Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

২৮ সেপ্টেম্বরঃ বিশ্ব জলাতঙ্ক ( World Rabies Day) আজ, প্রতিরোধে চাই সচেতনতা



হাইড্রোফোবিয়া বা জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ। এখন অবশ্য ‘হাইড্রোফোবিয়া’ না বলে ‘Rabies’ বলা হয়। মূলত জলাতঙ্ক র্যাবিস-এর অনেকগুলো লক্ষণের একটি। বাতাসভীতিও এ রোগের একটি লক্ষণ। গ্রীক পুরাণে চার হাজার বছর আগেও জলাতঙ্ক রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস ( World Rabies Day)। বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য থাকছে Together Against Rabies। রেবিস বা জলাতঙ্ক হচ্ছে ভাইরাস গঠিত একটি রোগ যা সাধারণত কুকুর, শেয়াল, বাদুর প্রভৃতি উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। এটি এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীতে পরিবাহিত হতে পারে তার লালা বা রক্তের দ্বারা। জলাতংক রোগ আন্টারটিকা ছাড়াবিশ্বের সব মহাদেশের প্রায় সকল দেশের প্রাণীর মধ্যেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। প্রতি বছর বিশ্বে যত মানুষ কুকুরের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার ৯৯ শতাংশই এই রোগের কারণে হয়। বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন লোক জলাতঙ্কে মারা যায় এবং বছরে ৫৫০০০জন মানুষ মারা যায় যার ৫০ শতাংশই শিশু। বাংলাদেশেও প্রতি বছর ৩ লক্ষ কুকুর ও বিড়াল, বেজি, শিয়াল অন্যান্য প্রাণির আক্রমণের শিকার হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৭০ ভাগ।

জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছরের মতো আজ পালিত হবে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। ২০০৮ সালে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ২২টি দেশ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। এই রোগের থেকে জনসচেতনতা বৃদ্বি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসুচি লক্ষে আজ সারা দেশে প্রতিটি উপজেলা, জেলা থানায় একই সময় একযোগে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালন করা হবে। অ-লাভজক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল এলায়েন্স ফর রেবিজ কন্ট্রোল তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের দফতর থেকে এ দিবস পরিচালনায় প্রধান সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করে। জলাতঙ্ক হয় রেবিস ভাইরাসের মাধ্যমে। জলাতঙ্ক বা র্যাবিস হলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়ঃ
১। ক্ষতস্থান চুলকানো,
২। ক্ষতস্থানে ব্যথা,
৩। মুখ থেকে লালা নিসৃত হওয়া,
৪। উত্তেজনা,
৫। স্বল্পমাত্রায় জ্বর,
৬। গিলতে সমস্যা হওয়া,
৭। পানি পিপাসা থাকা,
৮। পানি দেখে ভয় পাওয়া,
৯। মৃদু বায়ু প্রবাহে ভয় পাওয়া,
১০। আবোল-তাবোল বকা,
১১। প্যারালইসিস, ইত্যাদি।
জলাতঙ্ক রোগী পানি দেখলেই ভয় পায়। তাই এ রোগের নাম জলাতঙ্ক। এ ভাইরাস মগজের নিউক্লিয়াস এমবিগুয়াসে আক্রমণ করে। মগজের এ অংশটি প্রশ্বাসে নিয়োজিত শরীরের বিভিন্ন অংশকে অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকে দমন করে রাখে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমন্বয় ঘটায়। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণে এ কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে জলাতঙ্ক রোগী যখন পানি খেতে যায়, তখন তার গলা ও শ্বাসনালি উত্তেজনায় সংকুচিত হয়ে তীব্র ব্যথার অনুভূতি জাগায়। সেই সঙ্গে কিছু পানি শ্বাসনালি দিয়ে মূল শ্বসনতন্ত্রে প্রবেশ করে কাশি হয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অনেকে মনে করেন, কুকুরে কামড়ালেই জলাতঙ্ক হবে, কিন্তু সব কুকুরে কামড়ালেই জলাতঙ্ক হয় না। কারণ এটা প্রধানত পশুদের রোগ। তাই প্রথমত পশুদের এটি হতে হবে। তার পরই তা মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হবে। শুধু কুকুর নয়, বিড়াল বা অন্য যে কোনো প্রাণীর কামড় থেকেও এ রোগ হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আঁচড় থেকেও এ রোগ হয়।

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস উপলক্ষ্যে পালিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে প্রধান হচ্ছে বিশ্বব্যাপী জলাতঙ্ক রোগের বর্তমান অবস্থা বিষয়ে পর্যালোচনা, এর প্রেক্ষিতে করণীয় বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ জনগণ, চিকিৎসক এবং সরকারী-বেসরকারী নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এছাড়াও এই রোগ সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করার জন্য এই দিনে বিশেষ র্যালী বা শোভাযাত্রা, বিনামূল্যে টীকা প্রদান প্রভৃতি কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসার চেয়ে এ রোগ প্রতিরোধের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এ রোগ প্রতিরোধে যা করতে হবে তাহলো যেসব প্রাণীর আঁচড় বা কামড়ে জলাতঙ্ক হয় যেমন কুকুর, বিড়াল, শিয়াল প্রভৃতি থেকে সাবধান থাকা এবং তাদের সংস্পর্শে না আসা। বিশেষ করে বাচ্চাদের দূরে রাখা এবং পশুদের অহেতুক উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত হওয়া। গৃহপালিত কুকুর-বিড়ালকে নিয়মিত টিকা দেওয়া। সড়কের বেওয়ারিশ ও টিকা না দেওয়া কুকুর-বিড়াল মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা।

হাইড্রোফোবিয়া বা জলাতঙ্ক প্রাণঘাতী রোগ হলেও সময়মত ব্যবস্থা নিয়ে মৃত্যু এড়ানো যায়। সাধারণত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর, বনবিড়ালের কামড় অথবা আঁচড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয়। এসব প্রাণী কামড় বা আঁচড় দিলে ক্ষতস্থান ভালো করে সাবান দিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ধুতে হবে। সম্ভব হলে স্পিরিট বা আয়োডিন লাগাতে হবে। যে প্রাণী কামড়েছে সেটিকে হত্যা না করে সতর্কতার সাথে বেঁধে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি ১০ দিনের মধ্যে প্রাণীটির মৃত্যু না হয়, কামড়ের কারণে জলাতঙ্ক হওয়ার ঝুঁকি কম বলে ধরে নেয়া হয়। প্রাণীটির শরীরে জলতঙ্ক জীবাণু আছে কিনা সেটা প্রাণীটির মস্তিষ্ক থেকে টিস্যু নিয়েও পরীক্ষা করে দেখা যায়। যদি দেখা যায় জলাতঙ্ক জীবাণু আছে তবে চিকিৎসক সে মোতাবেক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেন। পাশাপাশি প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নিতে হবে। কামড়ের দিনই প্রতিষেধক টিকা নেয়া শুরু করতে হবে। কোন ব্যক্তিকে কুকুরে কামড় দিলে সাথে সাথে টিকা দিলে জলাতঙ্ক রোগ হবেনা। সময়মত জলাতঙ্কের টীকা নিয়ে জলাতঙ্কের ঝুঁকি প্রায় ১০০ ভাগ এড়ানো সম্ভব। কুকুরে না কামড়ালেও আগে থেকে টিকা দেওয়া যায়। জলাতঙ্ক রোগের সবচেয়ে বিশেষত্ব হচ্ছে, পশু কামড়ানোর পরও এ রোগের টিকা দেওয়া যায়। অন্য যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুরের কামড়ে গরু, ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত প্রাণীরও জলাতঙ্ক হতে পারে। এসব প্রাণীর মাংস খেয়ে মানুষও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

ঝাড়ফুঁক বা এ জাতীয় পদ্ধতিতে জলাতঙ্ক বা কুকুর কামড়ের কোন চিকিৎসা করা যায় না। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষতস্থানে চুন, হলুদের গুঁড়া বা এ জাতীয় কিছু লাগিয়ে কোন উপকার হয় না। জলাতঙ্কে আক্রান্ত মৃত মানুষের অঙ্গ অন্য মানুষে শরীরে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও জলাতঙ্ক ছড়ায়। তাই জলাতঙ্কে আতঙ্ক নয় সচেতন হো্ন। বন্যপ্রাণী এবং যেসব প্রাণী সম্পর্কে বিশেষ জানা নেই সেসব প্রাণী থেকে দূরে থাকা উচিত। যারা কুকুর, বিড়াল এসব প্রাণী পোষেন তাদের উচিত এসব প্রাণীকে টিকা দিয়ে নেয়া। একবার টিকা দিলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। নিয়মিত বিরতিতে টিকা দিতে হয়। যাদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে হয় তারা আগে থেকেই জলাতঙ্কের টিকা নিয়ে রাখতে পারেন। জলাতঙ্কে আতঙ্ক নয় নয় সচেতনতা আবশ্যক।
০ Likes ১ Comments ০ Share ৪৫৪ Views

Comments (1)

  • - শারমিন সুলতানা

    মন চুইে যায়

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      থ্যাংকু শারমিন। 

    - মোকসেদুল ইসলাম

    অনেক সুন্দর

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      অনেক ধন্যবাদ। 

    - কামাল উদ্দিন

     
    কাম ও বন্ধুতার ককটেল আলিঙ্গনে emoticons

     

    চমৎকার কবিতায় ভালো লাগা emoticons

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      হাহা। ভালো আছেন তো? অনেকদিন পরে দেখলাম। 

    Load more comments...