Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রোহিঙ্গানির্যাতন-ইস্যুতে কি বাংলাদেশ ভয়ংকরভাবে অপরাজনীতির ও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছে?







রোহিঙ্গানির্যাতন-ইস্যুতে কি বাংলাদেশ ভয়ংকরভাবে অপরাজনীতির ও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছে?
সাইয়িদ রফিকুল হক


 
রোহিঙ্গা মানেই সবাই ভালোমানুষ নয়—আবার সবাই খারাপও নয়। এরা মুসলমান কিংবা নামধারীমুসলমানও হতে পারে। কিন্তু এদের অনেকেই জঙ্গিতৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিল, আর এখনও আছে। ইতঃপূর্বে দেখা গেছে, তারা নিজেদের শক্তিমত্তারপ্রমাণ দিতে নিরপরাধ বৌদ্ধভিক্ষুদের পর্যন্ত নির্বিচারে হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে। আর খুনখারাবি, লুটতরাজসহ নানাভাবে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধসম্প্রদায়ের উপর নির্বিচারে হামলা করেছে।
 
মুসলমানদের মধ্যে কারও-কারও স্বভাব খুব খারাপ। জঙ্গিপনা এদের খুব ভালো লাগে। এরা কোথাও গিয়ে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না। আর এদের কারও কোনো ধর্ম সহ্য হয় না। এরা অন্যকোনো ধর্ম সহ্য করতে পারে না। এই নামধারীমুসলমানশ্রেণীটি সবসময় উগ্রস্বভাবের হয়ে থাকে। এরা মনে করে থাকে: পৃথিবীতে শুধু একমাত্র ইসলামধর্মই থাকবে। আর ইসলামই একমাত্র ধর্ম। ইসলামধর্ম ব্যতীত কারও-কোনো ধর্ম মানা যাবে না, সহ্য করা যাবে না, সহ্য করা ঠিক হবে না, অন্যকোনো ধর্ম সম্মান করা যাবে না! এই শয়তানী ও ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনার কারণে তারা সবসময় দেশে-দেশে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। আর কোনো দেশে সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও তারা জঙ্গিতৎপরতার মাধ্যমে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে, এবং এখনও দিচ্ছে। মূলত এই শ্রেণীর মুসলমান আজও পরমতসহিষ্ণু হতে পারেনি বলেই তারা একেকটি জঙ্গি হয়ে উঠছে।
 
বর্তমানে যে রোহিঙ্গানির্যাতন হচ্ছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু এর মূলেও একশ্রেণীর রোহিঙ্গামুসলমানরাই দায়ী। এরা মিয়ানমারে ‘স্বাধীন আরাকানরাজ্য’ বা ‘স্বাধীন রাখাইনরাজ্য’ বা ‘রোহিঙ্গাস্তান’ বা ‘রোহিঙ্গাল্যান্ড’ গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘকাল যাবৎ চোরাগোপ্তা-হামলাসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপর যারপরনাই হামলা, আক্রমণ ও অমানবিক অপরাজনীতি করেছে। আর এরই ফলে তারা (রোহিঙ্গাসম্প্রদায়) এখন সমূলে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হতে চলেছে।
এখানে, একটি কথা জরুরিভিত্তিতে বলে রাখা আবশ্যক যে, মিয়ানমারের সামরিক-সরকার সামরিকবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় নৃশংসভাবে ‘রোহিঙ্গামুসলমানদের’ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করছে। রাখাইনরাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সমূলে ও নির্যাতনের মাধ্যমে উচ্ছেদ করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে: মিয়ানমারের সামরিক-সরকার শুধু রোহিঙ্গামুসলমানদেরই উচ্ছেদ ও উৎখাত করছে। অন্য ধর্মের মানুষগুলো রোহিঙ্গাদের প্রতি এই অমানবিক আচরণ দেখেও একেবারে নীরব, নিশ্চুপ ও নির্বিকার! কিন্তু কেন? এর কারণগুলো হচ্ছে:
 
১. বার্মায় সুদীর্ঘকাল যাবৎ সামরিকশাসন চলছে। আর সামরিকশাসন মানেই জারজদের দ্বারা উৎপাদিত ভয়ংকর এক জারজশাসন। এরা আইনকানুনের প্রতি সবসময় বৃদ্ধাঙ্গুলিপ্রদর্শন করে থাকে। যেমন, আমরা পাকিস্তানে সামরিকশাসন নামক জারজশাসন দেখেছি। এদের কাছে মনুষ্যত্ব বলে কোনো কথা নাই। আর এদের কাছে সবসময় ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিই সমাদৃত। তাই, সাধারণ মানুষ এদের ভয় করে থাকে। ১৯৭১ সালে, পাকিস্তানীসামরিকজান্তা নামক জারজগোষ্ঠী একইভাবে বাঙালি-জাতিকে দমন করে বাংলাদেশে তাদের চিরস্থায়ী-কলোনী বানাতে চেয়েছিলো। সামরিকজান্তারা সবসময় এমনই অমানবিক, বর্বর ও নিষ্ঠুর হয়ে থাকে।
 
২. রাখাইনের স্বাধীনতাকামী-রোহিঙ্গামুসলমানশ্রেণীটি একটা সময় ভয়ংকর হিংস্র হয়ে উঠেছিলো। এদের হাতে মুসলমান ব্যতীত অপরাপর জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে সকল মানুষই কম-বেশি নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিলো। তাই, এই মানুষগুলো এখন রোহিঙ্গামুসলমানদের পক্ষে কোনো কথা বলতে নারাজ। এখানে, অন্যধর্মের মানুষগুলো মিলেমিশে-একসঙ্গে রয়েছে। শুধু সংঘাতপ্রিয় হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গামুসলমান নামক একটি গোষ্ঠী। তাও সকল রোহিঙ্গাই আবার সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়। আর এই সন্ত্রাসবাদীগোষ্ঠীটির কারণেই মিয়ানমারের সর্বস্তরের রোহিঙ্গামুসলমানই এখন নৃশংস বার্মিজ-সেনাবাহিনীর দ্বারা সীমাহীন নির্যাতনের শিকার। তাই, মিয়ানমারে এখন রোহিঙ্গামুসলমানদের পক্ষে কথা বলার মতো কোনো লোকই নাই।
 
মিয়ানমারে শুধু রোহিঙ্গামুসলমানদেরই উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এখানে, বসবাসকারী হিন্দু, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য নাম-না-জানা ধর্মাবলম্বীদের উপর কিন্তু হামলা করা হচ্ছে না। এর কারণ কী? কারণ, মুসলমান ব্যতীত এখানকার অন্যধর্মের কোনো মানুষই স্বাধীনতাকামী কিংবা জঙ্গি হচ্ছে না। তারা সকলে মিলেমিশে রয়েছে। সমস্যা যত মুসলমানদের ক্ষেত্রে। এরা কারও সঙ্গেই মিলেমিশে থাকতে পারে না। ইসলামধর্ম ব্যতীত এদের কাছে অন্য সব ধর্ম বিতৃষ্ণাদায়ক মনে হয়। আর এর জন্য মিয়ানমারের রোহিঙ্গামুসলমানদের জঙ্গিগোষ্ঠীটিই দায়ী। এরাই নানাভাবে ইসলামের অপব্যবহার করে মিয়ানমারে জাতিগতসংঘাতসৃষ্টি করেছে। আর এজন্য বহুলাংশে দায়ী জঙ্গিরাষ্ট্র পাকিস্তান। কারণ, এরাই ১৯৪৭ সাল থেকে মিয়ানমারের জঙ্গি-রোহিঙ্গাগোষ্ঠীকে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলো। কিন্তু একটা সময় চীন এখানে অযাচিত দখলদারিত্ব মাতবরি, রাজত্ব ও ত্রাস শুরু করলে চীনকে বড়ভাই মেনে পাকিস্তান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এদের কারণেই রোহিঙ্গারা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে জঙ্গি হয়েছে। পাকিস্তানসহ সর্বস্তরের মদদদাতাগোষ্ঠী পঞ্চাশদশকের শেষদিকে জঙ্গি-রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে মদদশক্তি প্রত্যাহার করে নিলে স্বাধীনতাকামী-রোহিঙ্গারা ১৯৬২ সালের আগেই একেবারে নিস্তেজ ও শক্তিহীন হয়ে বার্মিজ-সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আর তখন থেকেই নিজবাসভূমে রোহিঙ্গামুসলমানরা বার্মিজ-সরকারের চক্ষুশূল হয়ে পড়ে।
 
রোহিঙ্গামুসলমানদের বার্মায় প্রথম জঙ্গিতৎপরতা:
 
রোহিঙ্গামুসলমানরা ‘রাখাইনপ্রদেশকে’ মূল বার্মার ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে তা তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার এক উচ্চাভিলাষীপরিকল্পনাগ্রহণ করেছিলো। এজন্য তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন মুজাহিদগ্রুপ-এর জন্ম হয়। আর তারা ভয়ানক অপতৎরতাও চালিয়েছিলো। এইসময় রোহিঙ্গামুসলমানদের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় বার্মিজ-সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গামুজাহিদগণ, বার্মার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াইসংগ্রাম চালিয়েছিলো ১৯৪৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু একটা দেশের একটা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াইসংগ্রাম চালানোর মতো মনোবল, শক্তি, সাহস ও সামর্থ্য রোহিঙ্গামুজাহিদদের ছিল না। ফলে তারা একটা সময় পরাজিত হয়ে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলো। তবুও তাদের স্বাধীনতার স্পৃহা কখনও নির্বাপিত হয়নি। আর এই অপচেতনার কারণেই তারা বার্মার সকল সরকারের কাছে উপেক্ষিত ও ঘৃণিত হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গামুসলমানরা আজ নিজ-বাসস্থান থেকে সমূলে বিতাড়িত হয়ে সম্পূর্ণ উদ্বাস্তু।
১৯৬২ সালে বার্মা সামরিকজান্তাদের দখলে চলে যায়। আর তখন থেকেই রোহিঙ্গারা আরও বেশি নির্যাতিত ও শোষিত হতে শুরু করে। এইসময় রোহিঙ্গামুসলমানরা তাদের ভোটাধিকারও হারায়।
 
রোহিঙ্গামুসলমানদের স্বাধীনতার নামে এই জাতিগতসংঘাতসৃষ্টির জন্য তৎকালীন বার্মার আরেক সামরিকজান্তা জেনারেল নে উইন ১৯৮২ সালে বার্মিজ-নাগরিকত্ব-আইন পাশ করে। কিন্তু নানাপ্রকার উগ্রপন্থার কারণে সে সেই সময় রোহিঙ্গা তথা রোহিঙ্গামুসলমানদের নাগরিকত্ব নিষিদ্ধ করে। মূলত তখন থেকেই রোহিঙ্গারা আবারও অস্ত্রধারণ করতে শুরু করে।
বর্তমানেও তাদের স্বাধীনতাসংগ্রাম চলছে। একদিকে তারা উচ্ছেদ হচ্ছে—অপরদিকে তাদের একটি শ্রেণী বার্মার সামরিকবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে।
২০০০ সালের শেষদিকে রোহিঙ্গাদের একটি শ্রেণী ‘স্বাধীন রাখাইনরাজ্য’ গড়ে তোলার জন্য সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নেয়। ২০০১ সালের দিকে এটি বার্মার সামরিক-সরকারের গোচরীভূত হলে তারা এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধযুদ্ধে নেমে পড়ে। এরপর থেকেই মিয়ানমারের সামরিকজান্তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস প্রতিরোধপন্থা বেছে নেয়।
অনেকে বলে থাকেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গামুসলমানরা ২০১২ সাল থেকে বাঁচার জন্য অস্ত্র ধরেছে। কথাটি পুরপুরি সত্য নয়। এরা ২০০০ সালের শেষদিকেই আবার নতুনভাবে অস্ত্র ধরেছে। আর বাঁচার জন্য অস্ত্র ধরেছে—একথাটিও সত্য নয়। কারণ, যেকোনো সংকট ও সমস্যা আলাপআলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। তাছাড়া, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা মূল জনগোষ্ঠী নয় যে তারা স্বাধীনতা চাইবে। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫% রোহিঙ্গামুসলমান হবে। এরা কীভাবে স্বাধীনতা চাইতে পারে? আসলে, সারাপৃথিবীতে মুসলমানদের মিলেমিশে থাকার মানসিকতা কমে যাচ্ছে। এরা সবখানে নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বজাহির করে অন্যান্য ধর্মের মানুষদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করে শুধু মুসলমানিত্বপ্রকাশ করতে চায়। আর এই মানসিকতাই হলো আজকের বিশ্বে সবচেয়ে বড় জঙ্গিপনা।
মিয়ানমারের নারী-শিশুরা আজ তাদেরই রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। এটি তাদের জন্য দুর্ভাগ্য। এজন্য রোহিঙ্গামুসলমানদের স্বাধীনতাকামীশ্রেণীটি ও সামরিকজান্তাগং সমভাবে দায়ী। মাঝখানে নিজেদের সহায়সম্বল ও ভিটেমাটি হারিয়ে বিপদেআপদে পতিত হয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গামুসলমান তথা নারী ও শিশুগণ। মিয়ানমার-সরকারের উচিত শুধু সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু এভাবে রোহিঙ্গা দেখামাত্র তাদের নিধন করার পরিকল্পনাটা আগ্রাসী, অমানবিক, নৃশংস, এবং আমাদের দেশে ১৯৭১ সালে সর্বকালের কুখ্যাত পাকিস্তানী-জারজ-সেনাবাহিনীর মতোই ভয়াবহ। আমরা এর বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও নিন্দাজ্ঞাপন করছি।
 
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়প্রশ্রয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্তমান সিদ্ধান্ত:
 
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে কারও সমর্থন বা সিদ্ধান্ত পেয়েছে কি? পায়নি। আর বাংলাদেশ এব্যাপারে ভুল করছে নাতো? কারণ—
 
১. রোহিঙ্গাদের আশ্রয়প্রশ্রয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষে এখনও আন্তর্জাতিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত বা স্বীকৃতি মেলেনি।
 
২. জাতিসংঘ রোহিঙ্গা-শরণার্থীদের আশ্রয়প্রশ্রয়ের ব্যাপারে জাতিসংঘের স্বীকৃতি ও মধ্যস্থতার কোনো আভাস দেয়নি। এব্যাপারে জাতিসংঘের দায়িত্বে ও অধীনে কোনোপ্রকার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়নি।
 
৩. রোহিঙ্গা-শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশ্বের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়নি। বাংলাদেশ আজও জানে না—শরণার্থী হিসাবে বাংলাদেশে আশ্রিত এই রোহিঙ্গারা কবে, কখন, কীভাবে আবার নিজদেশে ফিরবে! কিংবা এরা আদৌ ফিরতে পারবে কিনা?
 
৪. রোহিঙ্গা-ইস্যুটি দীর্ঘদিনের ও চলমান একটি বড়সড় সমস্যা। কিন্তু রোহিঙ্গা-ইস্যুতে আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের কোনো অধিবেশনেই (সাধারণ ও নিরাপত্তা উভয়ই) আলাপ-আলোচনা হয়নি, এবং সমস্যাটি সমাধানের জন্যও কোনো নীতিগত-সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।
 
৫. ভবিষ্যতে জাতিসংঘ কি বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী-রোহিঙ্গাশরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপগ্রহণ করবে? স্বাধীনতার ৪৬বছর পরও বাংলাদেশরাষ্ট্র আটকেপড়া পাকিস্তানীনাগরিক তথা বিহারীদের আজও পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে পারেনি। এখানে, জাতিসংঘ কোনো ভূমিকা রাখেনি—আর রাখবেও না। আর এব্যাপারে বিশ্বসম্প্রদায়ের কেউ কোনো কথা বলেনি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারেও যদি এমনটি ঘটে! এর দায়দায়িত্ব কে নিবে?
 
তবে কীসের ভিত্তিতে জঙ্গি-সমস্যাসঙ্কুল রাষ্ট্র বাংলাদেশ এতো-এতো রোহিঙ্গাদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং আরও দিবে? বিশেষ করে এই রোহিঙ্গাদের একটি শ্রেণী জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আবার এদের অনেকেরই রয়েছে অস্ত্রপ্রশিক্ষণ! তাহলে, এই বিপজ্জনক-পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার দায়দায়িত্ব কি শুধুই বাংলাদেশের? আর কারও কোনো দায়দায়িত্ব নাই?
 
আজকে দেখি, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কতিপয় মুসলিমরাষ্ট্র উঠেপড়ে লেগেছে, খুব তোড়জোড় করছে, এবং এরা একেকজন বিশ্বমিডিয়ার সামনে বড়-বড় কথা বলে খুব নেতাগিরি দেখাচ্ছে। কিন্তু এদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। আর এসব ব্যাপারে আমেরিকা, সৌদিআরব, চীন, ভারত, পাকিস্তান একেবারে নীরব ও নিশ্চুপ। তবে সব দায় কি শুধু বাংলাদেশের? আমার মনে হয়: দেশের স্বার্থে আজ এসব ব্যাপারে আরও বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। মিয়ানমার এদের ফেরত নিতে না চাইলে বাংলাদেশ তখন কী করবে? ইতোমধ্যে মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রটির সামরিকজান্তা-জারজরা বলেছে, “রোহিঙ্গারা বাঙালি সন্ত্রাসী!” তারা আরও বলেছে, “বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী যে-সব রোহিঙ্গার ‘বার্মার নাগরিকত্বসনদ’ আছে—তারাই শুধু দেশে (মিয়ানমারে) ফিরতে পারবে?” এটা কীভাবে সম্ভব? কারণ, অধিকাংশ রোহিঙ্গারই কোনো নাগরিকত্বসনদ নাই। তার কারণ, সামরিকজান্তারাই তো রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। এখন তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে জানের ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে নাগরিকত্বসনদ চায় কীভাবে? তাই, বলছিলাম আজ যারা গলাবাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে খুব উসৎসাহ দেখাচ্ছে তখন এইসব ক্ষণিকের মাতবরদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখন বাংলাদেশ এতো-এতো রোহিঙ্গাদের কীভাবে পুনর্বাসিত করবে? এব্যাপারে একবার ভেবে দেখেছেন কিছু?
 
রোহিঙ্গামুসলমানদের নিয়ে বাংলাদেশের কতিপয় ঘাতকসংগঠনসহ বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতি:
 
১. রোহিঙ্গামুসলমানদের একটি জঙ্গিসংগঠন রয়েছে। এই জঙ্গিসংগঠনের নাম: ‘আরসা অর্গানাইজেশন’। সম্প্রতি এই সংগঠনটি আইএস-জঙ্গিদের সঙ্গে মিলেমিশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টহলরত পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ১২জন পুলিশকে হত্যা করেছে। এসব কীসের আলামত? রোহিঙ্গাদের জঙ্গিশ্রেণীটি এখনও অপকর্মে লিপ্ত।
 
২. অতিসম্প্রতি রোহিঙ্গাদের জঙ্গিসংগঠন ‘আরসা অর্গানাইজেশন’-এর প্রধান-জঙ্গি হাফিজের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দাসংস্থা আইএসআই-এর প্রধানসহ ইরাকের এক আইএস-জঙ্গির ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এরা বাংলাদেশে জঙ্গিদেরও অনুপ্রবেশ ঘটাতে চায়। এদের এমনই একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
 
৩. মিয়ানমারের কথিত রোহিঙ্গানির্যাতনের বিরুদ্ধে আমেরিকা, চীন, পাকিস্তান, সৌদিআরব একদম নীরব রয়েছে। আর এরা প্রত্যেকে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনবাংলাদেশরাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী। শুধু তুরস্ক সরব। আর তুরস্ক বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়প্রশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে খুব সোচ্চার। কিন্তু আশেপাশে এতো দেশ থাকতে শুধু বাংলাদেশ কেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিবে? চীন তো মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তীরাষ্ট্র, এবং এরা খুব শক্তিশালী, আর বিশ্বের পাঁচটি পরাশক্তির একটি। তবুও তারা কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করছে না কেন? আসলে, এর মধ্যে এক ভয়ংকর অপরাজনীতি খেলা করছে। আর সদ্যোস্বাধীন বাংলাদেশরাষ্ট্রকে ফাঁদে ফেলার নতুন কোনো ষড়যন্ত্র নয় তো?
 
৪. বাংলাদেশের একশ্রেণীর মোল্লা, কাটমোল্লা, হুজুর, পাতিহুজুর ও মাদ্রাসাপড়ুয়া অর্ধশিক্ষিত-জীবগুলো নিজের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গানারীদের বিয়ে করছে! এদের উদ্দেশ্য কী? এরা সম্ভবত এই নারীদের পরবর্তীতে জঙ্গিপনার কাজে ব্যবহার করবে। তবে অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ-সরকার রোহিঙ্গানারীদের সঙ্গে যেকোনো বাঙালির বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপনকে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে আইন পাশ করিয়েছে। বিলম্বে হলেও এটি আশার কথা।
 
৫. বাংলাদেশে আশ্রিত-রোহিঙ্গারা একসময় নাগরিকত্বগ্রহণ করবে। এরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশবিরোধীঅপকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারে। তখন এদের অপতৎপরতা কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে?
 
৬. সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিকভাবে সমুদ্রসীমার মামলায় মিয়ানমার আমাদের বাংলাদেশের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে, আমাদের কাছে সরাসরি-যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে পাকিস্তান। এতে আরও পরাজিত হয়েছে পাকিস্তানের সমর্থক ও চিরমিত্র আমেরিকা, চীন ও  সৌদিআরবের মতো কতকগুলো মানবতাবিরোধীরাষ্ট্র। বিশ্বরাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এরা এখন রোহিঙ্গামুসলমানদের ব্যাপারে একজোট। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এব্যাপারে আমাদের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত।
৭. আন্তর্জাতিকভাবে খবরে প্রকাশিত হয়েছে, পাকিস্তান নামক জারজরাষ্ট্রটি মিয়ানমারের নিকট বিভিন্নরকম আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রয় করছে। এসব কীসের আলামত? তাই, এখন রোহিঙ্গা-ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে আমাদের পুরানো শত্রু আমেরিকা, পাকিস্তান, চীন, সৌদিআরব সেই একাত্তরের প্রতিশোধ নিতে চায় না তো?
 
৮. শয়তানের জারজরাষ্ট্র পাকিস্তান হঠাৎ মিয়ানমারের কাছে এতো-এতো অস্ত্র বিক্রয় করবে কেন? আর এব্যাপারে চীন একেবারে নীরব কেন? এর রহস্য কী?
 
নিজেদের আলাদা ভূখণ্ড গড়ার জন্য আরাকান-রোহিঙ্গাজঙ্গিদের আরসা’র পাশাপাশি ‘রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ও রয়েছে। এগুলো আমাদের জন্য ভয়ানক চিন্তার বিষয়। তাই, আগে থাকতেই আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে। আর এব্যাপারে হতে হবে একেবারে আপসহীন।
 
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্যচট্টগ্রাম অঞ্চলটি ভয়ানক দুর্গম এলাকা। বিশেষ করে আমাদের পার্বত্যচট্টগ্রাম-জেলাটি ভয়ংকর এলাকা। আর এখানে যেকোনো অপশক্তির ঘাঁটি তৈরি করাটা খুব সহজ। তাই, সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী-জঙ্গিরা এখানে পাকিস্তানের আইএসআই ও ইরাকভিত্তিক আইএস-এর সহযোগিতায় ও নির্দেশক্রমে বাংলাদেশবিরোধী ঘাঁটি গড়বে নাতো? আর  এব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে পাকিস্তান ও চীন। আর অর্থসরবরাহ করবে শয়তানের আরেক তাঁবেদাররাষ্ট্র সৌদিআরব। কাজেকাজেই বিষয়টি এখনই জরুরিভিত্তিতে ভেবে দেখার মতো।
সবকিছু দেখে বেদনার্ত-হৃদয়ে জাতীয় স্বার্থে মনে চিন্তাজাগ্রত হয়: রোহিঙ্গানির্যাতন-ইস্যুতে কি বাংলাদেশ ভয়ংকরভাবে অপরাজনীতির শিকার হতে যাচ্ছে?
 
মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী-আগ্রাসী সামরিকজান্তা-সরকার নিপাত যাক।
 
জয় হোক বাঙালির।
আর চিরঅমর হোক আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
 
 
 


 
 
সাইয়িদ রফিকুল হক
পূর্বরাজাবাজার, ঢাকা,
বাংলাদেশ।
০৬/০৯/২০১৭
২ Likes ২ Comments ০ Share ১৬০ Views