকেই তার সপ্ন ছিল একজন ফুটবলার হওয়ার। সেই লক্ষ্য থেকে স্থানীয় ক্লাব এসডি নিউয়েভা মন্টেনা তে নাম লিখান। তারপর ইউনিয়ন ক্লাব অ্যাস্টিল্যর তে যান। সেখানে তিনি এক ম্যাচে নয় গোল করেন। তার ডাক নাম হয়ে যায় দ্যা গেল অফ ক্যান্ট্রাবিয়ান সি। যার অর্থ তিনি ক্যান্ট্রাবিয়ান সমুদ্রের বাতাসের থেকেও বেশি দ্রুত।

আর বলবেই না কেন তিনি যে ১০০ মিটার মাত্র ১১ সেকেন্ড সময়ে পাড়ি দেন যা তৎকালীন অলিম্পিক গোল্ড মেডেলিস্ট থেকেও দ্রত বলে খ্যতি লাভ করে। ১৯৪৮ সালের সামার অলিম্পিক গোল্ড মেডেলিস্ট হ্যারিসন ডিলার্ড অফ ইউএসএ ১০০ মিটার অতিক্রম করেন ১০.৩ সেকেন্ডে। কিন্তু বয়সের ক্ষেত্রে হ্যারিসনের তুলনায় গেন্তো ছিলেন নিতান্তই শিশু। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার স্বপ্নের ক্লাব রেসিং ডি সান্টানা তে খেলার সুযোগ আসে। নিজের প্রথম সিজনেই বাজিমাত করেন করেন দ্যা এল সুপারসনিক। ব্যাস আর কি লাগে।

অফার পেলেন বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সুযোগ কিন্তু তিনি যখন মাদ্রিদে যোগ করেন তখন মাদ্রিদ ছিল এক নগণ্য ক্লাব। ১৯৫৩ সালে তিনি নাম লিখান রিয়ালে। কিন্তু প্রথন সিজনে আশানুরূপ পারফর্ম করতে না পারায় লস ব্লাংকোস ফ্যান এবং মিডিয়ার দুয়োধ্বনি শুন্তে হয় তাকে। কিন্তু পরের সিজন শুধু মাদ্রিদ নয় বিশ্ব দেখলো নতুন এক ঝলক। যে প্লেয়ার মাঠের বাম প্রান্ত থেকে একা তিন/চারটা প্লেয়ারকে কাটিয়ে গোল করছে কিনবা করাচ্ছে। ক্যারিয়ারে গোল করার থেকে করাতেন বেশি।


আর মাঠে তার নেতাসুলভ আচরনের জন্য পান রিয়ালের ক্যাপ্টেন্সির আর্মব্যান্ড। পুস্কাস এবং ডি স্টেফানো নিয়ে করেন ফুটবল ইতিহাসের ডেডলিয়েস্ট ট্রিও। তার একেকটা ক্রস কিনবা থ্রু-বল ছিল পুস্কাস এবং স্টেফানোর গোল করার উৎস। ‘৫৫-৫৬’ এবং ‘৫৬-৫৭’ সালে ইউসিএল জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। ‘৫৭-৫৮’ মৌসুমের ইউসিএল ফাইনালে গোল করে মাদ্রিদকে জিতান হ্যাটট্রিক শিরোপা। ‘৫৫-৬০’ এই টানা ৫ মৌসুম মাদ্রিদের গোল্ডেন টাইম। এবং এই ৫টি ইউসিএল জিতাতে তিনি সরাসরি ভূমিকা রাখেন।

আচ্ছা আপনাদের ১টা প্রশ্ন করি। বলেনতো কোন ফুটবলার সব থেকে বেশি ইউসিএল জিতেছেন ? বলতে পারবেন। আপনারা অনেকে পুস্কাস, ডি স্টেফানো দের কথা বলবেন। কিন্তু তারা সব থেকে বেশি জিতেন নি। সব থেকে বেশি ৬টি ইউরোপিয়ান ট্রফি ( বর্তমানে ইউসিএল) জিতার একমাত্র মালিক ফ্রান্সিস্ক গেন্তো লোপেজ। ‘৫৫-৬০’ টানা ৫টি এবং ‘৬৫-৬৬’ মৌসুমে আরেকটা জিতেন। প্রায় ১৮টি মৌসুম মাদ্রিদের হয়ে খেলেন এই লিজেন্ড। করেন ১২৮ টি গোল যার মদ্ধে ৩০টি এসেছে ইউসিএল এ। ক্যারিয়ারে গোল করা থেকে করিয়েছেন অনেক। ১২টি লা লিগা জিতা এই প্লেয়ারের আছে কয়েকটি হ্যাটট্রিক ও। ৫০/৬০ এর দশকে খেলেছেন।

সেই সময় স্পেইন তেমন আহামরি দল ছিল না। তাই হয়ত বিশ্বকাপ ? ( নাই বা লিখলাম, এমন প্লেয়ারের কস্টের কাহিনী নাই বা লিখা ভাল। ) তার দু:খ হয়ত একটাই বিশ্বকাপ। তার সময় ছিল ব্রাজিলের গোল্ডেন যোগ। শুধু ব্রাজিল নয়। জার্মান এবং ইংল্যান্ড এর ও সুদিন ছিল। তাই হয়ত মাদ্রিদ ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই প্লেয়ারের বিশ্বকাপ জিতা হয়নি। তাই বলে তার কষ্ট নেই। তার দুই বন্ধু স্টেফানো তো বিশ্বকাপ খেলেনি আর আরেক বন্ধু পুস্কাস তো অল্পের জন্য পারেন নি। তার সম্মানে মাদ্রিদ ৩টি টেস্টিমনিয়াল দেয় যথাক্রমে ‘৬৫, ‘৭২ এবং ‘০৭ সালে। ২০০৫ সালে মাদ্রিদ তাকে আজীবনের জন্য গোল্ডেন ফুট উপাধি দেয়। তার ফুট-প্রিন্ট চ্যাম্পিয়ন্স প্রমিন্যাড ইন মন্টে কার্লো তে ডিসপ্লে করে রাখা আছে। বুঝতেই পারছেন কত ভাল এবং সম্মানিত প্লেয়ার হলে এরকম সম্মান দেয়া হয়। মাদ্রিদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার পিছনে তার অবনান অনস্বীকার্য।