Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সকল অাব্বু আম্মুদের বলছি! বয়োস্বন্ধিকালিন সময়ে ছেলেমেয়ের বন্ধু হোন!

পিতামাতারা তাদের বয়ঃসন্ধি বা টিনেজার সন্তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনেক সময় চিন্তায় পড়ে যান। আসলে বয়ঃসন্ধি সময় টা খুবই ক্রিটিকাল একটি সময়। এই সময় টিনেজার ছেলেমেয়েরা অধিকাংশ সময় বিভিন্ন ভুল করে থাকে এমনকি এই সময়ে তারা এমন কিছু কার্যকলাপ করে যা তাদেরকে আজীবন ভুগতে হয়। সাধারণত ১৩-১৯ বছরের সন্তানদের কে টিনেজার হিসাবে ধরা হয়।

এই বয়সের সন্তানদের বাবা মায়ের উচিত আলাদা যত্ন নেওয়া। সাধারণত আমাদের সমাজে বাবা মায়ের এই বিষয়টা তেমন খেয়াল করেনা। অনেকে বাবা মায়ের কাছে মনে হয় সন্তান বড় হচ্ছে তারা তাদের ভালো তারা বুঝে নিতে পারবে। কিন্তু এই সময়ে একটু আলাদা যত্ন নেওয়া উচিত।

বয়ঃসন্ধিকাল ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জগৎ। প্রত্যেক মানুষকেই এ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এ সময় ছেলেমেয়েদের মন মেজাজ খুব ওঠানামা করে। এই ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তো পরক্ষণেই আবার খুব খারাপ লাগছে। এুনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলো তো পরক্ষণেই তার পরিবর্তন। মনে হয়তো দারুণ খুশি, কিন্তু একটু পরেই ঘন বিষাদ। এ সময় শরীরের নিঃসৃত যৌন হরমোনগুলো ছেলেমেয়েদের মন মেজাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তাদের নিজেদের রাজা-রানী ভাবতে ভালো লাগে। তাদের আচার-আচরণে অনেক অভিভাবক বিব্রতবোধ করেন। কাউকে না মানার মনোভাব তাদের মধ্যে প্রচণ্ডভাবে জেগে ওঠে। এ সময় বাবা-মা কিংবা অন্য অভিভাবকদের সাথে তাদের বনিবনা হয় না। একটা দুর্বিনীত ভাব সব সময় উত্তেজিত করে রাখে। নেতিবাচক চিন্তা-চেতনা তাদের প্রভাবিত করে।

পারিবারিক পরিবেশ, স্কুল-কলেজের পরিবেশ, বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক উপাদান যেমন টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক তাদের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাদের মনে এক প্রকার লোভলালসা বাসা বাঁধে। তারা অনেক কিছু পেতে চায়। ভোগ করতে চায়। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে চায়।

প্রেমের নেশা এ সময়ের অন্যতম নেশা। জীবন বিলিয়ে দিয়েও তারা প্রেমের সফলতা বাস্তবায়ন করতে চায়। কারো কারো মধ্যে যৌন উচ্ছৃঙ্খলা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অনেকেই আবার এ বয়সেই যৌন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনটাকে বিষিয়ে তোলে। এ বিশৃঙ্খলার পরিণাম হচ্ছে বিষাদগ্রস্ততা। ফলে অনেকের মধ্যে নিজেদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি করার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার এ বয়েসের ছেলে মেয়েদের মাঝে মাঝে গৃহশিক্ষক বা পারপ্রতিবেশী বা নিকট আত্মীয়দের দ্বারা যেৌন নিপিরনের স্বিকার হতে দেখা যায়। ফলে এদের কেউ কেউ সাইকি হয়ে যায়। আবার কেউ পরবর্তীতে নিজেই চরিত্র হারিয়ে নিজেই য়েৌন নির্যাতন কারী হিসেবে আর্তপ্রকাশ করে। আর এভাবেই প্রজম্ম থেকে প্রজম্ম চলতে থাকে। এক জরিপে দেখা গেছে যে যৌন নির্যাতন কারীদের বেশীর ভাগই নিজে যেৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তাদের বয়সন্ধিকালে।

বয়ঃসন্ধিকালে নিজের শরীর সম্পর্কে কৌতূহল জাগাটা কোন নতুন ঘটনা নয়। এ সময়টাতে কৌতূহল বসত বিপরীত লিঙ্গের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ভাবনাও স্বাভাবিক নিয়মে আসতে পারে। একটা গল্প বলা যাক। আমাদের দেশের এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে পড়ে ক্লাস সিক্সে। নিয়মিত স্কুলে আসে। ক্লাস করে। একদিন ক্লাসরুমে তার হঠাৎ মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব। একটা দুটো ক্লাস করার পর আর ক্লাস করতেই পারেনি। মেয়েটির বাবা মাকে খবর দেয়া হয়। এরমধ্যে স্কুলের ডাক্তার পরীক্ষা করে জানালেন মেয়েটি প্রেগনেন্ট। বাবা মা স্বভাবিকভাবেই স্তম্ভিত। কি করে বা কার মাধ্যমে ঘটনাটি ঘটেছে তা গুরুত্বপুর্ণ নয়। আসল কথা হল ঘটনাটি ঘটেছে কারণ আমরা ছেলেমেয়েদের জন্য বয়স্বন্ধিকালে তাদের সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যাবে তা নিয়ে ভাবিনি। নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি। আজ যদি মেয়েটি তার বয়স্বণ্ধিকালে পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হতো তাহলে এ ভুল হতো না।

এ সময়ে মাদক আসক্তি ছড়িয়ে পড়াতে পারে তাদের জীবনে। তারা নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগতে থাকে। তাদের মধ্যে নিদ্রাহীনতা বাসা বাঁধে। ুধামন্দা থাকে। মাথা যন্ত্রণায় ছটফট করে। আত্মহত্যার প্রবণতা জাগে। নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখে। নিকটজনদের সাথে হিংস্র আচরণ করে। স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরীক্ষায় ফেল করে। এভাবেই একটি সম্ভাবনাময় জীবনের অপমৃত্যু ঘটে থাকে।

বর্তমানে টিনাজার বা উঠতি বয়সী তরুন তরুণীদের মাঝে হতাশা জনক সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বয়সে তারা নানান ধরনের বিশাল বিশাল স্বপ্ন দেখে থাকে। কোন কারনে এই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেই, তাদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়। এসময় মানসিক চাপ নেবার ক্ষমতা অধিকাংশ তরুণ তরুণীর মাঝেই থাকে না। মূলত এই কারনেই তাদের মাঝে খুব দ্রুত হতাশা বাসা বাধতে পারে।

হতাশায় আক্রান্ত হওয়ার সিমটম গুলো-
* সবসময় মন খারাপ করে বসে থাকা।
* নিজেকে অসহায়বোধ করা।
* রাগের পরিমান মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
* সকলের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। এমনকি বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করতে না চাওয়া।
* সবকিছুতেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলা
* যেকোনো কাজে স্বনির্ভর হতে না পারা।
* ঘুম ও খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে, ওজন হ্রাস পাওয়া।
* সবসময়ই নিজেকে ক্লান্তবোধ করা।

এসকল লক্ষন যার মাঝে দেখা যায়, নিঃসন্দেহে সে হতাশায় আক্রান্ত। তবে আর মাঝে ২-১ টি লক্কন দেখা দিলে, তেমন ভীত হবার কারন নেই। কিন্তু বেশির ভাগ লক্ষনি পরিলক্ষিত হলে, অবশ্যই সতর্ক হয়ে যেতে হবে। এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে। যদি তার যথাযথ চিকিৎসা না হয় তাহলে এর ফলাফলটাও যথেষ্ট ভয়াবহ হতে পারে! যেমন- পড়াশুনা ও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে সে পিছিয়ে পরতে পারে। সবার সাথে হয়ত সঠিক সম্পর্ক‌ বজায় রেখে চলতে না পারবে না। যৌনতা বিষয়ক সমস্যা হতে পারে। সর্বো‌পরি যে কোনো সময় আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক কর্ম‌কান্ডে লিপ্তও হতে পারে। তাই সকল সাবধানতা মেনে চলা জরুরি।

সতর্ক থাকুনঃ

আপনার টিনেজার সন্তান কি করছে তা জানুন=

এই ধরনের বয়সের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ে যায় যেমন ড্রাগ ইস্যু, যৌন ইস্যু এবং বিভিন্ন ক্রিমিনাল কর্যকলাপে লিপ্ত হয়। সতর্ক থাকুন সন্তানদের এইসব কর্মকান্ডের প্রতি। অনুসন্ধানে যাওয়ার পূর্বে তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলুন অথবা পরিবারের যেই সদস্য আপনার সন্তানদের সাথে ফ্রি তাদেরকে দিয়ে জানার চেষ্টা করুন।

আচরণ গত সমস্যা লক্ষ করুন=

যেমন হতে পারে তার স্কুলের রেজাল্ট কেন খারাপ হচ্ছে, বা তার যেইসব জিনিসের প্রতি সখ ছিল তা কমে যাচ্ছে কেন তা লক্ষ করুন। এইগুলো হচ্ছে খুব ভালো সিম্পটম যা আপনার সন্তানের আচরণের পরিবর্তন লক্ষ করার। প্রতিটি ছোট ছোট তথ্য নিন আপনার সন্তানের যা আপনাকে বুঝিয়ে দিবে তারা কোনো সমস্যায় আছে কিনা।

তার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন=

আপনার ছেলেমেয়ের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখুন। আপনার ছেলেমেয়ের সম্পর্কে তাদের সাথে কথা বলুন। বন্ধুদের চেয়ে ভালভাবে আপনার ছেলেমেয়ে সম্পর্কে কেউ আপনাকে জানাতে পারবে না।

আপনার ছেলেমেয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে জানুন=

সব টিনেজাররা ভালো স্টুডেন্ট হয় না। তাই আপনার ছেলেমেয়ের পড়ালেখার অগ্রগতি সম্পর্কে ধারনা রাখুন, তাতে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ধারনা আপনি পাবেন।

অনেক বাবা-মা সন্তানদের যথাযথ সময় না দিয়ে শুধু শাসন করতে পছন্দ করেন। আবার চাকরিজীবী বাবা-মায়ের সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে কাছেই পায় না। কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানকে অতি আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে যায়। ফলে সন্তান যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অর্থাৎ সন্তানের মূল অভিভাবক পরিবার। পরিবার থেকে যদি সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়া হয়, ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দেয়া হয়, নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ দেয়া হয়, তাহলে বয়ঃসন্ধিকালে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা অনেকের অনেক কম থাকে।

সামাজিক বা ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে আমরা খোলামেলাভাবে অনেক কিছুই হয়তো প্রকাশ করতে পারি না। সরাসরি অনেক কথা না বলে হয়তো সামাজিক ঘটনার মাধ্যমে বোঝানো সম্ভব।বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের জন্য দরকার বাবা-মা আর অভিভাবকদের ভালোবাসা। সন্তানের প্রতি বাড়তি যত্ন আর সতর্কতা। সন্তানকে ভালোমন্দ সব শেখানো-জানানোর দায়-দায়িত্ব তো বাবা-মার উপরই পড়ে। বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে ভালো শিক্ষক আর বন্ধু হতে হবে বাবা-মাকেই।
তারা একটু সচেতন হলে বয়স্বন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা আর বিপথে যাবে না।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৭৩ Views