Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Entertainment Image

প্রয়াণের পর প্রথম জন্মদিন



কাইয়ুম চৌধুরী (৯ মার্চ ১৯৩২- ৩০ নভেম্বর ২০১৪)

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন যে বছরটিতে (১৯৩২) শিল্পপাঠের জন্য কলকাতা গিয়েছিলেন, সেই বছরই কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম। আর জয়নুলের জন্মশতবর্ষে প্রয়াত হলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণের দিনটিতে তিনি জয়নুলের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করে গেছেন। স্মরণীয় যে জয়নুল যে ময়মনসিংহ থেকে শিল্পশিক্ষার জন্য কলকাতা গিয়েছিলেন, সেই ময়মনসিংহ থেকেই কাইয়ুম চৌধুরীও যাত্রা করেছিলেন শিল্পপাঠের জন্য। যদিও তিনি কলকাতা নয়, এসেছিলেন ঢাকায়। পরবর্তীকালে জয়নুলের প্রেরণায়, জয়নুলের হাত ধরেই অগ্রসর হয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পপাঠ। জয়নুলের প্রতিষ্ঠিত শিল্পশিক্ষালয়ে শিক্ষক নিযুক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবারও সেখানে নিযুক্ত হওয়ার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা সম্ভব হয়েছিল শুধু জয়নুলের স্নেহধন্য হওয়ার কারণেই। জয়নুলের শিল্পদর্শনকে নিজ শিল্পধ্যানে ধারণ করেই বিকশিত হয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পবোধ। বাংলার এই ভূখণ্ড থেকে রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করার প্রতিজ্ঞা পূরণে জীবনভর যে নিরলস প্রয়াসে অবতীর্ণ ছিলেন জয়নুল, একই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমৃত্যু এ দেশের প্রকাশনাশিল্পের জগৎটিকে সৌন্দর্যে মণ্ডিত করার কাজে ব্রতী ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরীও। চিত্রশিল্পের জমিনকে দেশজ মৃত্তিকারসে পরিপুষ্ট করার আদর্শগত প্রত্যয়ের ক্ষেত্রেও তিনি হেঁটেছেন জয়নুল-অনুসৃত পথে। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত জয়নুল আবেদিন: সৃষ্টিশীল জীবনসমগ্র বইটি তাই যথার্থভাবেই উৎসর্গীকৃত হয়েছে কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতির উদ্দেশে।

জন্মসূত্রেই তিনি অর্জন করেছিলেন পিতার সুন্দর হস্তলিপির উত্তরাধিকার। পিতার বদলিপ্রবণ চাকরিসূত্রেই পেয়েছিলেন এই বঙ্গভূমির বৈচিত্র্যময় আত্মার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। পিতার ঔদার্যসূত্রেই বাল্য-কৈশোর থেকে অনুরাগ জন্মেছিল চলচ্চিত্র ও সংগীতের প্রতি এবং যৌবনে অনুমতি মিলেছিল শিল্পশিক্ষা ও শিল্পচর্চার। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই চলচ্চিত্র ও সংগীতানুরাগ প্রবলভাবে অব্যাহত থেকে নিজ সৌন্দর্যবোধ, রুচিশীলতা আর শিল্পচেতনাকে এমন এক বৈশ্বিক মাত্রায় উন্নীত করেছেন, যার অনিবার্য প্রভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর সৃষ্টিজগৎ। শিল্পের শিক্ষক হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন এ দেশের পথিকৃৎ শিল্পী জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমেদ প্রমুখকে। চারুকলায় দ্বিতীয় ব্যাচের সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন মুর্তজা বশীর, রশিদ চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, ইমদাদ হোসেনসহ আরও অনেককে; প্রথম ব্যাচের আমিনুল ইসলামকেও পেয়েছিলেন বন্ধু হিসেবেই। আমিনুল ইসলাম ও মুর্তজা বশীরের সাহচর্যে পরিচয় ঘটেছিল বামধারার শিল্প-সাহিত্য ও রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে।

১৯৪৮ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু হয়েছিল এ দেশের প্রথম শিল্পশিক্ষালয়ের আর সেই বছরেই সূচনা ঘটেছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে আন্দোলনের, যার চূড়ান্ত পরিণতিতে সৃষ্টি হয়েছিল বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত অধ্যায়। কাইয়ুম চৌধুরী ও তাঁর বন্ধুরা সেই বায়ান্নর প্রজন্ম। ১৯৪৭-এর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে নতুন দেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আরেক নতুন ধারা, নতুন চেতনা ও নতুন সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল, যাকে নবজাগরণ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এই বায়ান্নর চেতনা মানে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা, মুক্তবুদ্ধির প্রেরণা, প্রগতিভাবনা, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তা সন্ধান, গণতান্ত্রিক মানসিকতা এবং অসাম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সমতাবোধ। এই সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধই বিকশিত হয়ে চূড়ান্ত রূপ নিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরিণতি অর্জন করে। জাতির এই অগ্রসর গতির সমান্তরালেই কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পযাত্রা বায়ান্নর পথ বেয়ে একাত্তর হয়ে ২০১৪-এর নভেম্বরে সমাপ্ত হয়েছে। বায়ান্নর চেতনাকে প্রবলভাবে ধারণ করেছিলেন বলেই জয়নুল-কামরুলের যথার্থ উত্তরসূরি হিসেবে দেশকে সব সংকট থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি পালন করেছেন সক্রিয় কল্যাণকর ভূমিকা। ১৯৫২ সালেই প্রতিভা নামে একটি পত্রিকার প্রচ্ছদ এঁকে শুরু করেছিলেন ব্যবহারিক শিল্পের যাত্রা। ২০১৪-এর নভেম্বরে সর্বশেষ যে প্রচ্ছদটি তিনি পূর্ণরূপ দিয়ে যান, সেটি ময়মনসিংহের গীতিকা: জীবনধর্ম ও কাব্যমূল্য গ্রন্থের। একই বইয়ের জন্য আঁকা এটি তাঁর তৃতীয় প্রচ্ছদ। এর প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদও তিনি এঁকেছিলেন।


জলরং, ২০০৬, শিল্পী: কাইয়ুম চৌধুরী

১৯৫২ থেকে ২০১৪—এই ৬২ বছরে কত বই ও পত্রিকার নানা রকম প্রচ্ছদ, কত অঙ্গসজ্জা, কত অলংকরণ যে তিনি করেছেন, তার কোনো হিসাব নেই। লেখক ও পত্রিকা সম্পাদকদের কাছে সবচেয়ে আদৃত ও বাঞ্ছিত জনে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে প্রচ্ছদ করাতে পারলে লেখকেরা ধন্য মনে করতেন। এ দেশের বিখ্যাত সব লেখকের এক বা একাধিক বইয়ের এবং কোনো কোনো বইয়ের সব সংস্করণের স্বতন্ত্র প্রচ্ছদ তিনি এঁকেছেন। তাঁর এই জনপ্রিয়তার মূলে ছিল প্রধানত সৌন্দর্যবোধ, রুচিশীলতা ও দৃশ্যতাগুণ। এই সৌন্দর্যের আকর তাঁর হস্তলিপি বা ক্যালিগ্রাফি, বিষয়ানুসারী চিত্র পরিকল্পনা ও নকশাগুণ। রং ব্যবহারেও তিনি পরিচয় দিয়েছেন ভারসাম্য সৃষ্টি ও সূক্ষ্ম মিনিমাইজেশনের। এসবের মধ্য দিয়ে তিনি ৬০ বছরেরও অধিককাল ধরে ‘সৃষ্টিসুখের উল্লাসে’ মেতে বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পকে সৌন্দর্যের এমন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়ে গেছেন, যার কোনো তুলনা নেই। এ ক্ষেত্রে তাঁর পূর্বসূরি ও গুরু জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান প্রমুখ সবাইকে অতিক্রম করে গেছেন অনেক দূর। এভাবে তিনি একাই হয়ে উঠেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি আমাদের লেখক ও পাঠকদের সুন্দরকে যথার্থভাবে দেখা ও অনুধাবনের একটি উন্নত রুচিশীল চোখ নির্মাণ করে দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর গান দিয়ে বাঙালি শ্রোতাদের একটি উন্নত অভিজাত কান গড়ে দিয়ে গেছেন, বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের ক্ষেত্রেও কাইয়ুম চৌধুরীর অবদানকে তার সঙ্গে তুলনা করলে বোধ করি অত্যুক্তি হবে না।

কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রশিল্পের সঙ্গে প্রচ্ছদশিল্পের তুলনা করলে দেখা যাবে, এতে পরস্পরের প্রভাব বিদ্যমান এবং তা উভয়ের মান ও গুণ বৃদ্ধিরও সহায়ক। যেমন প্রচ্ছদশিল্পের নকশাগুণ এসেছে তাঁর চিত্রশিল্পে আবার চিত্রশিল্পের চিত্রগুণ সমৃদ্ধ করেছে তাঁর প্রচ্ছদশিল্পকে। এখানে স্মরণীয় যে চিত্রশিল্পে অলংকারধর্মিতাকে দোষের মনে করা হলেও নকশাধর্মিতা আদরণীয়। এই নকশাধর্মিতাই তাঁর চিত্রে নৌকা ও চোখের ফর্মকে একাকার করে তুলে এক নতুন সৌন্দর্যের জন্ম দেয়। অবয়বের ভাঙচুরের মধ্যেও প্রবেশ করেন তিনি, প্রাণী ও প্রকৃতি জগতের নানা ফর্মকে দান করেন আদর্শায়িত রূপ, কোনোটাই হুবহু বাস্তবের প্রতিফলন নয় অথচ তাঁর চিত্রমালা বাস্তবধর্মী। এই যে বাস্তবতাকে বিপুলভাবে ভেঙেও চিত্রকে বাস্তবধর্মী রাখা, এটি তাঁর চিত্রশিল্পের বড় গুণ। আরেকটি গুণ হলো, দেশজ মাটির রূপ-রস-গন্ধ-রং দিয়ে চিত্রকে পরিপুষ্ট করে তোলা, লোকজ মোটিফকে চিত্রের অঙ্গীভূত করে তোলা। কামরুল হাসান যেমন সরাসরি শখের হাঁড়ির পাখির ফর্মকে তাঁর চিত্রের অঙ্গীভূত করে নতুন মাত্রা দিয়েছেন, কাইয়ুম চৌধুরী তেমনি জামদানি ও নকশি কাঁথার বৈচিত্র্যময় নকশা ও মোটিফ দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের চিত্রের জমিন। রেখা ব্যবহারের বৈচিত্র্যও তাঁর চিত্রশিল্পকে করেছে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। তাঁর প্রচ্ছদে ব্যবহৃত হস্তলিপির যে রেখা আর তাঁর ড্রইংয়ের যে রেখা—এই দুই রেখাই অত্যন্ত শক্তিমান, যা পরস্পরের পরিপূরক। এ দুইয়েরই প্রভাব আমরা লক্ষ করি তাঁর চিত্রশিল্পে। তাঁর রেখাচিত্রের বলিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়েছে এর ঋজুতা, বঙ্কিমতা, লতানো, ঢেউ খেলানো ও নৃত্যরত নানা ভঙ্গির মাধুর্যে; যা কখনো দৃঢ়, কখনো কোমল—কোমল কিন্তু শিথিল নয়। প্রতিটি রেখার ওপর শিল্পীর শতভাগ নিয়ন্ত্রণেই তা হয়ে ওঠে অর্থময়, প্রতীকী গুণসম্পন্ন, সর্বোপরি প্রাণবন্ত ও বাঙ্ময়। রং ব্যবহারেও লক্ষণীয় কাইয়ুম চৌধুরীর বিশিষ্টতা। বাংলাদেশের প্রকৃতিই যেন তাঁর মস্তিষ্ককোষে সব সময় এ ব্যাপারে উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এ কারণে মৌলিক রঙের ঔজ্জ্বল্যকে যেমন তিনি তাঁর কোনো কোনো চিত্রে অপরিহার্য করে তোলেন, তেমনি তা কখনো কখনো মিনিমাইজেশনের পথ ধরে অগ্রসর হয়ে লাভ করে নয়নসুখকরতা ও সৌকুমার্য।


স্ত্রী তাহেরা খানমের সঙ্গে কাইয়ুম চৌধুরী

স্মরণীয় যে কাইয়ুম চৌধুরীর সৃজনশীলতা শুধু প্রকাশনাশিল্প কিংবা চিত্রশিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। একসময় তিনি আলোকচিত্রের চর্চা করেছেন; আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন আলো-ছায়ার ব্যবহার, কম্পোজিশন ও নকশাগুণ সম্পর্কে। দ্বিতীয়ত উল্লেখযোগ্য, শিশুর প্রতি তাঁর সৃষ্টিশীল ভালোবাসার বিষয়টি। বাৎসল্য রসে সিক্ত একটি মন কীভাবে সৃজনশীলতায় রূপান্তরিত হয় তার প্রমাণ তাঁর তিনটি ছড়ার বই। প্রতিটি বই সৃষ্টির পেছনে রয়েছে একেকটি শিশুর প্রতি তাঁর গভীর স্নেহ-মমতার আখ্যান। তারপর জীবনের পড়ন্তবেলায় বিভিন্ন দেশভ্রমণসূত্রে তাঁর মধ্যে জাগ্রত হলো কাব্যানুভূতি। ভ্রমণের বিস্ময়কর আনন্দকে প্রকাশ করলেন কাব্যের ভাষায়। এভাবে সৃষ্টি হলো একগুচ্ছ ভালোবাসার কবিতা, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি একাকার। এ ছাড়া তিনি আত্মস্মৃতিমূলক, ব্যক্তিত্বের স্মৃতিচারণামূলক, শিল্পসমালোচনামূলক যেসব গদ্য রচনা করেছেন, তাতেও লক্ষণীয় তাঁর সৃজনশীলতা। তাঁর গদ্য যেমন সৃষ্টিশীল, তেমনি প্রসাদ গুণসম্পন্ন। আরেকটি একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ও প্রসঙ্গত স্মরণীয়; তা হলো: দাম্পত্যপ্রণয়। এই প্রণয়কে অব্যাহতভাবে মাধুর্যময় করে রাখার ক্ষেত্রে তাঁর দিক থেকে ছিল বিপুল সংযম ও ত্যাগ স্বীকারের সাধনা। এই সাধনাকে শিল্পে পরিণত করতে পেরেছিলেন বলেই, বিস্ময়কর হলো, অতি সংকীর্ণ একটি পরিসরের মধ্যে থেকে তাঁর পক্ষে সৃষ্টি-আনন্দের অজস্র তার মধ্যে আমৃত্যু নিমগ্ন থাকা সম্ভব হয়েছিল।

কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন আপাদমস্তক রুচিশীল ও সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ। সুন্দরের সৃষ্টিমুখরতায়ই অতিবাহিত হয়েছে তাঁর বিরাশিরও অধিক বয়সের জীবন। অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্লান্তিহীনভাবে সৃজনশীলতার মধ্যেই তিনি ছিলেন নিমজ্জিত। এরই মধ্যে নিজের শিল্পীজীবন নিয়ে, নিজের রচিত গদ্য নিয়ে, কবিতা নিয়ে, প্রচ্ছদশিল্প নিয়ে, তাঁর শিল্প বিষয়ে বিভিন্ন জনের লেখা নিয়ে বই প্রকাশের পরিকল্পনা তাঁর ছিল। জয়নুলের জন্মশতবর্ষকে কীভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলা যায় তা নিয়েও ছিল তাঁর নানা পরিকল্পনা। এসব পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি আমাকেও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করেছিলেন। তাঁর শিল্পীজীবনের বৈচিত্র্যময় অধ্যায় নিয়ে রচিত বইটির পাণ্ডুলিপি পাঠ করে তিনি চূড়ান্ত করে গিয়েছেন। এটি প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হবে। তাঁর শিল্পবিষয়ক মূল্যায়নধর্মী রচনার বইটির পাণ্ডুলিপিও তিনি আমাকে দিয়ে চূড়ান্ত করে গেছেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশের কথা রয়েছে এটি। কবিতা ও প্রচ্ছদবিষয়ক পাণ্ডুলিপি তিনি তৈরি করছিলেন। কাব্যগ্রন্থের একটি রোমান্টিক নাম নিয়েও তিনি ভেবেছিলেন। গত এক যুগেরও অধিককাল ধরে প্রতিবছরই তাঁর জন্মদিন পালিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে জন্মদিন উপলক্ষে প্রদর্শনী আয়োজনেরও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ৮৩তম জয়ন্তীতে একটি রেখাচিত্র প্রদর্শনী ও তা নিয়ে একটি বই প্রকাশেরও পরিকল্পনা ছিল। এসব পরিকল্পনা অসমাপ্ত রেখেই তিনি আকস্মিকভাবে বিদায় নিলেন। কেমন একটা শূন্যতার মধ্যে সবাইকে রেখে চলে গেলেন শুধু একা। সেই অসীম শূন্যতার মধ্যেই এই প্রথম তাঁর জন্মদিন পালিত হচ্ছে, যেখানে শুধু তিনি সশরীরে অনুপস্থিত।