Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

‘বাংলার সক্রেটিস’ হুমায়ুন আজাদ স্যারকে কেন হত্যা করা হয়েছে




‘বাংলার সক্রেটিস’ হুমায়ুন আজাদ স্যারকে কেন হত্যা করা হয়েছে
সাইয়িদ রফিকুল হক

(গত ১১ই আগস্ট ছিল ড. হুমায়ুন আজাদ স্যারের ১৩তম মহাপ্রয়াণ-দিবস। স্যারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিস্বরূপ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো।)

এই দেশে মানুষহত্যাকারী, একাত্তরের রাজাকার, নব্যরাজাকার, দালাল, লম্পট, ভণ্ড, শয়তান, দেশদ্রোহী আর তোষামোদকারী-নরপশুগুলো সহজে মরে না। আর শকুনগুলো তো বেঁচে থাকে অনন্তকাল। আর এদের ভাবসাব দেখে মনে হয়: শকুনগুলো যেন কোনোদিনও মরবে না। কিন্তু হুমায়ুন আজাদরা মরে যান। হুমায়ুন আজাদ স্যারের মতো মানুষেরা বাঁচতে পারেন না। আর তাঁদের বাঁচতে দেওয়া হয় না। আর তাঁদের মেরে ফেলা হয়। কিন্তু কেন?

হুমায়ুন আজাদ স্যারকে কেন বাঁচতে দেওয়া হয়নি—তার কারণগুলো এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো (হুমায়ুন আজাদ স্যারকে কেন হত্যা করা হয়েছে):

১. ডক্টর হুমায়ুন আজাদ স্যার সদাসর্বদা সত্যকথা বলতেন। আর এই সত্যগুলো ছিল ভীষণ তেজী আর খুব কঠিন। তাঁর বলা সত্যসমূহ অনেকের পক্ষে সহ্য করা কঠিন ছিল। আর তাতেই তাদের আঁতে ঘা লেগেছে।
২. তিনি ছিলেন বাস্তববাদী আর যুক্তিমনস্ক ব্যক্তিত্ব। তাঁর কাছে সবসময় প্রাধান্য পেতো: ‘জোরের যুক্তি নয়—যুক্তির জোর’। আর তাঁর যুক্তিগুলো ছিল অকাট্য-প্রমাণসাপেক্ষ—আর তা বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে প্রমাণিত। তাই, ভণ্ডগুলো তাঁর চিরসত্য ও শাণিত যুক্তির ভয়ে ছিল সর্বদা তটস্থ। আর সর্বস্তরের ভণ্ডরা ছিল তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।
৩. তিনি ছিলেন সক্রেটিসের মতো যুক্তিবাদী-দার্শনিক। তাঁর সঙ্গে যুক্তিতে অনেকেই এঁটে উঠতে না পেরে তাঁর বিরুদ্ধে ভয়ানক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। মহান সক্রেটিসের বিরুদ্ধে তৎকালীন সামন্তপ্রভু ও অকর্মণ্য-রাজন্যবর্গ যে-ভাবে ধর্মঅবমাননার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ-আনয়ন করেছিলো, ঠিক একইভাবে এই বাংলার সর্বস্তরের ধর্মব্যবসায়ী-ভণ্ডশ্রেণী তাঁকে (হুমায়ুন আজাদ স্যারকে) ‘নাস্তিক’ বলে সম্বোধন করতে লজ্জাবোধ করেনি। এমনকি তাঁর ধারালো সত্য-চাবুক সহ্য করতে না পেরে তাঁর অনেক কলিগও ভণ্ডদের দলে মিশে গিয়েছিলো। আর এখনও তারা সেখানেই মিশে আছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগে কত নামধারী-শিক্ষক আছে! আর কত তাদের পদোন্নতি আর প্রমোশন! কিন্তু এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন হুমায়ুন আজাদ স্যার নাই। যে প্রতিক্রিয়াশীল শয়তানচক্র সক্রেটিসকে হেমলক-বিষপানে হত্যা করেছিলো—সেই একই শয়তানচক্রের উত্তরপুরুষগণ জার্মানীর নির্জন-হোটেলকক্ষে হুমায়ুন আজাদ স্যারকে হত্যা করেছে।
৪. হুমায়ুন আজাদ স্যার শুধু একজন প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যিকই নন—তিনি একজন উঁচুস্তরের দার্শনিক ছিলেন। আর যেকোনো ঘুণেধরা-সমাজ, পতিত-গলিত-পাষণ্ডশ্রেণী এধরনের উঁচুস্তরের সমাজস্বীকৃত-দার্শনিকদের সহ্য করতে পারে না। এই দেশে দালালি করে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হওয়া যায়। দালালির মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি হওয়া যায়। কিন্তু নিজ-যোগ্যতায় একজন ডক্টর হুমায়ুন আজাদ হওয়া যায় না। তাই, এই দেশের সর্বস্তরের দালালরা তাঁর উপর নাখোশ ছিল। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে চিহ্নিত-প্রতিক্রিয়াশীলচক্র।
৫. হুমায়ুন আজাদ স্যার ছিলেন সত্যিকারের আপসহীন মানুষ। তাঁর মেরুদণ্ড শক্ত ও মজবুত ছিল। তাই, এই সমাজের ধার্মিক-নামধারী-অধার্মিক ও ভণ্ডশ্রেণীটি সবসময় তাঁর পিছনে লেগে ছিল। এরা যুক্তিকে সবসময় ভয় পায়। এরা হত্যার মাধ্যমে যুক্তিবাদী-মানুষগুলোকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চায়। এরা মানুষের কণ্ঠস্বরকে ভয় পায়। এরা শয়তানকে ভালোবাসে। এরা তাই মনের আনন্দে মানুষকে হত্যা করে। আর মানুষের রক্ত দেখে উল্লসিত হয় এইসব পশু।
৬. বাঙালির একটি অংশ মুখে-মুখে শুধু সত্যকে ভালোবাসে। আসলে, মিথ্যাই এদের পরম পূজ্য। আর মিথ্যাই এদের প্রধান খাদ্য। এই শয়তান ও ভণ্ডশ্রেণীটিই হুমায়ুন আজাদের মতো ক্ষণজন্মা মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে সামান্যতম বিচলিত হয়নি।
৭. হুমায়ুন আজাদ স্যারকে জার্মানীর নির্জন-হোটেলকক্ষে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। দেশে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যামিশন ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে ‘উচ্চতর-বৃত্তি’ দেওয়ার নাম করে জার্মানী নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানেই তাঁর উপরে হামলাকারী—২০০৪ সালের ২৭-এ ফেব্রুআরির আঘাতকারী সেই একইগোষ্ঠী—একাত্তরের পরাজিত-ধর্মব্যবসায়ীচক্র তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কারণ, তিনি সবসময় সত্য বলতেন। আর তিনি সত্য বলতে ভালোবাসতেন।

তিনি ছিলেন এই বাংলার সক্রেটিস। আর এমন একজন নীতিবান-মানুষ এই সমাজে বেঁচে থাকবেন কীভাবে? এখানে, ভণ্ডের তাণ্ডব! আর শুধু ভণ্ডের ছড়াছড়ি। তাই, আজও তাঁর হত্যাকারীদের কোনো শাস্তি হয়নি!


[আজ আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ‘বাংলার সক্রেটিস’ হুমায়ুন আজাদ স্যারের ১৩তম মহাপ্রয়াণ-দিবস। তিনি বেঁচে আছেন। আর তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল। জয়তু হুমায়ুন আজাদ স্যার।]


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১১/০৮/২০১৬
১ Likes ০ Comments ০ Share ৩১২ Views