Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

‘এক আকাশ নক্ষত্রের নিচে এক ঝাঁক জোনাক’

ভাইয়া, এই মালাটা কয়টা লাগবে আমার বেনী জড়াতে?

২টা নেন।

২টা? আমার তো আরও বড় লাগবে।

সেট করে দিচ্ছি, আপু। কোনটা নেবেন বলেন।

এটা। কত করে?

পঁয়ত্রিশ করে দুটা সত্তুর।

ত্রিশ করে দুটা ষাট রাখেন।

না আপু, আজকে কোন দামাদামী নাই। স্পেশাল দিন একটা।

তা অবশ্য। আজকে দামাদামী হবার নয়!

জ্বী আপু।

আচ্ছা! আপনি একটু সরুন। গ্লাসের সামনে গিয়ে আমি এটা চুলে পেঁচিয়ে নিচ্ছি।

এই সর, আপুকে জায়গা করে দে। নেন আপু, এখানে দাঁড়িয়ে বাঁধুন।

....ফুলওয়ালা দুটি মাঝারী মালাকে একটার সাথে আরেকটাকে মালার কোনার সুতলী দিয়ে জোড়া লাগিয়ে বেশ লম্বা বানিয়ে দিলো। আমি ওটার মাঝের অংশে বাম হাতে ধরে ডান হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে সেফটিপিন আর কালো চুলের ক্লিপ বের করে চুলে লাগাতে গিয়ে দেখি ঠিকমত পারছিনা। ব্লাউজের হাতা এত টাইট! হাতই উঁচু হচ্ছে না সুবিধামত। পাশেই সোফায় দেখি একজন আপু বসে। তার সোফার হাতলের উপরে স্বচ্ছ পলিথিন পেপারে মোড়ানো বক্সে করে নানান রঙিন ফুল। ‘সে কি এখানে থেকে বিয়ে বাড়ি যাবে?’ তাকে নিরিবিলি বসে থাকতে দেখে মুহুর্তের মধ্যে বলে বসলাম-‘এই আপি, একটু বেনীতে ফুলটা গেথে দেবেন?’ চিনি না জানি না। তাই আমার অনুরোধ শুনে সে খানিকটা অবাক! আমি বলেছি সেফটিপিন দিয়ে সে আমার বেনীর শুরুর জায়গাটায় মালার একটা অংশ আটকে দেবে। আর আমি বাকিটা নিজেই পেঁচিয়ে নেবো। তার পাশের সোফাটায় বসতেই মেয়েটা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার পুরো বেনীতে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সেট করে দিলো। কালো ক্লিপ দুটো দিয়ে চুলের আগায় মালার সাথে আটকে দিলো। তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আমি ঊঠলাম। ফুলওয়ালার গাঁদা ফুলের মালার দাম মিটিয়ে ব্যাগের চেইন লাগালাম। এর মধ্যে মেয়েটা মুখ ভার করে বলছে- ‘গেলো এবার আমার ফাল্গুনটা!’ জিজ্ঞেস করলাম-‘কেন আপি?’ শুকনো মুখে জবাব দিলো- ‘আজ আমার গায়ে হলুদ!’ আমি ‘ওয়াও! এ এক অন্যরকম আভা! আনন্দ!’ বলে ঘুরে হাঁটা দিলাম। রিকশায় উঠবো। এক পলকেই মনে পরলো-মেয়েটাকে অভিনন্দন জানানো হয়নি। মেয়েটিও এ সময় দোকান থেকে বেরিয়ে এসেছে! কাছাকাছি আসতেই বলে উঠলাম- ‘ওহ আপু, কংগ্রাটস!’ খুশীর হাসি নয় মেয়েটা তখনো বেজার! তবু থ্যাংক্স জানালো। আমি আলগোছে রিকশায় উঠে পরলাম।

কাঁটাবন ফুলের দোকান ছাড়িয়ে রিকশা চলতে শুরু করেছে। ব্যাগ থেকে মুঠোফোনটা বের করে জিরো ওয়ান সেভেন ফোর...সেভেন জিরো নাম্বারে কল দিলাম। কোন রিং বাজে না, নাকি আমিই কানে শুনি না... নাহ! ফোন রিসিভ হয়ে গেছে;-

হ্যালো! হ্যাঁ, বন্ধু ক! (শম্পা কথা বলে উঠেছে)

হ্যাঁ, দোস্ত তুই কি স্কুলে? (আমি)

না দোস্ত, আজকে তো সাপ্তাহিক ছুটি। ভুইলা গ্যাছো? (শম্পা)

না ভুলি নাই। তুমি বললা, স্কুলে কয়দিন প্রোগ্রাম আছে! (আমি)

না, দোস্ত আজকে বাসায়। (শম্পা)

তাহলে চলে আয়। এখন মাত্র তিনটা বাজে! আজকে তোর জন্যে মেলার শেষ সময় পর্যন্ত থাকবো। শাড়ির সাথে ম্যাচ করে গাঁদা ফুলের গাজরা পরেছি, এসে দেখে যা! (আমি)

আচ্ছা, দেখি আম্মা ভাবীরা যাইবো কিনা! আজকে যা ভিড়! পোলাপান সাথে নিয়া বেড়ানো যাইবো না তো! (শম্পা)

আরে একদিন হুলুস্থুল করে হঠাত বাইরে বেরোনোর মজা আছে। চলে আয়! (আমি)

আম্মার সাথে কথা বল। (শম্পা)

হ্যালো, খালাম্মা, স্লামালেকুম। আজকে সবাই মিলে চলে আসেন বইমেলায়। (গদগদ উচ্ছ্বাসিত কন্ঠস্বর আমার)

...এর পরে কয়েক মিনিট কথা হলো আমার বেস্ট বান্ধবী শম্পার মায়ের সাথে। ভদ্রমহিলা নিজেও বয়সী হলেও বই মেলা, পিঠা মেলা, বৈশাখী মেলাটেলা কোন জায়গাই বাদ দেন না। ঘুরে বেড়ান নাতি নাতনীদের সহ। শম্পার মাত্র স্কুলে ভর্তি করানো বছর চারেকের মেয়েটাকে নিয়ে শম্পার বদলে ওর মা মানে, পিচ্চির নানীই বেশি ঘুরে বেড়ায়। আর শম্পা সপ্তাহে ৫দিন স্কুলে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে টিয়ে সাপ্তাহিক ছুটি দু’টো দিন একেবারে অস্থির থাকে। আরাম করে আর মেয়ের সান্নিধ্যে থাকতে চেষ্টা করে। আর এরকম হুট করে চলে আসতে বললেও মতিঝিল থেকে বাস ধরে চলে আসা সম্ভব না তাও জানি। তবু বন্ধুর আড্ডা বলে কথা। এবার ফাল্গুন আর ভ্যালেনটাইন দু’টোই ওর বন্ধের দিনে পরলো। তাহলে তো ওকে এই দুদিন আমার পাখি হয়ে যাওয়া রূপ দেখানো হয়ে উঠবে না। বাকি বারো মাসের বাকি সব দিনে তো আমি থাকি ফ্যাশন থেকে দূরে; মৌলবী স্টাইলে। তাই এত ডাকাডাকি!

রিকশা প্রায় উড়িয়ে নিয়ে চললো। নীলক্ষেত হয়ে বামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। রাস্তার ধার ঘেঁষে সবার ললনাদের শাড়ির রং খেয়াল করে চলেছি আমি। নিজেরটা সে তুলনায় কেমন হলো সেটাও পলকে পলকে মিলিয়ে নিচ্ছি। বইমেলায় গিয়ে কি কি ঢং ঢাং হবে সেটাও গুছিয়ে নিচ্ছে মন। রোকেয়া হল ছাড়িয়ে উড়ে চলে এলো রিকশাটা টিএসসি। আমি রিকশায় উঠবার সময় বলে নিয়েছিলাম-টিএসসি! সেই পর্যন্ত এসে রিকশাওয়ালাকে বললাম-‘ভাই, আপনি ঐ মুর্তির পেছনে গিয়ে রাখেন।’

রিকশাওয়ালা না জানি বলে ফেলে এই পর্যন্তই যাত্রা। না কিছু না বলাতে বেঁচে গেলাম। শাড়ি টারি পরে বেশি হাঁটা কষ্ট। আমি জায়গামত পৌঁছে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে হাঁটা ধরলাম। হেঁটে চলেছি বাংলা একাডেমীর দিকে। পথ চলতি লোকজনের কেউ কেউ আমাকে ফলো করছে। আমি কাউকে কাউকে লক্ষ্য করছি। এভাবে চলছি। কিছুটা যেতেই দেখি অভিনেতা তৌকির আহমেদ আরও ২-৩ জন লোকের সাথে আমার যাত্রা পথের উল্টোদিকে হেঁটে আসছেন। মুখ দিয়ে প্রায় বেরিয়েই আসছিলো-‘হায়! তৌকির আহমেদ!’ ইদানিং যা বেশি কথা বলছি! তার স্রোতে একজন সেলিব্রেটির সাথেও এরকম সুরের কথা বেরিয়ে আসতেই পারে! আমিও সেলিব্রিটি হয়ে উঠবো হয়তো আরও কয়েক বছর পরেই!!! (হেহে! ইদানিং একটু বই টইয়ে নাম তো দেখছি! সেলিব্রিটি হতে আর দেরী কোথায়!)

লিটল ম্যাগ চত্বরে পেছন থেকে গিয়ে আমাদের সাদাকাগজ স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি নীল দা বসে আছে। সামনে দাঁড়িয়ে এস এম পাশা ভাই। নীল দা তো তাকিয়ে বলেই উঠলেন-‘আরে যূথীইইই! এ দেখি, আমাদের যূথীইইই! চেনাই যাচ্ছে না!’ চিনবে কি করে সবসময় মাথা প্যাকেটে মোড়ানো থাকে যে! হিজাব! তাতে চেহারা অনেকটাই ঢেকে যায় যে! এর মধ্যেই কোত্থেকে যেন শিমুল ভাবী (মিসেস নীল) এসে হাজির। আমি স্টলের সামনে দাঁড়ানো অথচ কোন দিক দিয়ে ভাবী এসেছেন টের পাইনি একটুও। হলুদ পরীর মতন উড়ে মর্তে নেমেছেন বোধহয়। পড়েছেন দারুন একটা হলদে সালোয়ার কামিজ; সাদার ছোয়াও আছে। চুলগুল শ্যাম্পু করা উড়ছে দুরন্ত। দারুন লাগছে ওনাকে। আমি হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত। তাছাড়া ভাইয়া স্টলে বসে থাকবেন আর বউ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে তা কি করে হয়। বললাম-‘নীল দা, খানিক ঘুরে আসেন ভাবীকে নিয়ে, আমি একটু বসি!’ এরপরে ভাবীর সাথে বেশ কিছু ছবি তুলা হলো।

আমি স্টলে গিয়ে বসতে না বসতেই দেখি ভাবী আর নীল’দা দুজনে কোথাও হারিয়ে গেলেন। এর মধ্যে এলেন মেজদা। পাশের চেয়ারে আসন নিলেন। এরপরে যেন হিড়িক লেগে গেলো। এক দল আসছে। যাচ্ছে। কাউকে চিনি। কাউকে চিনি না।

শিহাব আসার কথা ছিলো মেলায়। ও তো ফটোগ্রাফার! ক্যামেরাটা নিয়ে আসলে ভালোই হবে। ভাবতে ভাবতেই স্টলের চেয়ারে বসে ডান দিকে তাকিয়ে দেখি-শিহাব হেঁটে আসছে আমাদের স্টলের দিকে। তবে তখনো বোধহয় আমাদের সাদাকাগজ স্টলটা চিনে না। আমি তো ওকে দেখতে পেয়েই-‘এই কিরে? এদিকে আয়!” বলে হাত নেড়ে চঞ্চলা ডাক ছেড়েছি।

‘আপনি আমাকে একটু দেখেই চিনে ফেললেন? এই প্রথম দেখা!’ (শিহাব অবাক!)

হু! এমনই তো হয়! ফাতিন আরফি, কবি বন্ধু এসে স্টলে নিজের বই টা খুজছিলো একদিন। আমাকে স্টলের চেয়ারে বসা খেয়ালই করেনি। আমি বলে উঠলাম-‘এই আপনি ফাতিন না?’ উনিও আমার দিকে তখন তাকিয়েছেন- বলে উঠেছেন-আরে যূথী আপু! বলে মিষ্টি লাজুক হাসি! (আমি)

মেজদা’র অনুমতি নিয়ে আমি স্টল থেকে বেরিয়ে পরলাম। যাই একটু ঘুরে আসি শিহাবকে সাথে নিয়ে। স্টলে বসা থেকে শুরু করে স্টল থেকে বের হয়ে ওর মাথা খেয়ে ফেলেছি বারে বারে আমার ফটোশুট করার জন্য। ফটোগ্রাফার সাথে থাকবে আর আমি ছবি তুলাবো না! তা কি করে হয়? এরকম সুযোগ কি কেউ ছাড়ে? শিহাবকে সাথে নিয়ে সোহরাওয়ার্দি ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে সোহেল মাহরুফ (শিশু সাহিত্যিক বন্ধু) এর সাথে দেখা। খানিক কথা বলেই আবার হাঁটাহাঁটি। অন্যপ্রকাশ থেকে সেরা গল্প ও কবিতা-৩ বইটা কিনে খানিক বেরু বেরু করে আমরা পুনরায় বাংলা একাডেমী ফিরে এলে শিহাব আমাকে স্টলে রেখে সরে গেলো।

এরপরে এলো নাজনীন পলি’র ডাক্তার ননদ আরও দুই বান্ধবী অথবা কলিগ সাথে করে। এসেই আমাকে হিজাব ছাড়া দেখে শাড়ি ফুলে জড়ানো দেখে-‘আরেএএএ যূথী আপুউউউউ, আমি তো দেখে একদম চিনি নাই, এটা কেএএএ!!! কি সুন্দর লাগছেএএএ!’ আমি বললাম- ‘হুউউউউ তুমি আসবা বলে সুন্দর হয়ে গেছি!’ ননদিনি কলকল হাসিতে ঝলমলে কন্ঠে সুরে ছড়িয়ে বলে উঠলো-‘আমাদের ভাবীর মতই এত সুন্দর চাপা ছাড়তে পারেন!’ ‘আসুন আপু, একসাথে সবাই ছবি তুলে মারয়েশিয়ায় ভাবীকে পাঠাবো হিংসা ছড়াতে!’ বেশ চললো কিছুক্ষণ এই দল ঐ দল ফটোশুট।

এক ফাঁকে কে যেন চিকেন ফ্রাই খাওয়ালো। কি উপলক্ষ্যে এই খাওয়াদাওয়া জিজ্ঞেস করতেই একসাথে দুজন জবাব দিলো। নীল দা বলে উঠেছেন-‘আজ বসন্ত, তাই!’ আর পাশা ভাই বলে উঠলেন-‘এখন খেয়ে যান। বাসায় গিয়ে ব্লগে জিজ্ঞেস করবেন, তখন জানা যাবে!’ আমি ফাক দিয়ে পাশা ভাইকে বলে উঠলাম, ‘ভাইয়া আপনার তথ্য জানার আগেই তথ্য ফাঁস! ব্লগে গিয়ে আর জিজ্ঞেস করতে হবে না!’ এই খাওয়াদাওয়া পর্ব এবং এ ছাড়াও নক্ষত্র ব্লগের মালিকের সাথে কথা হলো; পরিচয় হলো।

সামহোয়ারইন ব্লগার নিক ‘সুলতানা শিরিন সাজি’ আপির সাথে সামনাসামনি কথা হলো। আমার কাছে ওনার চেহারা পরিচিত লাগছিলো; কিন্তু নাম জানি না! উনি আমার ফেসবুক বন্ধুও। উনি আমাকে দেখেই উল্লসিত চিৎকার করে বলে উঠলেন-‘আরে যূথী না? এতদিন শুধু ফেসবুক এ ই দেখেছি। আজ দেখা হলো। কি খবর টবর তোমার?’ ‘এই তো আপি।’ খানিক পরে এই দলে যোগ দিলেন- ব্লগার ‘কালপুরুষ’; আবার ফটোসেশন হলো। তারও খানিক পরেই দেখি মামুন ম আজিজ তার কন্যাকে কোলে নিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে গেছেন, কোন দিক দিয়ে আসলেন টের পাইনি। খানিক পরেই দেখি ভাবীও এসে হাজির। সাথে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া হতে পারে একটা বাচ্চা ছেলে। জিজ্ঞেস করলাম-‘এই কি আপনার সেই কিশোর কবি নাকি?’ বলে- ‘না! এ ভালো ছবি আঁকে!’

এক ঝাঁক রঙিন নক্ষত্রের আলোয় ভরে গেছে লিটল ম্যাগ চত্বরের ‘সাদাকাগজ/এক রঙা এক ঘুড়ি’ স্টলের সামনের চত্বরটা। কে দর্শনার্থী কে পাঠক বা লেখক, সব মিলেমিশে গেছে। এলেন রোদেলা নীলাও। ঠিক আমারই মতন চুড়ি পরে! মিল তো হবেই! উনি যে সিক্সটিন আর আমি হোলাম ফিফটিন! নতুন টাইটেল আমাদের দুজনার! নিজেরাই নিয়েছি এই নাম! ত্রিশের পরে মেয়েদের বয়স আর উপরে দিকে যায় না, নিচের দিকে নামতে থাকে! হাঁ হাঁ কি অদ্ভূত যুক্তি! হিহি!! (এই থিওরীর উদ্দোক্তা-রোদেলা ও যূথী)

খানিক পরে পরে আমি স্টলে বসি আবার খানিক পরেই মাঠে ঘুরাফিরা করছি। আজ বিক্রির অবস্থা ভালো ছিলো। গল্পকবিতাডটকম এর বিন আরফান ভাই এসে তিনটা বই কিনে নিয়ে সোহরাওয়ার্দির ওদিকে মামুন ভাইয়ের সাথে দেখা করবেন বলে ঝড়ের বেগে চলে গেলেন। নক্ষত্র ব্লগ সংকলন বিক্রি হয়েছে গোটা পাঁচেক আমার সামনেই।

আমি সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্টল থেকে বেরিয়ে সাদাকাগজ ছাড়িয়ে লোকাল প্রেসের স্টলে গিয়ে নারী প্রগতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘পারি’ ১ম বর্ষ।।২য় সংখ্যাটার এক কপি কিনে নিলাম; এই ম্যাগাজিনে আমার একটা গল্প প্রকাশিত হয়েছিলো আগস্ট-অক্টোবর ২০১২ তে। বইটা আমার সংগ্রহেই নেই, বাজার থেকেও শেষ হয়ে গিয়েছিলো। সেটা স্টলে দেখে ঝটপট কিনে নিলাম।  

তারপরে হাঁটা দিলাম কোন সুহৃদের দেখা মেলে কিনা। যার সাথে হেঁটে হেঁটে কথা বলা আর মেলার বাইরে চলে যাওয়া যাবে। কাউকেই চোখে পরছে না। মামুন ম আজিজ ভাই ভাবী আর মেয়েকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দির ওদিকে আছেন বোধহয়; এসেছেন কিনা দেখছি; উৎসুক নয়নে খুঁজতে খুঁজতে হেঁটে হেঁটে বাংলা একাডেমী বিল্ডিং ছাড়িয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে মামুন ভাইকে ফোন দিলাম-‘ভাইয়া, সাদাকালো শ্যাওলা বইটা কি এসেছে?’ বাংলা একাডেমী’ তথ্যকেন্দ্রতে নতুন বইয়ের পরিচিতি শুনাচ্ছে মাইকে, ভীষণ শব্দে আমি কিছুই শুনছিনা ভাইয়া কি বলছেন; এর মধ্যে দেখি সামনে কবি-গীতিকার-শিশু সাহিত্যিক সোহেল মাহরুফ দাঁড়িয়ে। মামুন ভাইয়ার কন্ঠ খানিকটা পেলাম-‘না ! বই আজকেও আসেনি।’ ফোন কেটে দিয়ে সোহেল মাহরুফ এর সাথে কথার আড্ডা চলল কিছুক্ষণ। ওনার সাহিত্যিক পরিমন্ডলের ১৬ জনের একটা দল নাকি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন শুধু বইমেলার জন্য। ওনারা সবাই আজকে বইমেলাতেও এসেছেন ফাগুন উপলক্ষ্যে। কিছুদূর হেঁটে যেতে যেতেই তাদের কারো কারো সাথে পরিচিতি ও কথাবার্তা হলো।

এর মধ্যে আমি নজরুল মঞ্চ ছাড়িয়ে শিশুসাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেছি। এখানে কথা বলতে বলতেই বাসা থেকে ফোন এলো। বাসায় নাকি গেস্ট। ওনারা কখনো আসে না। পাশাপাশি এরিয়ায় বাসা হলেও যাওয়ার সময় হয় না। আমি সোহেল মাহরুফ এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। ভিড় ঠেলে চটজলদি রিকশা ধরে বাসায় ফিরে এলাম শুধু বাসার অতিথিদের দেখবো বলে। এসে রিকশা থেকে নেমেছি, গেটের কাছে দেখি বুয়া-বিস্কুটের একটা প্যাকেট হাতে; সে দোকান থেকে এসেছে! বলে উঠলো-‘মেহমান তো মাত্রই রিকশা ধইরা চইল্যা গেছে গা! আপনের রিকশার ধার দিয়াই গ্যাছে মনে অয়! আম্নে দেখেন নাই?’ ক্যামন লাগে? সাহিত্যালোচনা জমেছিলো বেশ আজ বেশ প্রতিভাবান অনেকের সাথেই; সেটা ছেড়ে চলে এলাম কার জন্য? ধ্যাত! আর যদি কখনো অন্যের জন্য ছুটে আসি!

বাসায় ঢুকেই অবশ্য মেজাজ ঠিক হয়ে গেলো। ব্যাগটা নামিয়ে রেখেই আবার ছুটলাম বড় মামীর বাসায় তিনতলায়। সেখানে কিছুক্ষণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেই ছুটলাম ছোট খালামনির বাসায় পাঁচ তলায়। গিয়ে দেখি চারতলার খালামনি বসে আছে। দুজনের কাছে কিছু প্রশংসা আর ঘরোয়া আলোচনায় জমে উঠতেই মায়ের ডাক পরলো মুঠোফোনে। ফিরে এসেই পোশাক বদলে বসে গেলাম আমার সারেগামা বাক্স মানে ল্যাপটপটা নিয়ে। এক ঝাঁক জোনাক থুক্কু এক আকাশ নক্ষত্রের নিচে আমরা যারা ফাগুনের আগুনে উল্লসিত হোলাম তাদের কাহিনীটা যে কাগজের পাতায় তুলে আনতে হবে!

 মাত্র জ্বরটা কমেছে আর আমি ছুটেছি প্রাণের বইমেলায়। অনেক দিন পরে ফ্যাশন করতে উচা হিল পরে হাঁটাহাঁটি করে পায়ের পাতা গেছে ফুলে। টাইলসের মেঝেতে পা'ই পাতা যাচ্ছে না! ব্যথা করছে ভীষণ! 

এই লেখা শেষ করে সাবমিট করে নাপা খেয়ে নিলাম একটা। নইলে আগামীকাল বইমেলায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতেও পারে! সে সুযোগ রাখলাম না! আশা করি রাতেই চমৎকার একটা ঘুমের পরে পায়ের ব্যথা সেরে উঠবে।

সবাইকে ফাগুনের রঙিন মন মাতানো ভালোবাসার সুভেচ্ছা।  

 

 

পহেলা ফাল্গুন ১৪২০

জাকিয়া জেসমিন যূথী

১ Likes ৪১ Comments ০ Share ৮৮৮ Views

Comments (41)

  • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    Bhalo Laglo

    • - আসাদুস জামান বাবু

      বেশ ভালো লাগলো কবিতাটি

    • Load more relies...
    - রুদ্র আমিন

    জেনে আমারও ভাল লাগল শহীদুল ইসলাম ভাইয়া। কেমন আছেন?

    - মোঃসরোয়ার জাহান

    চমৎকার হয়েছে, ভালো লাগলো  

    • - রুদ্র আমিন

      জেনে ভাল লাগল সরোয়ার ভাই। কেমন আছেন?

    Load more comments...