Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

kamrul Hasan Masuk

১০ বছর আগে লিখেছেন

শাস্তি(গল্প প্রতিযোগীতা)

 

কিরে ললিতা তুই কি করছিস?
দেখছিস না, কাপড় সেলাই করছি।
তুই এখানে বসে কাপড় সেলাই করছিস। ঐ দিকে কি হয়েছে জানিস।
আমি জানব কি করে। বল কি হয়েছে।
সর্বনাশ কান্ড ঘটে গেছে।
কি ঘটেছে রে। তারাতারি বল।
তুই সুপার স্টার হয়ে গেছিস।
যাক বাবা। বাঁচা গেল। তুই এমনভাবে বলছিস না আমি ভেবেছিলাম কি জানি কি হয়েছে। তকে নিয়ে পারা গেল না। সহজ জিনিষগুলিরে কেন যে জটিল করিস। আমি কিছুই বুঝতে পারি না।
তর বোঝা লাগব না। আমার সাথে আয়। টিভিতে তকে দেখাচ্ছে।
আমাকে দেখাবে টিভিতে। টিভি ওলারা দুনিয়াতে আর মানুষ পাই নি।

সত্যিই ত। ব্যাপার কিরে। আমাকে টিভিতে দেখাবে কেন। আমি কি করেছি।
কি করেছিস কোন ব্যাপার না। টিভিতে দেখাচ্ছে এটাই বড় ব্যাপার। যাই সবাইকে বলে আছি।
এই শুন বেশি বাড়াবাড়ি করতে যাস না। হিতে বিপরীত হতে পারে। তুই এমনিতেই বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলিস। এবার যে তুই কি করিস না আল্লাহই জানে।
গ্রামে রটে গেল ললিতাকে টিভিতে দেখাচ্ছে। কেন দেখাচ্ছে কেউ সেই বিষয়ে খোঁজ নিল না। টিভিতে দেখাচ্ছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। গ্রাম থেকে পাশের গ্রাম। পাশের গ্রাম থেকে ইউনিয়ন। ইউনিয়ন থেকে থানা। সব জায়গায় ললিতার নাম। ললিতা মুহুর্তের মধ্যেই স্টার হয়ে গেল। সবার মুখে মুখে ললিতার নাম।

ললিতা বুঝতেই পারছে না কেন তাকে টিভিতে দেখাচ্ছে। সে কি করেছে। কারো কাছে বললে হেসেই উড়িয়ে দেয়। টিভিতে দেখাচ্ছে মানে বড় কোন সংবাদ।

ললিতাকে নিয়ে গ্রামের সবাই উৎসব উৎসব আমেজ করছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোক দেখতে আসছে। টিকেটের ব্যবস্থা করলেও এখন ললিতাকে দেখতে মানুষ আসবে।

মফস্বলের কিছু সাংবাদিক এসেও জড়ো হল। সাংবাদিকরা বিভিন্ন স্টাইলে ললিতার ছবি নিল। ললিতার সাক্ষাৎকার নিল।

ললিতা ভাবতেই পারছে না তাকে নিয়ে কেন এত মাতামাতি। লোকে যখন মাতামাতি করছে ললিতা বিষয়টা নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দিল। লোকের, গ্রামবাসীর, সাংবাদিকদের চাহিদামত বিভিন্ন সাক্ষাৎকার দিচ্ছে।

কয়েকদিনের মধ্যেই ললিতা জাতীয় দৈনিকগুলির প্রথম পাতায় শিরোনাম হয়ে গেল। সমগ্র দেশ ললিতাকে নিয়ে মাথাঘামাতে লাগল। কে এই ললিতা।

গ্রামে, ইউনিয়নে ললিতার একটা দল বের হয়ে গেল। দলটি ললিতার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত। ললিতার জন্য দল কেন হবে ললিতা বুঝতে পারল না। দলের সভাপতি করা হল ললিতাকে। ললিতাকে এখন ভাষন দিতে হবে। জনসভা করতে হবে। জনগণের পিছনে পিছনে খাঁটতে হবে। ললিতা সহজ সরল গ্রামের রমনি। এগুলি তাকে নিশ্চই মানায় না। তবুও জনগণের আবদার বলে কথা। তাদের আবদারের কাছে সবকিছুই হার মানতে হয়। ললিতা নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে।

সরকার থেকে ললিতাকে ধরার জন্য রেড এলার্ট জারি করা হয়। গ্রামবাসী জানতে পারে ললিতার বিরুদ্ধে কেন রেড এলার্ট জারি করা হয়। গ্রামবাসী ললিতাকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। ললিতা এসবের কিছুই জানে না।

আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আসলে গ্রামবাসী তাদের ঢুকতে বাধা দেয়। তাদের দিদিকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিবে না। জীবন দিবে তবুও দিদিকে তুলে দিবে না।

ললিতা হাসতে থাকে। সে আবার কবে দিদি হল। সবাই ললিতাকে এখন দিদি ডাকা শুরু করেছে। ললিতা হাসে আর কাঁথা সেলাই করে।

শীর্ষ সংবাদপত্রগুলি ললিতাকে রক্ষা করার জন্য যে মানুষজন দাঁড়িয়ে গেছে তা প্রচার করে। সরকার হার্ডলাইটে যায়। ললিতাকে ধরার জন্য জোর প্রয়োগ গ্রামে প্রবেশ করে।

ললিতাকে জেলে ধরে নিয়ে যায়। ললিতা বুঝতে পারে না। তাকে কেন জেলে নিয়ে যাচ্ছে। সে কি করেছে। পুলিশকে বললে তারা পাত্তা দেয় না। তারা বলে আমাদের কাছে ওয়ারেন্ট আছে। আমাদের আপনাকে ধরে নিয়ে যেতে হবে। আপনার দলের লোকদের বলেন চলে যেতে। না হলে আমরা গুলি করতে বাধ্য হব।

ললিতা বুঝতে পারে না। সে আবার কবে দল করল। তার আবার লোক কোথায় থেকে আসবে। সে লোকদের চলে যেতে বলে। লোকরা চলে যায়।

পুলিশের ভ্যানে এক মহিলা পুলিশ জিজ্ঞেস করে দিদি আপনি মেয়ে হয়ে এত বড় গডমাদার তৈরি করলেন কিভাবে। এ দেশের ইতিহাসে আপনিই সবচেয়ে বড় গডমাদার। যেই বোমগুলি ফুঁটিয়েছেন এগুলি গডফাদারের কাছেও থাকে না। আপনি দেখালেন বটে।

আপনি এগুলি কি বলছেন। আমি বোম ফুঁটাতে যাব কেন। আমি গ্রামের সাধারণ নিরিহ মহিলা।

দিদি, আপনাদের মুখে অনেক মধু থাকে। এই জন্যই আপনারা সন্ত্রাসী হলেও মানুষ আপনাদের সমর্থন করে। জন্মের সময় আপনারা মনে হয় বেশি মধু খেয়ে জন্মান। এমনভাব করেন কিছুই বুঝেন না। ঘটনাগুলি যখন ঘটান তখন সারা বিশ্ব দেখে। কি যে ভয়ংকর। বোমাগুলি ফুঁটে মানুষগুলি ছটফট করতে করতে মারা গেছে। কি যে ভয়াবহ দৃশ্য। আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না। আপনি এগুলি বুঝবেন না। আপনি যে গডমাদার।

পুলিশ আপা, শুনুন। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি এগুলির সাথে জড়িত না। আমি বোমা ফুঁটাব কোথায় থেকে। জীবনে কোনদিন বোমা দেখেনি।

আপনারা পারেন ও বটে। আমরা নরমাল পুলিশ। আমাদের কথায় কিছু যায় আসে না। আপনি আসলেই জিনিয়াস একটা চিজ। আপনিই পারবেন বড় বড় গ্যাংক তৈরি করতে। আপনার সাথে অনেক কথা বলে ফেললাম। আপনাকে বেশিদিন আটকিয়ে রাখতে পারবে না। সন্ত্রাসীদের বেশিদিন আটকিয়ে রাখা যায় না। যারা ভাল মানুষ তাদের বেশি দিন আটকে থাকতে হয়। বের হয়ে আমাকে কিছু করবেন না। আপনাকে নিয়ে অনেক কৌতুহল ছিল। তাই অনেক প্রশ্ন করলাম। ভুল হলে মাফ করে দিবেন।

ললিতা এবার বুঝতে পারে। তাকে বড় কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা হয়েছে। দেশে কোথায় যে একটা বোমা ফুঁটেছে এটা সে শুনেছিল। বোমাতে অনেক নিরীহ মানুষ মারা যায়। বোমাটি নাকি একটি মেয়ে ফুঁটিয়েছে। তার একটা দল আছে। এই প্রথম দেশে মহিলাগ্যাংক নামে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আতœপ্রকাশ ঘটেছে।

ললিতাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতন করা হয়। তার কাছ থেকে কোন তথ্য বের করতে পারে না। অবশেষে পুলিশ বুঝতে পারে এই ললিতা সেই ললিতা না। সেই ললিতা অনেক আগেই দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। ললিতার সাথে চেহারার মিল থাকার কারণে এই অবস্থা হয়েছে।

পুলিশ মূল ঘটনা জানার পরও ললিতাকে ছাড়ছে না। ললিতাকে ছাড়লে জনগণ ক্ষেপে যেতে পারে। আসল গডমাদার অনেক আগেই পালিয়ে গেছে। জনগণকে বুঝানোর জন্য ললিতাকেই ফাঁসানো হল।

জনগণ ললিতার ফাঁসি দাবি করল। বোমার আঘাতে এত মানুষ মারা গিয়েছিল যা বলার মত না। মানুষগুলি এত ভয়াবহভাবে মারা গেছে যা দেখলেই চোখে জল আসে। জনগণ রাস্তায় নেমে যায়। ললিতার ফাঁসি দাবি করে।

ললিতা দেখে নিজের গ্রামের জনগণও ফাঁসি দাবি করছে। তারা না বুঝেই ললিতার পক্ষ নিয়েছে। এখন তারা বুঝতে পারছে। এত বড় কাজ করে গ্রামে লুকিয়ে রয়েছে। তাকে অবশ্যই ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত। জনগণ কাউকে যেমন সহজেই আপন করতে পারে। আবার দূরে ও ঠেলে দিতে পারে।

ললিতাকে কঠিন শাস্তি দিবে ললিতা বুঝতে পারছে। দেশের জনগণও বুঝতে পারছে। সত্য ঘটনা শুধু ললিতা, পুলিশ এবং সরকার জানে। পুলিশের কিছু করার নেই। পুলিশ সরকারের দাশ। সরকারের ও কিছু করার নেই। সরকার জনগণের সেবক। জনগণ চাচ্ছে। সরকার সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে পারছে না। যদি করে তাহলে তাদের ইমেজ নষ্ট হয়ে যাবে। পরবর্তী নির্বাচনে সমস্যা হবে।

লালবাগ, ঢাকা।

Likes ১০ Comments
০ Share

Comments (10)

  • - মোকসেদুল ইসলাম

    ভাল লাগা জানাই কবি

    - মাসুম বাদল

    বাঁশি ফুলের গন্ধ শুকে, এইতো যাচ্ছে বেশ ।

     

    চমৎকার... 

    - ওয়াহিদ মামুন

    অনেক ভাল লাগা রইলো।

    Load more comments...