Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মেঘলা মেয়ে

৯ বছর আগে

২০১৪ সালে যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন

১১৩ বছর যাবত প্রদান করা হচ্ছে নোবেল পুরস্কার। প্রতিবছর নির্ধারিত ৬ টি বিষয়ে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রদান করা হয় নোবেল পুরস্কার। এসব বিষয়ে একে সর্বোচ্চ সম্মানজনক এ পদক ধরা হয়। 

১. চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল 
মস্তিষ্কের জিপিএস পদ্ধতির আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করছেন ৩ বিজ্ঞানী। ৬ অক্টোবর এ এ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়।
বৃটেনভিত্তিক গবেষক প্রফেসর জন ওকেফে, মে-ব্রিট মোসার এবং এডভাসী মোসার যৌথভাবে এ পুরস্কারের অধিকারী হন। আমরা কোথায় আছি এবং এক স্থান থেকে অন্যস্থানে অবস্থানের দিকনির্দেশনায় মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ওই তিন বিজ্ঞানী তা আবিষ্কার করেন। গবেষণায় প্রাপ্ত এ তথ্য আলঝেইমারের (বয়স্ক মস্তিষ্কের) রোগীরা কেন পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিনতে পারেন না তা ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করবে।

নোবেল নির্বাচনী সভায় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১০০ বছর ধরে দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের চালিয়ে যাওয়া গবেষণায় আবিষ্কৃত তথ্য সমস্যার সমাধান করবে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’র প্রফেসর ওকেফে বলেন, ১৯৭৫ সালে মস্তিষ্কের প্রথম অংশের অভ্যন্তরীণ অবস্থানরত পদ্ধতির আবিষ্কার হয়। তিনি দেখিয়েছেন, যখনই কোন এক জায়গার একটি ঘরে ইঁদুর ছিলো তখন স্নায়ু কোষের একটি সেট সক্রিয় হয়ে যায়। যখন ইঁদুরটি ভিন্ন অবস্থানে ছিলো তখন কোষের একটি ভিন্ন সেট সক্রিয় হয়ে যায়।

প্রফেসর ওকেফে ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, মস্তিষ্কের মধ্যে জলহস্তী আকৃতির একটি মানচিত্রে অবস্তানরত কোষগুলো হচ্ছে অবস্থান-কোষ (প্লেস-সেল)।

 

২. পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল
গাঢ় নীল আলো ডায়োডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উজ্জ্বল সাদা আলোতে পরিণত হওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য এ বছর পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ইসামু আকাশাকি, হিরোশি আমানো ও সুজি নাকামুরা

৭ অক্টোবর মঙ্গলবার স্টকহোমের কারোলিন্সকা ইন্সটিটিউটে সাংবাদিকদের সামনে নোবেলজয়ী এ তিনজনের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।

২০১৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা হলেন- বৃটেনের পিটার হিগস (৮৪) ও বেলজিয়ামের ফ্রাঁসোয়া ইংলার্ট (৮০)। ‘হিগস বোসন’ থিওরির ওপর তাদের কাজের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

মস্তিষ্কে কোষের গঠন নির্ধারণের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য এ বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল প‍ান জন ও’কিফ, মে-ব্রিট মোসার ও অ্যাডভার্ড আই. মোসার।

 

৩. রসায়নে নোবেল
এবার রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে তিনজন। এরা হলেন- এরিক বেটজিগ,  স্টিফান ডব্লিউ. হেল এবং উইলিয়াম ই. মোয়েনার। এদের মধ্যে দুইজন মার্কিন নাগরিক ও একজন জার্মান।
৮ অক্টোবর বুধবার দ্য রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস যৌথভাবে তিনজনকে রসায়নে এবার নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এই তিনজনের মধ্যে একজন মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের এরিক বেটজিগ হাওয়ার্ড হাগিস মেডিকেল ইনস্টিটিউট অ্যাসবার্ন জ্যানেলা রিসার্চ ক্যাম্পাসের গবেষক। রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের আরেকজন হলেন স্টিফান ডব্লিউ হেল। তিনি জার্মানির হেইডেলবার্গের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর বায়োফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি, গোটিনজেন ও জার্মান ক্যান্সার ইনস্টিটিউট রিসার্চ সেন্টারের গবেষক। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনির্ভাসিটি, স্ট্যানফোর্ডের গবেষক উইলিয়াম ই. মোয়েনার একইসঙ্গে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেলেন।

১৮৭৩ সালে অনুবীক্ষণবিদ আর্নেস্ট অ্যাবে জানিয়েছিলেন, প্রচলিত অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপির অতি তড়িৎচম্বুকীয় তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ০.২ মাইক্রোমিটারের বেশি রেজুলেশন হবে না। কিন্তু  গবেষক এরিক বেটজিগ,  স্টিফান ডব্লিউ. হেল এবং উইলিয়াম ই. মোয়েনার তার এই মতবাদকে পাশ কাটিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাড়াতে সক্ষম হন। তারা অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপিকে ন্যানোকপিতে পরিণত করেন।

আর এ কারণে সুইডিশ নোবেল কমিটি তিন গবেষককে রসায়নে যৌথভাবে নোবেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই তিন গবেষকের গবেষণার সাফল্যের কারণে এখন থেকে গবেষকরা ব্যক্তিবিশেষের মস্তিষ্কের জীবন্ত কোষের ভেতরকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন, মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে কীভাবে সংকেত তৈরি হয়।

এ ছাড়া গবেষকরা পারকিনসন্স, আলঝেইমার ও হান্টিংটন রোগের ক্ষেত্রে প্রোটিন কী ধরনের ভূমিকা রাখে, তার ম্যাপও তৈরি করতে পারবেন। তারা আরো জানতে পারবেন, কারো নিষিক্ত ডিম্বাণুতে প্রোটিনের ভূমিকা এবং এই নিষিক্ত ডিম্বাণুকে কীভাবে বিভক্ত করে ভ্রুণ তৈরি করে এই প্রোটিন।

২০১৩ সালে রসায়নে নোবেলে পান অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক মার্টিন কারপ্লাস, ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক মাইকেল লেভিট ও ইসরাইলি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক আরেই ওয়ারশেল। মস্তিষ্কে কোষের গঠন নির্ধারণের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য এ বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল প‍ান জন ও’কিফ, মে-ব্রিট মোসার ও অ্যাডভার্ড আই. মোসার।

গাঢ় নীল আলো ডায়োডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উজ্জ্বল সাদা আলোতে পরিণত হওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য এ বছর পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন ইসামু আকাশাকি, হিরোশি আমানো ও সুজি নাকামুরা।

 

৪. সাহিত্যে নোবেল
২০১৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন ফ্রান্সের লেখক প্যাত্রিক মোদিয়ানো। ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ পুরস্কার ঘোষণা করে সুইডিশ একাডেমি। আগামী ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্যাট্রিক মোদিয়ানোর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। এছাড়াও পুরস্কারস্বরূপ  মাদিয়োনোকে ১১ লাখ মার্কিন ডলার (৮ কোটি ৫২ লাখ ৩৯ হাজার বাংলাদেশি টাকা) দেবে সুইডিশ একাডেমি।

প্যাত্রিক মোদিয়ানো এ পর্যন্ত ৩০টি উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আ ট্রেস অব ম্যালিস, হানিমুন, মিসিং পারসন, লাকম্ব, লুসিয়েন ইত্যাদি। তাঁর লেখা উপন্যাস নিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে। গত বছর সাহিত্যে নোবেল পান ছোটগল্পকার এলিস মুনরো।

 

৫. শান্তিতে নোবেল 
নারীশিক্ষা আন্দোলনের নির্ভীক অগ্রপথিক মালালা ইউসুফজাই (১৭) শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার সঙ্গে যৌথভাবে এই সম্মাননা পেয়েছেন ভারতের শিশু অধিকার বিষয়ক কর্মী কৈলাশ সত্যার্থি (৬০)।
১০ অক্টোবর শুক্রবার নরওয়ের অসলোয় শান্তিতে নোবেল জয়ীর নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল জয়ের ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম। কৈলাশ মহাত্মা গান্ধীর নীতি অনুসরণ করেন এবং এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বহু আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর্থিক মুনাফা লাভের জন্য শিশুদের ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা নেন কৈলাশ।

২০১২ সালের অক্টোবরে মেয়েদের শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে প্রচারণা চালানোর কারণে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় তালেবানের বন্দুকধারীরা মালালার মাথায় গুলি করে। মুমূর্ষু মালালাকে পাকিস্তানের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃটেনে পাঠানো হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এ কিশোরী এবং সেখানকার একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি মেয়েদের শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে নবোদ্যমে কাজ শুরু করেন।

 

৬. অর্থনীতিতে নোবেল

এ বছর অর্থনীতিতে মার্কেট পাওয়ার এন্ড রেগুলেশন বিশ্লেষণে নোবেল পেলেন ফরাসি নাগরিক জ্যঁ তিরোল। চলতি বছর সাহিত্যের সাথে অর্থনীতির নোবেলটিও বগলগাদা করল ফ্রান্স।

সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টার পর (স্থানীয় সময় দুপুর ১টা) রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স এ নোবেল জয়ীর নাম ঘোষণা করে।

সম্পদের মূল্য নিয়ে প্রায়োগিক বিশ্লেষণের জন্য ২০১৩ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পান ৩ মার্কিন নাগরিক ইউজিন এফ ফামা, লার্স পিটার হানসেন ও রবার্ট জে শিলার।

অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া একমাত্র নারী হলেন ইলিনর অস্ট্রম। প্রথম কোনো নারী হিসেবে ২০০৯ সালে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন এ মার্কিনী।

আলফ্রেড নোবেল তার উইলে নোবেল পুরস্কারের জন্য অর্থনীতির নাম উল্লেখ করেননি। তবে অর্থনীতিশাস্ত্রের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কথা চিন্তা করে সুইডিশ রিক্স ব্যাংকের সৌজন্যে নোবেলের স্মরণে ‘অর্থনীতি বিজ্ঞানে সেরিস রিক্স ব্যাংক প্রাইজ’ শীর্ষক পুরস্কারটি প্রবর্তিত করা হয়।

এরপর ১৯৬৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪৫ দফায় ৭৪ জন অর্থনীতিবিদ এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

১৯০১ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করে আসছে নোবেল কমিটি। নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে শুধু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাকি পুরস্কার ঘোষণা ও প্রদান করা হয়, সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে।

গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট ৬টি শাখায় নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। শাখাগুলো হলো- পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি।

উল্লেখ্য, এ বছর নোবেলে শান্তি পুরস্কারের জন্য ২৭৮ জন মনোনীত হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস, অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনও।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৬৯ Views