আমি রূপকথা। গল্পের রূপকথা নই, মানুষ রূপকথা। বাবা-মা-ভাই-বোনের অতি আদরের রূপকথা। স্কুলের শিক্ষক আর সহপাঠীদের কাছে প্রাণোচ্ছল পরিচিতি পাওয়া রূপকথা। একটা সময়ে কী সব ছেলেমানুষি পাগলামিই না করতাম! কলেজে পড়ার সময় সামনের বাড়ির নাম না জানা এক সুদর্শন ছেলে ছিল। বহুকষ্টে তার নাম জোগাড় করে একবার তাকে বেনামিতে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। একবার ঈদ কার্ড ও পাঠিয়েছিলাম। ঈদের মাস দুয়েক বাদেই তারা তল্পিতল্পা গুটিয়ে কোথায় জানি চলে গিয়েছিলো! মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম সুযোগ পেলে তার কাছে এসবের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবো। তার দেখা আর পাইনি। আহারে! তখন কত সহজ সরলই না ছিলাম! একটুখানি নির্দোষ আনন্দের জন্য কি কি সব কুবুদ্ধি বের করতাম। তখন নিজের অবস্থানটাও কত্তো শক্ত ছিলো! এখনকার মত নড়বড়ে অস্তিত্ববাদী ছিলাম না। তখন দুচোখ জুড়ে কতো স্বপ্ন ছিলো! পুলিশ ইন্সপেক্টর হয়ে বাতাসে ঝুঁটি উড়িয়ে বাইকে চড়ে ঘোরার স্বপ্ন দেখতাম নইলে স্বপ্ন দেখতাম এপ্রন গায়ে চড়িয়ে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে ঘুরছি। আর আজ? আজ আমি পথের ভিখিরিনী। শুধুমাত্র একটা ভুল! একটা ভুল আমার জীবনটাকে লণ্ডভণ্ড করে দিলো। সেই ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে গ্রীবা উঁচু করে ঘুরে বেড়ানো রাজহংসী আজ পথের ধূলোয় লুটোপুটি খায়। সবার সবচেয়ে আদরের মেয়েটা আজ সবার করুণার পাত্রী হয়ে গেছে। আজ চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে ভেজা বালিশে ঘুমাই। যা কিছু অবহেলায় হারিয়েছি, যা কিছু স্বেচ্ছায় ফেলে দিয়েছি সেসবের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। কোনো এক সময়ের অপার সম্ভাবনাময় মেয়েটা আজ মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে ভাবে, দুবেলা দুমুঠো খাবারের কথা ভেবে অস্থির হয়। নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে দিশেহারা হয়। এখন লোকের কটূকথা আর অপমানজনক ব্যবহার মনে কোনো ছাপ ফেলেনা। এই একজীবনে এত বেশি হোঁচট খেয়েছি যে বোধ-শোধ যাওবা ছিল সব ভোঁতা হয়ে গেছে।
মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই এখনো আছে। আছে বলা হয়তো ঠিক হবেনা, কচ্ছপের মতো কামড়ে ধরে পড়ে আছি। আমি যে ঘরে থাকি তার জানালার বাইরে অনেক অনেক গাছ। জানালার অনতিদূরে চাঁপা গাছ। বৃষ্টির অব্যবহিত পরেই গাছ ঝাঁপিয়ে চাঁপা ধরে, গন্ধে ভরে যায় পুরো এলাকা। চাঁপাগাছ বেয়ে উঠেছে মাধবীলতা। বর্ণীল ফুলের সাঁজিতে সেজে উঠে মাধবীলতার ঝাড় আর মৃদু গন্ধ ছড়ায় অবিরাম। আরেকটু দূরে কদম গাছ দেখা যায়। তাকালেই দেখতে পাই ঝকঝকে পাতা। ফুল আসবে কদিন পরই। পত্রপুষ্পে ছেয়ে যায় চারদিক, আমাকে ঘিরে থাকে মরুভুমির শুন্যতা। সুখ-শান্তি এখন আমার কাছে রূপকথার গল্পের মতই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। রূপকথা শোনার মতো করেই অন্যদের সুখশান্তির গল্প শুনে যাই আর ভাবি এই একজীবনে সবাই সবকিছু পায়না, আমিও সেই না পাওয়াদের একজন।
২৯.০৫.২০১৫
মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই এখনো আছে। আছে বলা হয়তো ঠিক হবেনা, কচ্ছপের মতো কামড়ে ধরে পড়ে আছি। আমি যে ঘরে থাকি তার জানালার বাইরে অনেক অনেক গাছ। জানালার অনতিদূরে চাঁপা গাছ। বৃষ্টির অব্যবহিত পরেই গাছ ঝাঁপিয়ে চাঁপা ধরে, গন্ধে ভরে যায় পুরো এলাকা। চাঁপাগাছ বেয়ে উঠেছে মাধবীলতা। বর্ণীল ফুলের সাঁজিতে সেজে উঠে মাধবীলতার ঝাড় আর মৃদু গন্ধ ছড়ায় অবিরাম। আরেকটু দূরে কদম গাছ দেখা যায়। তাকালেই দেখতে পাই ঝকঝকে পাতা। ফুল আসবে কদিন পরই। পত্রপুষ্পে ছেয়ে যায় চারদিক, আমাকে ঘিরে থাকে মরুভুমির শুন্যতা। সুখ-শান্তি এখন আমার কাছে রূপকথার গল্পের মতই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। রূপকথা শোনার মতো করেই অন্যদের সুখশান্তির গল্প শুনে যাই আর ভাবি এই একজীবনে সবাই সবকিছু পায়না, আমিও সেই না পাওয়াদের একজন।
২৯.০৫.২০১৫
Comments (4)
নতুন বাসায় পাখিরা খোঁজে জীবনানন্দ।
পাখিদের সাথে আমিও খুঁজছি জীবনানন্দ ! আপনি পেয়েছেন কি ?
নতুন বাসায় পাখিরা খোঁজে জীবনানন্দ। - বাহ! চমৎকার লাগল।
শুভ সকাল প্রিয় কবি!