Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

স্বাধীনতা কেড়ে নিন নগর পিতাগণ...... (প্রতিযোগিতা/২০১৬) ক্যাটাগরি-৩ ( সমসাময়িক)

স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। সব কিছুতেই স্বাধীনতা নিজের হাতে নিয়ে উড়ছি ঘুরছি যার যেমন ইচ্ছে তেমন করে। স্বাধীনতা পেতে পেতে আমরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছি । না পাই আইনের ভয়, না পাই জীবনের ভয়, না পাই  বিবেকের ভয়!! আশ্চর্য্য! অফুরন্ত প্রাণশক্তি আমাদের মাঝে বিরাজিত। দুর্ভোগকে সাথী করে বেঁচে থাকি আমরা ঢাকাবাসী  নিজ স্বাধীনতায় কিন্তু!!

 

যতই দিন যাচ্ছে ঢাকা শহর চলাফেরা মুশকিলই নেহি নামুনকিন হয়ে পড়ছে। যেমন বাড়ছে মানুষ তেমনি বাড়ছে যানবাহন। কালো ধোঁয়ায় বাতাস ভারী শীতের দিনেও আবহাওয়া থাকে উষ্ণ। হর্ণের শব্দে কান ঝালাপালা হচ্ছে প্রচুর শব্দ দুষন। দৈত্যরূপী বাসগুলোর দেহে হাজার ক্ষত নিয়ে চলছে সাঁই সাঁই করে। আচম্বিতে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে উঠাচ্ছে নামাচ্ছে যাত্রী। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝরে যাচ্ছে অকালে প্রাণ। প্রিয়জন যারা হারায় তারাই বুঝে তাদের কতটুকু গেছে। একটা পরিবার ধ্বংস করে দিয়ে বাস চালকরা দিব্যি পাইলট হয়ে মাথার উপর ঘুরছে ফিরছে। কারো কিছুর বলার নেই যেনো!

 

মন্ত্রির ভাতিজা মদ খেয়ে গাড়িয়ে চালিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে কেড়ে নিলো প্রাণ। সেখানেও দেখলাম তাকে আদর করে সবোর্চ্চ সেভ দিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইন এখানে নিরব......... আইনের স্বাধীনতা মন্ত্রিদের পকেটে।

 

এমন ঘটনা একটা নয় হাজারটা ঘটতেছে । আর এসব কিছুই নিজ স্বাধীনতা বলে যে যার জায়গায় থেকে করে যাচ্ছে। শুধু আইন শৃংখলা কেনো । স্বাধীনতায় হাতে কড়ি হয়েছে সেই স্বাধীনতার পর থেকেই। হাসপাতাল, ব্যাংক, ডাক্তার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব জায়গাতেই স্বাধীনতার ছড়াছড়ি। যিনি বা যে, যে জায়গায় আছে সে জায়গা থেকেই নিজ স্বাধীনতাবলে নিজের স্বার্থের কারণে প্রতিষ্ঠানের বিধানাবলী সংশোধন করে নিচ্ছে.......আবার যোগ করে দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে। প্রমোশনের পোষ্ট না থাকলে ক্রিয়েট করে নিচ্ছে একমাত্র নিজের স্বাধীনতায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকগণ ক্লাসে সময় না দিয়ে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানোর মনোনিবেশ করেছেন নিজের স্বাধীনতায়। একেকজন ডাক্তার পরিণত একেকটা কসাইরূপে। নিজের স্বাধীনতাবলে ডাক্তাররা দিয়ে দিচ্ছেন হাজার হাজার টেস্ট, অপ্রয়োজনীয় ঔষধ প্রেসক্রাইভড করছেন। শুধু টাকা আর টাকা। একটা মানুষের জীবনে কত টাকার প্রয়োজন। মসজিদ কমিটি দানবাক্সের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন নিজেদের স্বাধীনতায়। কারো কিছুই বলার নেই।

 

ঢাকা শহর দুইভাগ হলো । দুইজন নগর পিতা হলেন। নির্বাচন হলো....... ইনিয়ে বিনিয়ে হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা বলে বলে অলিগলি নোংরা ময়লায় ডাস্টবিনে পা মাড়িয়ে চেয়েছিলেন ভোট। আমরা আমজনতা আমাদের স্বাধীনতাবলে তাদের ভোট দিয়ে আমাদের নগর পিতা বানিয়েই ফেল্লাম এই ভরসায় যদি আমাদের শহরটা আবার হেসে উঠে। আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে অকষ্মাৎ তবেই তো স্বস্তির নি:শ্বাসটা ফেলতে পারবো। আমরা ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঢাকা শহরে বসবাস করতে পারবো। সন্ত্রাসমুক্ত কিংবা থাকবে না পানি গ্যাস বিদ্যুতের ঝামেলা। কিন্তু সবই তো গুঁড়েবালি। আশার ক্ষেতে নিরাশার চাষ। যতই উর্বর করতে চাইনা কেনো যতই প্রাকৃতিক স্যার ইউজই করিনা কেনো সে ক্ষেত্রে আশার ফলন ভাল হবে না কারণ স্বাধীনতার বলে স্বার্থপরতার বদৌলতে। গ্যাস সংকট চলছে তো চলছেই, পানির সংকট চলছে তো চলছেই। এখন আবার বিদ্যুতের ঝামেলাটাও চলবে বিরামহীন ভাবে।

 

আমাদের নগর পিতাগণ এখনো ঘুমিয়ে আছেন আর আমরা আছি চরম ভোগান্তিতে। সেই যে ফ্লাইওভার আমাদের মাথার উপর দিয়ে গেলো সাঁই সাঁই করে গাড়িগুলো চলছে দিনে রাতে। তাতে কি যানজট কমেছে? কিন্তু ফ্লাইওভার তৈরীর পর যে রাস্তাগুলো যে অবস্থায় ছিলো সে অবস্থাতেই পড়ে আছে। পুরো ঢাকা শহরের রাস্তা খানাকন্দ....... এতটাই ভাঙ্গা রাস্তা যে রিক্সায় উঠলে প্যারাসিটামল খেতে হয়। পুরো ঢাকা শহর ধুলোয় ধুলায়িত। যাচ্ছে তাই অবস্থা রাস্তার। আমার প্রিয় ঢাকা শহরও স্বাধীনতা পেয়ে বহুত খুশি। নিজ স্বাধীনতাবলে ঢাকা আমার নোংরা হচ্ছে ডাস্টবিন হচ্ছে । ধূলা মেখে নিচ্ছে নিজের গায়ে।

 

এখন রইল ফুটপাতের কথা........ কি আর বলব উফ......... ফুটপাত আসলে কিসের জন্য তৈরী করা হয়েছে। প্রশ্রাব করার জন্য, দোকানপাট, চায়ের টঙ, বিড়ি চুরুট বেচার জন্য!! আশ্চর্য্য !!

 

কতটা রিস্ক নিয়ে আমরা বেঁচে আছি সেটা শুধু নিজেদের স্বাধীনতাবলে। অনেক কষ্ট পেয়ে মনে সেদিন ফেইসবুকে নিচের স্ট্যাটাসটি লিখেছিলাম খারাপ ভাষায়

 

"কি যে বিতিকিচ্ছিরি জীবন আমাদের ........ মাঝে মাঝে ঘেন্না ধরে যায়। ফুটপাতে খারাইয়া মুতে বেটারা আর সেই জায়গায় দাঁড়াইয়া টঙের সামনে আবার আয়েশে চা বিড়ি খায় ছ্যা ছ্যা। চা আর মুতের মাঝে কিইবা পার্থক্য রইল......... আহারে জীবন আমাদের। এর নামই জীবন। গুয়ে মুতে খারাইয়া খানা খাই ছ্যা ছ্যা .........। বাচ্চাকে স্কুলে নিয়া যাই মেইন রাস্তার মাঝামাঝি হেঁটে হেঁটে। জীবনের কত যে রিস্ক.... ভয়ে মাঝে মাঝে আত্মা কেঁপে উঠে। বড় বড় যন্ত্র দানবের ফাঁক গলিয়ে দিব্যি হেঁটে যাই আতংকগ্রস্থ মনে...... আমরা কত স্বাধীন ...... কত ভাল মানুষ আমরা । কারো কোনো ব্যাপারে নাক গলাই না ...... রাস্তায় লাশ পড়ে থাকলে উঁকি দিয়ে দেখারও প্রয়োজনবোধ করি না। ছ্যা ছ্যা কি সুন্দর জীবন আমাগো আহা শান্ত্রি আর ভ্রান্তি। আমার চাওয়া শুধু ফুটপাতটা মুতমুক্ত হোক। খাটাশগুলান্তের লজ্জাস্থানে ইট বাইন্ধ্যা দেওয়েনের দরকার । মনের দু:খে মুখটা খারাপ করছি ছ্যা ছ্যা ছ্যা"

 

স্বাধীনতা পেতে পেতে আমরা ক্লান্ত। হে নগর পিতাগণ আমাদের হাত হতে স্বাধীনতা কেড়ে নিন অচিরেই। জেগে উঠুন প্লিজ। এমন যেনো মনে আওড়াতে না হয়........

১।

আমার দেশটি এমন সুন্দর

ছড়িয়ে আছে নগর বন্দর

গায়ে সকল সুখের কানন

হাজার ফুলের স্বপ্ন বুনন।

 

দূর্বাঘাসে পা ডুবাতে

প্রজাপতির রঙ সভাতে

যেতে কোমল গায়ের বাড়ি

মন যে চায় দেই ঢাকা ছাড়ি।

 

আমাদের মন যেনো আপনাদের প্রতি এমন বিরক্ত না হয়। পিতা হয়ে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব কর্তব্য এড়িয়ে যাবেন না।

 

২।

খোকন খোকন ডাক পাড়ি

খোকন ঘুমান কার বাড়ি

আসেন খোকন দেখে যান

ভাঙ্গাচুড়া রাস্তাখান।

 

৩।

কষ্টে আছি ঢাকাবাসি

বুকে কষ্ট মুখে হাসি

রাস্তার মতো জীবন ঘোরে

চলতে গেলো ভেঙ্গে চুড়ে।

 

৪।

ঢাকা শহর মুত্রখানা

পিলারে বিজ্ঞপ্তি টানা

বিজ্ঞপ্তিটা পড়ে পড়ে

মুত্রযে গড়িয়ে পড়ে।

(এখানে প্রশ্রাব করলে জরিমানা)

 

৫।

রাস্তার পাশে ময়লার স্তুপ

আইন কেনো তবু চুপ

অগুছালো শহরে

হচ্ছিযে রোজ দাহরে।

 

৬।

ভোটের বেলায় কতকথা

কথার মাঝে ফাঁদযে পাতা

কাজের বেলায় কাজী হয়ে

যায়রে শেষে পাজী হয়ে।

 

ঢাকা শহর হয়ে উঠুক আপনাদের ছোঁয়ায় আবারো সুন্দর আর প্রাণবন্ত । এ আশা ব্যক্ত করে আমার বকবকানিতে সমাপ্তি টানলাম।

 

৩ Likes ৬ Comments ০ Share ৫০৫ Views

Comments (6)

  • - গোখরা নাগ

    দারুন...!!!

    • - মেঘা নওশীন

      খুব ভালো লাগল...!