Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

চলচ্চিত্রে নজরুল



কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৪, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬) কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, গায়ক বা সুরকারই নন চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে পেয়েছেন সাফল্য। জাতীয় কবি ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় প্রথম বাঙালী মুসলমান।

নজরুল মোট কটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা এখনো পুরোপুরি বলা সম্ভব নয়। গত ৪০-৫০ বছর ধরে গবেষণা করেও অনেকে নজরুল সম্পর্কে খুব সামান্যই জানতে পেরেছেন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, নজরুল ২০-২১টি ছবির সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এসব ছবির মধ্যে রয়েছে : জলসা (আবৃত্তি ও গান), ধূপছায়া, প্রহলাদ, বিষ্ণুমায়া, ধ্রুব, পাতালপুরী, গ্রহের ফের, বিদ্যাপতি (বাংলা), বিদ্যাপতি (হিন্দি), গোরা, সাপুড়ে (বাংলা), সাপেড়া (হিন্দী), নন্দিনী, চৌরঙ্গী (বাংলা), চৌরঙ্গী (হিন্দি), দিকশূল, অভিনয় নয়, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম (প্রামাণ্য চিত্র), বিদ্রোহী কবি (প্রামাণ্য চিত্র), কবি নজরুল (প্রামাণ্য চিত্র), কাজী নজরুল ইসলাম (প্রামাণ্য চিত্র) ও একটি উর্দু ছবি।

অবিভক্ত বাংলায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করে পারসি চিত্র প্রতিষ্ঠান ম্যাডান থিয়েটারস। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কলকাতায় প্রথম নির্বাক বাংলা ছবি ‘বিল্বমঙ্গল’ নির্মিত হয় ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে। ম্যাডান থিয়েটারসই ১৯৩০-৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সবাক বাংলা ছবি নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয় বাণিজ্যিক কারণে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নজরুলকে ম্যাডান থিয়েটারস ‘সুরভাণ্ডারি’ নিযুক্ত করে। নজরুলের সুরভাণ্ডারি নিযুক্ত হওয়ার সংবাদটি কলকাতার দৈনিক ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় ১৯৩১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় ছাপা হয়। সুরভাণ্ডারি হিসেবে নজরুলের দায়িত্ব ছিল সবাক চিত্রে অংশগ্রহণকারী নট-নটীদের কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করা।

উল্লেখ্য, সুরভাণ্ডারি পদটি সংগীত পরিচালকেরও ওপরে। ম্যাডান থিয়েটারসে সুরভাণ্ডারি হিসেবে নজরুলের যোগদানের পরই পরীক্ষামূলকভাবে ৩০-৪০টি সবাক খণ্ডচিত্র নির্মিত হয়। এগুলো ‘জলসা’ নামে মুক্তি পায় ১৯৩১ সালের ১৩ মার্চ। সম্ভবত এই চিত্রে নজরুল তার ‘নারী’ কবিতাটি আবৃত্তি ও একটি গান পরিবেশন করেছিলেন। ১৯৩১ সালে ‘প্রহাদ’ এ সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন নজরুল। ১৯৩৩ সালে নির্মিত ‘কপাল কুণ্ডলা’র যুক্ত ছিলেন গীতিকার হিসেবে। ১৯৩৪ সালে সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ধ্রুব’ পরিচালনা করেন নজরুল। এতে তিনি নারদের চরিত্রে অভিনয় করেন। ওই ছবির গীতিকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৮টি গানের মধ্যে ১৭টি গান ছিল নজরুলের লেখা। ৩টি গানে কণ্ঠও দিয়েছিলেন তিনি। ‘ধ্রুব’ মুক্তি পায় ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি।

১৯৩৮ সালে কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি ‘বিদ্যাপতি’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৩৫ সালে ‘পাতালপুরী’ ছবির সুরারোপ ও সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৩৭ সালে ‘গ্রহের ফের’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গোরা’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন নজরুল। এতে রবীন্দ্রনাথের গানে তিনি সুরাপোরপ করেন। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন নরেশ মিত্র। ১৯৩৮ সালে নির্মিত ‘সাপুড়ে’ ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছিলেন নজরুল। ১৯৪২ সালে নির্মিত ‘চৌরঙ্গী’ ছবিতে নিজের লেখা ৮টি গানে সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন নজরুল।

১৯৪৫ সালে নির্মিত ‘অভিনয় নয়’ ছবিতে গিরিন চক্রবর্তীর সুরে নজরুলের লেখা একটি গান ব্যবহৃত হয়। ‘দিকশূল’ ছবিতে পঙ্কজ মল্লিকের সুরে নজরুলের দুটি গান ব্যবহৃত হয়েছিল। ‘শহর থেকে দূরে’ ছবির অন্যতম গীতিকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া অনেক চলচ্চিত্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। সব মিলিয়েই বাংলা চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ থেকে শুরু করে হুমায়ুন আহমেদের ‘চন্দ্রকথা’সহ বাংলাদেশী অনেক চলচ্চিত্রে নজরুলের গান ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সে তুলনায় নজরুল সাহিত্য নিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ হয়নি।

১৯৭১ সালে কাজী নজরুলের ‘পদ্মগোখরা’ গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র ‘সুখ দুঃখ’ নির্মাণ করেন খান আতাউর রহমান। একই কাহিনী নিয়ে ১৯৭৬ সালে মুস্তাফিজ নির্মাণ করেন ‘মায়ার বাঁধন’। এর প্রায় তিন দশক পর নজরুলের কাহিনী নিয়ে তিনটি সিনেমা নির্মাণ করেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। ২০০৫ সালে ‘মেহের নেগার’ পরিচালনা করেন মৌসুমী ও গুলজার। ২০০৬ ‘রাক্ষুসী’ পরিচালনা করেন মতিন রহমান। ২০১৪ সালে ‘প্রিয়া তুমি সুখি হও’ পরিচালনা করেন গীতালী হাসান। জাতীয় কবির কাহিনীতে ইমপ্রেসের চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রাথমিকভাবে প্রশংসিত হয়। তবে এ সব চলচ্চিত্রে নজরুলের কাহিনীর অন্তর্গত দিক ফুটে উঠেনি। এ ছাড়া চিত্রায়ন, বাজেট ও শুধু টেলিভিশনে প্রদর্শন বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করতে পারেনি।