Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোঃ ইয়াসির ইরফান

৯ বছর আগে লিখেছেন

মা (আম্মা/আম্মু/মম/মাদার/আম্মি/মাম্মি)

 

মা

‘মা’ শব্দটা নাকি অতি মধুর । হয়তো স্নেহ-মায়া-ভালবাসার মৌচাক আছে বলে ! আমার জানামতে (আমার জানার পরিধি আহামরী কিছু নাই) বিশ্বে যতভাবে জননীকে সম্বোধন করা হয় । প্রায় সবটাতেই ‘ম’ বর্ণটা রয়েছে । এতে মমতাময়ীর ম’এর সাথে কোন সম্পর্ক আছে কি না জানি না । মা’ অতিশয় ক্ষুদ্রাকার এই কথাটির বিস্তৃতি-ব্যাপ্তি কতটা তা আমি তো কোন ছার, অনেক মহাপন্ডিত পর্যন্ত বুঝতে অক্ষম হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন । মায়ের মমত্ববোধ তারও চেয়ে বিশাল । স্নেহ-ভালবাসা কতটা তা বুঝার সাধ্য কারো নাই ।

 সন্তান হৃষ্টপুষ্ট নাদুস-নুদুস সত্বেও হায় হায় করে যিনি বলে উঠেন, “আমার বাচ্চাটা না কিছুই খায় না” তিনিই মা । প্রতিটি শ্বাসের মত যিনি কল্যান কামনায় সদা লিপ্ত থাকেন তিনিই মা । আমাদের আবেগ-অনুভূতি, আবদার, ভরসা-ভালবাসা সমস্ত কিছুর ছায়াতল-ই ‘মা’ ।

 প্রত্যেক মায়ের কাছেই তার সন্তানই শ্রেষ্ঠ । তার মত মহান পুত্র (আমার মত একটা নিম্ম স্তরের গাধাকেও  যদি কোন মা এই চোখে দেখেন !) ধরনীতে দ্বিতীয়টি কোনদিন জন্ম নেয়নি ভবিষ্যতে নেবে না । তবে প্রত্যেক সন্তানের কাছে তার ‘মা’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা হয় না । সন্তানরা বড়ই অকৃতজ্ঞ প্রজাতি !

 

মা দিবস

মা দিবসের সৃষ্টি তাদেরই জন্য, যারা ছেলে-মেয়ে adult হলে বলে- “বাপু, এবার নিজেই নিজের রাস্তা দ্যাখো” । কিংবা সহজ কথায় বলা চলে সন্তান থেকে আলাদা হয়ে যায় বা করে দেয় । অবশ্য সেসব দেশে সন্তানরাও নিজের পায়ে দাঁড়াবে বলে মায়ের স্নেহতল থেকে মুক্তি চায় ।

আমরা তো তেমন না । আমাদের দেশে মায়েরা বলে, “সন্তান যত বড় হোক না কেন মায়ের কাছে সেই ছোট্টটি রয়ে যায়” । ‘বাবুসোনা’, ‘খোকনসোনা’, ‘খোকা’ ইত্যাদি নামগুলোই তার সত্যতা বহন করে । আর আমরা সন্তানরাও মায়ের সেই মমতামাখা হাতের স্পর্শ থেকে সহজে মুক্তি চাই না । মাথায় একটুখানি মায়ের ছোঁয়া, দরদমাখা মায়ের কথা এইসব অমূল্য’র লোভ ছাড়তে মন চায় না ।  

তাই বলে আমাদের দেশে ‘মা দিবসে’র কোন কার্যকারীতা কি নাই ? একদম নাই বলা হয়তো ঠিক হবে না । ব্যস্ত পৃথিবীতে আমাদের বড্ড ছুটাছুটি । সেখানে একটা দিন যদি মা’কে আলাদা করে দেখার সুযোগ হয়, তাতে মন্দ কি !   

 

পাষন্ড সন্তান

 নচিকেতা’র বৃদ্ধাশ্রম গানটা চোখের জল আনতে বাধ্য । এই গানটা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, পশ্চিমাদের অনেক ‘কু’ গ্রহন করার মধ্য কবে যেন বৃদ্ধাশ্রম সংস্কৃতিও নিয়ে ফেলেছি । যেটা আমাদের কৃষ্টি-সংষ্কৃতি, সমাজ-ধর্ম কোনটাই সমর্থন করে না ।

 অনেক সময় আমরা এতটাই পাষন্ড হই যে, চিকিতসার নামে মা’কে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাই । কখনো বা ডাষ্টবিনে মায়েরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে । মা’কে দিয়ে ঝিঁয়ের কাজ করানো কখনো বা সরাসরি ঘর থেকে বের করে দেয়া তো আছেই । আরো কত কি যে করি ! কতটা  নীচে নামছি আমরা তা কেউ বলতে পারবে না ! 

জীবন জুড়েই তো তিনি

আমাদের জীবনের শুরু থেকে শেষ, সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত মা, মা, আর মা । জন্মের পর মায়ের ভাষায় কথা বলা দিয়ে সেই যে শুরু মৃত্যু পর্যন্ত ‘মা’ হীন জগত কল্পনা করা যায় না । জীবনের পরতে পরতে ‘মা’ আছেন । একেক সময় একেক রুপে । কখনো শাসনে, কখনো স্নেহে, কখনো স্বপ্নে, কখনো জাগরনে । আমরা অতীব দূর্বল বলে সেটা বুঝতে পারি না । ভয়-আতংকে যখন ‘মাগো’ চিতকার বেরিয়ে আসে, তখন মনে থাকে না বয়স-কাল । ‘মা’ কাছে, না দূরে ।

যে মা দশমাস দশদিন পেটে ধরে আমাদের পৃথিবীর আলো দেখায় আমরা তাকে বুঝার চেষ্টা কি কখনো করেছি ? -করি নাই । যে ওজন তিনি ধারণ করেন তার দশভাগের একভাগও যদি মাত্র দশদিনের জন্য আমাদের ধারণ করতে বলা হয়নিঃসন্দেহে আমরা শতভাগ ব্যর্থ হওয়ার যোগ্যতা রাখি । 

 

অতুলনীয়া

 ‘মা’ তো অতুলনীয়া-ই । মায়ের তুল্য এই ধূলির ধরায় কিছু ছিলও না থাকবেও না । হায় ! আমরা অধিকাংশ-ই সেটা বুঝি না । একমাত্র বাংলা সিনেমার নায়কদের দেখেছি মায়ের জন্য জীবন কুরবান করে দেয়া তো আছেই, মায়ের ডাকে মৃত্যু থেকে ফিরে পর্যন্ত এসেছে । জানি না, তাঁরা বাস্তবে কেমন !

পৃথিবীর সকল ধর্মে, সব সমাজে, বড় বিজ্ঞজনেরা জননী সম্প্রদায়টিকে দিয়েছেন সবচেয়ে উঁচুতম স্থান । কিন্তু আমরা আমাদের সুবিধার্থে সেই স্থান থেকে জন্মধাত্রীকে বারবার টলিয়ে দিয়েছি । “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত” কিংবা “মা তিনবার বাবা একবার” হাদীসের এই বাণীগুলো আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত । অথবা “মাতার গৃহ মন্দিরের মত পবিত্র” ইত্যাদি মত বাক্য আমরা জানি তবে মানি না । কারন, মানলে আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হয় । আর আমরা তো নরাধম সন্তান । তাই, ত্যাগ স্বীকারে রাজি নই ।

 নেপোলিয়নের অমর বাণী “তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব” । এগুলা আমরা ভাব-সম্প্রসারন পড়েছি । তবে মূল-ভাব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি বা ব্যর্থ হওয়ার ভান করেছি । তাই, আমরা মায়ের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত নির্লজ্জের মত গ্রহন করে যাই । বিনিময়ে দান করি চোখের জল অথবা দীর্ঘশ্বাস ।

 

যেখানে সদা নিষ্পাপ

 প্রতিটা সন্তান মাত্রই জানে, একটা জায়গায় সে সদা নিষ্কলুষ সদা নিষ্পাপ । আর সেই স্থানটা হলো মা । মায়ের চোখে সন্তান কখনোই অপবিত্র বা দোষী সাব্যস্ত হয় না । মায়ের একটু ‘উহ’ উচ্চারণ, অভিশাপের এক ফোটা জলই যথেষ্ট সন্তানের সাজানো জগত লণ্ডভণ্ড-চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে ।

 কিন্তু সতত শুভকামী মাতা সেটা করতে পারেন না । অসীম কষ্ট সয়েও সতর্ক থাকেন, যেন তার কোন ব্যাথা স্রষ্টা পর্যন্ত না-পৌছায় । আমরা সন্তানেরা যত কিছুই করি না কেন, সব নিমেষে ভুলে বুকে টেনে নিতে পারেন একমাত্র মা-ই ।

 আর আমরা পাপীষ্ঠারা কিভাবে যেন সেটা জেনে বসেছি । ব্যস, এবার মায়ের সাথে ইচ্ছেমত দূর্ব্যবহারে কোন সংকোচ তো দূরের কথা ভীত পর্যন্ত হই না ।  

 হায় ! আমাদের পোড়া কপাল । আমরা সবচেয়ে নিকটজন, সর্বোচ্চ কল্যানকামী মানুষটাকে চিনতে পারি না । আমরা বড়ই অভাগা ।

 

আমার মা

 ম্যাক্সিম গোর্কি’র ‘মা’ উপন্যাসে একটা কথা আছে, “মা-ছেলেতে মনের মিল হওয়ার মতো সুখ খুব কমই জোটে” । কথাটা কিন্তু খাঁটি সত্যি ।  আমাদের মধ্য মনের মিল কতটা জানি না । তবে মতের মিল হলে এক অদ্ভুত আনন্দ ঘিরে ধরে । সেই তৃপ্তি বোঝানোর সাধ্য আমার নাই । 

 আমার আম্মুর জন্য কখনো কিছু করেছি বলে মনে পড়ে না । না-করলে মনে পড়ে কিভাবে ! ঘরভর্তি মেহমান, ঘর্মাক্ত আম্মুর ছুটাছুটি দেখেছি । কিন্তু পাশে গিয়ে জিজ্ঞাস করি নাই, ‘আম্মু কিছু করে দেব কি না’ । বড় বড় কথা বলে আঘাত ছাড়া আর কিছু দেয়ার যোগ্যতাই তো নাই ।  

 “মা-নাই গৃহে যার সংসার অরণ্য তার” কথাটির স্বার্থকতা বুঝেছি কিছুদিন আগে । আম্মু নানুর বাড়ী গেলে পুরা ঘরটাই কেমন জানি ফাঁকা লাগে । মাথাধরা নিয়ে শুয়ে আছি । অথচ একটা কোমল হাতের স্পর্শ পাই না । এই গরমে চাদর গাঁয়ে শুয়ে থাকলেও কেউ জিজ্ঞাস করল না, ‘জ্বর জ্ব্বর লাগছে কি না’ ! অথচ গৃহের অন্য সব সদস্য তো ছিলেনই । এসব ছোট ছোট জিনিস কারো চোখে লাগে না, মা ছাড়া ।

 লাট-সাহেবের মত বসে থাকি । খাবার রেডি হলে আম্মু ডাকেন । বই পড়ছি, মুভি দেখছি, টিভি দেখছি, fb-তে আছি । সব আজাইরা কাজ নিয়ে পড়ে থাকি । একবারও মনে হয় না একটু আম্মুর পাশে গিয়ে দাঁড়াই । আম্মু কি করছেন একটু দেখে আসি । অথচ তার সজাগ দৃষ্টি ঠিকই আমার উপর আছে ।

 এই জন্যেই তিনি মমতাময়ী ‘মা’ আর আমি নরাধম সন্তান ।

 

পরিশেষে        

 ক্ষমা চেয়ে মায়েদের ছোট করার দুঃসাহস আমার নাই । শুধু চরণযুগলে একটাই মিনতি রাখতে চাই, ‘মাগো প্রার্থনা করো যেন আমাদের একটু সুমতি হয় । একটূ সুবুদ্ধি হয় । তোমার অবহেলা-অবমূল্যায়ন করার আগে যেন বিবেকটাকে একটু জাগাতে পারি’ ।  

 মা, I miss you অথবা I love you বলেই আমরা খালাস । আমি মাকে মিস করার আগে আমাদের এটা বুঝা দরকার মা আমাকে মিস করছেন । সুতরাং আমার তার পাশে থাকা উচিত ।

 মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের কাজে একটু হাত লাগানো কিংবা জড়িয়ে ধরে দু’চারটি হাস্যরস করলে মুখ ফুটে বলতে হয় না, “মা তোমাকে ভালোবাসি” । মায়ের ব্যাথা আমার বুকে চিনচিনে অনুভূতির জন্ম দিলে ভালবাসাটা আপনাতেই প্রকাশিত হয় । 

 আনুষ্ঠানিক বা লৌকিকতার রুপ ছাড়িয়ে আন্তরিক ভালবাসায় সিক্ত হোক আমাদের মায়েরা । দিবসে’র গন্ডী পেরিয়ে সারা বছর ভাল থাকুক মমতাময়ীরা ।

 

 _____###_____

 

 

Likes Comments
০ Share