Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Health Image

শীতে খোস পাঁচড়া থেকে মুক্তি পেতে দরকারি কিছু টিপস



শীতে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শীতে ত্বকের সমস্যাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই হয় ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়ার কারণে। এ জন্য ত্বক ময়েশ্চার দিয়ে তৈলাক্ত রাখতে হয়। ফলে এ ধরনের সমস্যা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া যায়।

শীতে ঠান্ডার কারণে অনেকেই নিয়মিত গোসল করেন না। ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখেন না। শীতের একই পোশাক বেশির ভাগ সময় পরে থাকেন। কাপড়-চোপড় নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এসব কারণে শীতে খোস পাঁচড়া বা স্ক্যাবিস বেশি দেখা যায়।

স্ক্যাবিস একটি ছোঁয়াচে রোগ। সারকপটিস স্ক্যাবি নামক ক্ষুদ্র মাইটের সংক্রমণে এটি হয়ে থাকে। এ পরজীবীটি উষ্ণ পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। স্ত্রী মাইটগুলো ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে ডিম পাড়ে। পরে ডিমগুলো থেকে বাচ্চা মাইটের জন্ম হয়। শীতকালে শীতের পোশাক পরিধানের কারণে ত্বক উষ্ণ থাকে। এতে করে খোস পাঁচড়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়।

যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে, সেহেতু খুব সহজেই পরিবারের অন্য সদস্যরা আক্রান্ত হয়। সাধারণত একই বিছানায় শোয়া বা ঘনিষ্ঠ মেলামেশা থাকলে, একই কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি একসঙ্গে খেলাধুলা করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীদেরও হতে পারে স্ক্যাবিস। মাইট শরীরের বাইরে অর্থাৎ কাপড়-চোপড়, কাঁথা-বালিশ, আসবাবপত্রে দুই থেকে তিনদিন বেঁচে থাকতে পারে। ফলে এ সময় এগুলো কেউ ব্যবহার করলেও হতে পারে খোস পাঁচড়া।

শরীরের উষ্ণ অংশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্ক্যাবিস হয়ে থাকে। সাধারণত, হাতের আঙুলের ফাঁকে, কবজিতে, কনুই ও কনুইয়ের সম্মুখভাগে, স্তনের বোঁটায়, স্তন ও বুকের ত্বকের মধ্যস্থানে, নাভি, তলপেট এবং যৌনাঙ্গের আশপাশে এবং শরীরের ভাঁজগুলোতে। তা ছাড়া পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের অগ্রভাগে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাত ও পায়ের তলায়, মাথায়, ঘাড় ও গালেও দেখা যায়।

স্ক্যাবিস চেনার জন্য চিকিৎসকের দরকার নেই। আপনি নিজেই পারবেন স্ক্যাবিস নির্ণয় করতে। রাতের বেলা অস্বাভাবিক চুলকানিই স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণ। রাতের বেলা বিছানার গরমের জন্য মাইটগুলো চামড়ার নিচে চলাচল করতে শুরু করে। এতে রাতের বেলা বেশি চুলকানি অনুভূত হয়। চুলকানোর ফলে নখের আঁচড়ে চামড়া উঠে যায়। এ জন্য শরীরে আঁচড়ের দাগও পাওয়া যায়।

আক্রান্ত স্থানে ত্বকের ওপর কালো সুতার মতো ছোট ছোট রেখা দেখতে পাওয়া যায়, এটাকে বারো বলে। এ রেখার শেষভাগে ছোট দানা অথবা পানিযুক্ত ছোট দানা থাকে। এ দানাগুলোই মাইটদের আবাসস্থল। এখানেই এরা ডিম পাড়ে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত স্তনের বোঁটার চারপাশে ও পুরুষের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ ও যৌনাঙ্গে চুলকানিযুক্ত ছোট দানা দেখা যায়। অনেক সময় স্ক্যাবিসে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।

এ কারণে আক্রান্ত স্থানে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা যায়। হতে পারে পুজ বা ঘা। সময়মতো চিকিৎসা না করালে চামড়া ও কিডনির নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন : একজিমাটাইজেশন। অর্থাৎ চামড়া কালো ও পুরু হয়ে যায়। ইমপেটিগো দানাগুলো বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে। তা ছাড়া ত্বকে অনেকদিন ধরে স্ট্রেপ্টোকক্কাল ইনফেকশনের কারণে কিডনির মারাত্মক জটিলতা যেমন, একুইট গ্লোমারিউলো নেফ্রাইটিস হতে পারে।

এ ব্যাপারে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এন হুদা বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিকভাবে চিকিৎসা এ রোগের প্রধান প্রতিকারের উপায়। শীতেও নিয়মিত গোসল করুন। শরীরের যেসব স্থানে খোস পাঁচড়া বেশি হয় সেসব স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। একই কাপড় বারবার পরবেন না।

কাপড়-চোপড় নিয়মিত পরিষ্কার করুন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। বিছানা ও কাপড়-চোপড় নিয়মিত পরিষ্কার করুন। একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকার কারণেও এটি ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেই যেহেতু এটি ছড়ায়, তাই সঠিক চিকিৎসা করালেও রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। ভালো করে গোসল করে স্ক্যাবিসের ওষুধ লাগান। খুব ছোঁয়াচে বলে পরিবারের একজনের হলে সবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে শুধু তাকেই নয়, অন্য সদস্য আক্রান্ত না হলেও তাদের চিকিৎসা করাতে হবে। এতে করে খোস পাঁচড়া থেকে পুরো পরিবার রক্ষা পাবে। না হলে অন্য সদস্যের কাছ থেকে আবার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ওষুধ গলা থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত লাগাতে হবে।

খোস পাঁচড়ার জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে। এটি নির্দিষ্ট নিয়মে ব্যবহার করলে খোস পাঁচড়া সেরে যায়। ওষুধগুলো হচ্ছে : ২৫ শতাংশ বেনজাইল বেনজয়েট, পারমিথ্রিন, টেটমোসল। ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি কাপড়-চোপড় সেদ্ধ করে কাচতে হবে এবং বিছানা-তোশক রোদে দিতে হবে। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।