গতকাল আমার চোখে সামান্য আঘাত লেগেছিল। কিন্তু সেই আঘাতের কারনে চোখের ডাক্তার আমার এক চোখে ২৪ ঘণ্টার জন্য ব্যান্ডেজ করে দিল। ব্যান্ডেজ করার পর আরেক চোখে সব কিছুই ঝাপসা দেখতে লাগলাম। ডাক্তারকে বললাম ‘’ডাক্তার ভাই আমি তো এক চোখে ভালমতো দেখতে পাচ্ছি না’’। ডাক্তার ভাই বললেন, ‘’আপা এক চোখে যদি সব দেখা যেত তাহলে তো দুই চোখের কোন দরকার ছিল না’’।
ডাক্তারের এখান থেকে বের হয়ে এলাম আমার ছেলের কোচিং সেন্টারে। সেখানে ভাবিদের প্রশ্ন ‘’আপা কি হয়েছে, কিভাবে হল, আরও কত কি’’। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে পরিচিত যেই দেখে তাদেরও এই একই কথা।সবার উত্তর দিয়ে বাসায় এসে আপনজনদের ফোনে জানালাম আমার অবস্থা। তারপর একের পর এক ফোন আসতেই লাগলো। কিভাবে আঘাত পেলাম, ডাক্তার কি বলল, কতদিন লাগবে ভাল হতে, আরও কত কথা।সবার কথার উত্তর দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম থেকে উঠলাম দুপুরের খাবার খেতে। কিন্তু এক চোখে দেখতে যে কি কষ্টকর তা তীব্রভাবে অনুভব করলাম।শুধু মনে মনে ভাবছি কখন ২৪ ঘণ্টা শেষ হবে আর ডাক্তার আমার ব্যান্ডেজ খুলে দিবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আরও আধা ঘণ্টা আগেই হাসপাতালে চলে গেলাম। আমার সিরিয়াল আর আসেনা। অপেক্ষা করছি তো করছি। এর মাঝে এক সাংবাদিক চাচার সাথে পরিচয় হল। চাচার কত কথা। চাচা আসছে চোখে লেন্স লাগাতে।এর মাঝেই আমার সিরিয়াল চলে এসেছে। ভাবলাম যাক অবশেষে ব্যান্ডেজ থেকে মুক্তি পাব। আগের মত সব কিছুই আবার দেখতে পাব। নিজেকে সিনেমার নায়িকা নায়িকা মনে হচ্ছিল। ডাক্তারের কাছে গিয়ে বসার পর একজন নার্স চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দিলেন। খুলে সাথে সাথে চোখে কি জানি একটা ড্রপ দিয়ে দিল।
চোখ খুলার সাথে সাথে আমার কেন জানি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল ‘’আমি দেখতে পাচ্ছি, আমি সব কিছু দেখতে পাচ্ছি’’। কিন্তু তা আর বলা হল না। এই মুহূর্তে আমার বর সামনে থাকলে হয়ত তাকে জড়িয়ে ধরে ঠিকই বলতাম কিন্তু সে তখন আমার সাথে ছিলনা। বাইরে এসে শুধু মনে হল, আহা কি শান্তি , সব কিছু কেমন পরিস্কার। ধন্যবাদ খোদা সব কিছুর জন্য।
Comments (21)
ভাল লাগল
দারুন লাগলো
বাহ কি সুন্দর পাখি