গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এপার্কে বাঘ-সিংহ, পশু-পাখি মুক্ত অবস্থায় অবাধে বিচরণ করে। মানুষ সম্প্রদায় গাড়ির খাঁচায় বন্দী হয়ে ঘুরপাক খেয়ে নানা প্রজাতির জীব-জন্তু, পশু-পাখি দেখে চিওবিনোদন করেন। কখনো প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যের আড়ালে, কখনোবা সামনে এদের দেখা মেলে। এতে চোখ-মন দুটোই জুড়ায়।
এক রাতে মুক্ত একদল বাঘ পাহারাদারদের ফাঁকি দিয়ে চুপিসারে পার্কের সীমানা প্রাচীরের বাইরে চলে আসে। সবুজে ঘেরা ভাওয়ালের ঐতিহ্য গজারী অরণ্যের ফাঁকে পাকা ধানক্ষেতে অবস্থান নেয় তারা। অর্ধেক ক্ষেত জুড়ে ধান আর অর্ধেক মাড়াই করা। মাড়াইকৃত খড় স্তূপ করে সাজানো ছিল ক্ষেতের অর্ধাংশের মাঝখানে। বাঘদলের আত্মরক্ষার জন্য চমকপ্রদ জায়গা। তারা অবস্থান নেয় খড়ের স্তূপের চারপাশে।
স্তূপের উপরে একদল বানর রাত্রি যাপন করছিল। বাঘের উপস্থিতি টের পেয়ে ভয়ে বানরদল চেঁচিয়ে উঠে। বানরের চেঁচামেচি শব্দ শুনে খড়ের নিচে লুকিয়ে থাকা দুটো সাপ বেরিয়ে আসে। সাপ দেখে বাঘেরা দৌড়ে গজারি বনে অবস্থান নেয়।
বানরেরা ভাবে তাদের ভয়ে বাঘেরা পালিয়েছে। এতে বাননেরা তাদের বিজয় মনে করে বিজয়ের আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠে। বেশি উচ্ছ্বাসিত হয়ে এক দুষ্ট বানর খড়ের স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রজ্বলিত আগুনে চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠে। সেই আলো বাঘদের উপরেও পড়ে।
সজাগ হয়ে যায় পাহারাদার। দেখে ফেলেন বাঘদেরকে। গর্জে ওঠেন বাঘদের আটক করতে। নিজেদেরকে অক্ষত রেখে জীবিত অবস্থায় বাঘ আটকানো কিছুতেই সম্ভব হচ্ছিল না। নিরাশ হয়ে বাঘদেরকেও লোকালয়ে ছেড়ে দেয়া শুভ লক্ষণ নয়। বাধ্য হয়ে চালিয়ে দেন ‘পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি রাইফেল’ দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি। তুমুল গোলাগুলির শব্দে জেগে ওঠেন গোটা এলাকাবাসী। তারা ভাবেন ডাকাত দল হামলা করেছে। তারা পাহারাদারদের ডাকাত ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ছিনিয়ে নেন তাদের অস্ত্র। তারপর গণধোলাই।
এসুযোগে বাঘেরা পালিয়ে যান নিরাপদ আশ্রয়ে। আশ্রয়টা নিরাপদ হলেও বাঘেরা নিজেদের অজান্তে সাফারি পার্কেই ঢুকে পড়ে। এটা ছিল পাহারাদারদের জন্য অশনি সংকেত। এলাকাবাসীকে তারা কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না বাঘ ধরতে গুলি ছুড়েছেন। কেননা বাঘগুলোতো সাফারি পার্কেই আছে। ডাকাতির অভিযোগে পাহারাদারদের সাজা হল। নিজ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করলে সাজাতো পেতেই হয়, তাই না বন্ধুরা? আমরা সবাই যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করব।