Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

এম রহমান

১০ বছর আগে

সালাহ উদ্দীন শুভ্রর কলামঃ সাম্প্রদায়িকতা ও বুদ্ধিজীবীতা

 

কয় দিন আগে দুই বন্ধুর লগে আলাপ চলতেছিল। আলাপের বিষয় বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা। এতে একটা গোজামিল নাকি আছে। সঠিক সংখ্যা কেউ আশা করে না। তবে গজামিলটা কম-বেশি হওয়া নিয়া। স্বার্থসচেতন এক হিন্দু বন্ধুর মত ইচ্ছা কইরাই সংখ্যাটা বেশি দেখানো হয়। ইচ্ছাটা কি? সেদিনের পরে আমি ভাবতে থাকলাম। বেশি সংখ্যায় হিন্দু দেখানোর একটা কারণ হইতে পারে ভারত। বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে যেমন হইতে পারে মিয়ানমার। রামুর ঘটনার পরে এইটা আরও বেশি কইরা মনে হয়। তবে আমার একার বুদ্ধিতে বিষয়টা ধরা দেয় নাই। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জন্য বহুল পরিচিত ভারতের ঘটনাবলিও নিয়ামক। কাউন্টার কারেন্টসে রাম পুনিয়ানি নামের এক সমাজকর্মী, শিক্ষক বলতেছেন 'চেঞ্জিং এনাটমি অব কম্যুনাল ভায়োলেন্স'। মানে আগে যেমন ধর্ম রক্ষার তরফে অপর ধর্মের উপর হামলা, বেশুমার মারামারি এখন সেসব নাই। পূর্ব পরিস্থিতি ছাড়াই ঘটনা ঘইটা যাইতেছে। পুনিয়ানি বলতেছেন, মহারাষ্ট্রের এক ভায়োলেন্সের কথা, সেখানে ভারতের পুলিশ নাকি লুটে অংশ নিছে। এইসব ভায়োলেন্সের আরেকটা দিক হইল হুট কইরা যেমন শুরু হয়, নিভেও হুট কইরাই। আফটার ইফেক্ট থাকে না। মারামারিটাও দুই পক্ষের হয় না। যদিও সমগ্র ভারতের দশা একই রকম না। হিন্দুতে আর মুসলমানে সেখানে মারামারি, সংঘাত আছে কম-বেশি। বাংলাদেশে যা ঘটে নাই বললেই চলে।

 

বিগত কয়েক বছরের ঘটনাবলিতে যা দেখা যায়, কোথাও একটা হামলা হইল, কোন অনির্দিষ্ট এলাকায়, অনির্দিষ্ট ধর্মের উপর। মুসলমানদের উপর হামলা হইছে এমন ঘটনা কাউরে বলতে দেখি নাই। মুসলমানরাই হামলা করতেছে বইলা দেখানো হয়, বুদ্ধিজীবীরা বইলা থাকেন। আগুন আর ধবংস কার্যক্রম শেষ হইলে সব ফকফকা। কে করল, কেন করল খুইজা আর পাওয়া যায় না। চোর পালানোর পর বুদ্ধিজীবীদের দেখা যায়। বাংলাদেশরে অসাম্প্রদায়িক কইরা তোলার আপ্রাণ চেষ্টায় তারা নিয়োজিত হন। মুসলমানদের বাইরে সামাজিকভাবে জোর শক্তি রাখেন বা মনোবলের দিক দিয়াও বলিষ্ঠ এমন কোন সম্প্রদায় কি আছে? না থাকলে কেন মুসলমানরা অন্যদের হামলা করতে যাবে? অর্থনৈতিক কারণ নাই। সেসবের মিটমাট হইছে বহুত আগেই। বিএনপি আর আওয়ামীলীগে এর ভাগ-বাটোয়ারাও পরিচিত খবর। তার চাইতে বড় বিষয় হামলায় অংশ নেয়া মুসলমান আর আক্রান্তদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মানদন্ডের ফারাক নাই তেমন। কেবল হামলার সময় 'কতিপয় মুসলমান' সশস্ত্র হয়ে ওঠে। তাদের এমন হামলার একটাই কারণ হইতে পারে ধর্ম রক্ষা। এমন সংকটে তো বাংলার মুসলমানরা নাই, আলামত হিসাবে তথ্য প্রমাণও হাজির নাই। কেন বারে বারে হিন্দু অথবা অন্যান্য ধর্মের উপর হামলা চলবে তাইলে? বরং প্রগতীশীলতার লগে এখানে ইসলামের একটা বিরোধ জিন্দা আছে। প্রগতিশীলরা 'লালসালু ক্রাইসিসে' ভোগেন বইলা সংকট মিমাংসার রাস্তাটাও ক্রমশ সরু। তাদের পক্ষে পুস্তকজাত জ্ঞান দিয়া এসব ঘটনারে সাম্প্রদায়িক মনে করা সহজ হয়।  

 

ভারত আর বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীতায় সাম্প্রদায়িক হামলা যেভাবে বিরাজ করে রাজনীতিতে এর ব্যবহার পাল্টাইছে। এই সোজা বিষয়টা এড়ায়া যাইতেই দেখি। ফলে পাটাতনে না দাড়ায়া, ইতিহাসের বিভ্রান্তি দিয়া বিচার করার একটা রেওয়াজ বেশ সচল। যার কারণে মনে হয় বুঝি সাম্প্রদায়িক হামলা। 'মুসলমানরা হামলা করছে হিন্দুদের উপর'।

 

প্রগতিশীলরা শহরে বইসা মনে করেন বুঝি ওই এলাকার লোকরা সাম্প্রদায়িক। যেহেতু শিক্ষায় তারা পিছায়া ফলে সাম্প্রদায়িক হওয়াটাই স্বাভাবিক। তদুপরি মুসলমান এবং সংখ্যায় বড়। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক হামলা এই ভূখন্ডে পরিচিত এবং স্বাভাবিক ঘটনা। আর যে দেশে জামায়াতের মত দল আছে সে দেশে এসব কেন ঘটবে না?_ এসব যুক্তি-তর্ক কিন্তু হামেশাই আমাদের শুনতে হয়। জামায়াত ছাড়াও হামলা, সংঘাত, খুনাখুনির জন্য যে আরও দল বা শক্তি আছে তাদের অস্তিত্ব চাইপা যাওয়া হয়। এইসব ডামাডোলের মধ্যে কে ঘটাইল ঘটনা তারে আর খুইজা পাওয়া যায় না। আগুন নিভে যাওয়ার পরে কেবল ছাই পড়ে থাকে। সেই ছাইয়ে আসল ঢাকা পড়ে।

 

এসব ঘটনারে সাম্প্রদায়িক বলবার সামাজিক ক্ষতির দিকও আছে। অন্তত হিন্দু বা বুড্ডিস্টদের ক্ষেত্রে। তারা তখন ইনফেরিওরিটিতে ভুগতে থাকে, মুসলমানদের সাথে তাদের দুরত্ব তৈরি হইতে থাকে। সামাজিকভাবে তারা নিজেদের কোণঠাসা মনে করে। ফলে যে হামলার যে বিচার বা পরিচয় তারে সে হিসাবে চিহ্নিত করে দিলে সুবিধা। সুবিধাটা সকল তরফেরই। মুখস্ত বিদ্যার মত বুদ্ধিজীবীতায় বরং ভয় বেশি।

 

বরং এই হামলার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের যথাযথ সনাক্ত করতে পারলে দুই পক্ষই (এখানে হিন্দু মুসলমান বা বৌদ্ধ-মুসলমান) নিজেদের কমন শত্রু চিনতে পারত। তারা হামলাকারীদের বিপরীতে নিজেদের সংগঠিত করতে পারত।


 

সালাহ উদ্দিন শুভ্র

সিনিয়র সাব এডিটর- বনিক বার্তা

লেখক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক

০ Likes ২ Comments ০ Share ৩৮২ Views

Comments (2)

  • - ঘাস ফুল

    শাস্ত্রও কিন্তু কলম দিয়েই লেখা হয় প্রথম। তবে এটা ঠিক নিজেকে আবিষ্কার করত না পারলে, নিজের ভেতরে নিকে জাগিয়ে না তুলতে পারলে সবই অর্থহীন। কবিতা খুব ভালো লাগলো কৃষ্ণঈসা ভাই। এখানে দেখছি পুরো নাম দিয়ে দিয়েছেন। তবে এটা আপনার আসল নাম মনে হয় না। কারো ফেবুতে দেখেছি অন্যটা। 

    • - গৌতমমূসা মোহাম্মদ কৃষ্ণঈসা

      ধন্যবাদ প্রিয় ঘাসফুল ভাই।

      শাস্ত্র বলতে বোঝাতে চেয়েছি, প্রণীত অথচ অনাবিষ্কৃত কিছু নিয়ম বিঁধান যা অনন্তকাল ধরে অপরবর্তনীয় থাকবে বলে বিশ্বাস করা হয়। 

    - নীল সাধু

    কবির কলম লাঙ্গল হয়ে
    কাগজ জমিনে ফলায় সোনা
    কবির কথাই সত্য ধরে
    তৈরি সকল শাস্ত্র-খানা

    সুন্দর বলেছেন।

    শুভেচ্ছা আপনার জন্য। 

    • - গৌতমমূসা মোহাম্মদ কৃষ্ণঈসা

      ধন্যবাদ প্রিয় নীল দা।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    কবির কাজ কবিতা লিখা। শ্রাস্ত ছেড়ে দিলে কেমনে হবে। তবে প্রয়োজনে কবিকেও লাঙ্গল ধরতে হয়।

    • - গৌতমমূসা মোহাম্মদ কৃষ্ণঈসা

      শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন পাশা ভাই।

      শাস্ত্র যুগে যুগে মানুষকে দলে দলে জাতিতে জাতিতে বিভক্ত করেছে। তাই সব শাস্ত্র থেকে মুলকথাগুলোকে একত্র করে একটি ইউনিক শাস্ত্র করা হোক যেন মানুষের দল একটাই থাকে। 

    Load more comments...