Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

যারা বলে ‘শবে বরাত বলে কিছু নাই’—তারা ইসলামের শত্রু ওহাবীসম্প্রদায়। আর ‘শবে বরাতে’র পক্ষে কয়েকটি দলিল পেশ






যারা বলে ‘শবে বরাত বলে কিছু নাই’—তারা ইসলামের শত্রু ওহাবীসম্প্রদায়। আর ‘শবে বরাতে’র পক্ষে কয়েকটি দলিল পেশ
সাইয়িদ রফিকুল হক


 
বিশ্বমুসলমানের নিকট অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি রজনী(রাত)হলো ‘শবে বরাত’ বা ‘লাইলাতুল বরাত’। প্রতিবছর ‘শাবান-মাসে’র ১৫ তারিখ রাতে এই মহিমান্বিত-রাতটি উদযাপিত হয়। আর ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশ্রেণীর মুসলমানের নিকট এই রাতটি ‘শবে বরাত’ বা ‘শব-ই-বরাত’ নামে সুপরিচিত। এটি খুবই পুণ্যময় রাত। আরবি-ভাষায় এই রাতটিকে ‘লাইলাতুল বরাত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যার সামান্যতম বিশ্বাসও আছে তার কাছে এই রাতটি খুবই পুণ্যময় ও বরকতময় বলে মনে হবে।
 
আমাদের পবিত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এই রাত পালন করতেন। আর তিনি এই পবিত্র রাতে মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। বর্তমানকালে এখন যারা ‘শবে বরাতকে অস্বীকার করছে, বা নিজেদের ‘মনগড়া’ কথার ভিত্তিতে বলছে: ইসলামে ‘শবে বরাত’ বলে কিছু নাই—তারা সম্পূর্ণ ভণ্ড, এবং ইসলামের দুশমন। এরা ইসলামের অন্যতম প্রধান শত্রু মক্কার শয়তানপুত্র ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারী ও তদীয় বংশধর। আর এরা প্রকারন্তরে ইবলিশ শয়তানেরই অনুসারী।
 
আমাদের একটি কথা সবসময় মনে রাখতে হবে: এই পবিত্র ‘শবে বরাত’ আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পালন করেছেন। তাই, এটিকে কেউ যদি ‘বিদআত’ বা ‘নাজায়েজ’ বা ‘হারাম’ বলে সে ‘ফাসেক’ বা নিজেই ‘বিদআতীশয়তান’ ছাড়া আর-কিছু নয়।
পবিত্র ইসলামে ‘শবে বরাত’ ছিল, আছে আর তা থাকবে। ইসলামের শত্রুরা যতোই পবিত্র ‘শবে বরাত’ বিরোধী বক্তব্যপ্রদান করুক না কেন—তাদের কথায় সুন্নীমুসলমানরা কখনও বিভ্রান্ত হবে না। আর পবিত্র ‘শবে বরাতে’র রয়েছে প্রায় দেড়-হাজার-বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
 
পবিত্র ‘শবে বরাত’-সম্পর্কে আমাদের পবিত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আমাদের নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র বাণী হলো: “তোমাদের মাঝে যখন শাবান-মাসের ১৫তম রাতের আগমন ঘটে, তখন তোমরা রাতে কিয়াম (ইবাদত) করো, আর দিনে রোযা রাখো। নিঃসন্দেহে আল্লাহতা’আলা সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী-বর্ষণ করেন, এবং ঘোষণা করেন কেউ কি আছো আমার নিকট ক্ষমা-প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কেউ কি আছো জীবিকা-প্রার্থনাকারী? আমি তাকে জীবিকাদান করবো। কেউ কি আছো মুসিবতগ্রস্ত? আমি তাকে মুক্তিপ্রদান করবো। কেউ কি এমন আছো? কেউ কি এমন আছো? এভাবে, সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন।”
 
এই ফজিলতপূর্ণ রাতের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনেও সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এখানে, একটি আয়াতের কথা উল্লেখ করা হলো।
 
সুরা দুখান-এর ১-৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহতা’আলা বলেন:
 
হা-মীম, এই স্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে বণ্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ।
 
এই আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাফসীরে জালালাইন নামক বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থে। এই সুবিখ্যাতগ্রন্থের ৪১০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে: নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হলো ‘লাইলাতুল ক্বদর’ (ক্বদরের রাত) অথবা ‘লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান’ (শাবানের মধ্যরাত তথা শবে বরাত)। কেননা, এই রাতে উম্মুল কিতাব বা পবিত্র কুরআন শরীফ সপ্তম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে বা প্রথম আসমানে নাজিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।
 
হাদিসের আলোকে পবিত্র শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাতের দলিল:
 
হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন: রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, “মধ্য-শাবানের রাত্রিতে আল্লাতা’আলা রহমতের তাজাল্লি ফরমান এবং তাঁর সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী-ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।”—ইবনে মাজাহ শরীফ, পৃষ্ঠা নাম্বার-১০০, হাদিস নাম্বার-১৩৮৯; মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা-১১৫।
 
হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অতঃপর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারীকে ক্ষমা করেন না।”—ইমাম বায়হাকী “শুয়াবুল ঈমান”-এর হাদিস নাম্বার-৩৮৩৩।
 
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেন: “শাবান-মাসের মধ্যবর্তী-রাতে মহান আল্লাহ রহমতের ভাণ্ডার নিয়ে তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং এই রাতে হিংসুক ও হত্যাকারী ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”—মুসনাদে আহমদ, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদিস নাম্বার-১৬৪২, পৃষ্ঠা-২৩৮।
 
এছাড়াও ‘সিয়াহ সিত্তাহ’ বা ‘বিশুদ্ধ ছয়খানা’ হাদিসগ্রন্থের কোনো-কোনো হাদিসেও এই মহিমান্বিত রাতের বিশেষত্ব-নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। অন্যান্য হাদিসগ্রন্থেও এই পবিত্র রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ রয়েছে। এই পবিত্র রাতের কথা ইমাম তিরমিযীর বর্ণিত হাদিসেও পাওয়া যায়। আর এই হাদিসঅনুযায়ী জানা যায়: এক-রাতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়েশা ঘুম থেকে উঠে পড়লেন। কিন্তু তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় দেখতে পেলেন না। তিনি মুহাম্মদকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুঁজতে বের হলেন, এবং তাঁকে ‘জান্নাতুল বাকী’ নামক কবরস্থানে দেখতে পেলেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহ সর্বনিম্ন আকাশে নেমে আসেন, এবং তিনি (আরবের) কাল্ব-উপজাতির ছাগলের গায়ের পশমের থেকে বেশি লোককে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করেন।” এখানে উল্লেখ্য যে, সেই সময় ‘কাল্ব-গোত্র’ ছাগলপালনে প্রসিদ্ধ ছিল, এবং তাদের প্রচুর ছাগল ছিল। তাই, এখানে ‘কালব-গোত্রে’র প্রসঙ্গ-অবতারণা করা হয়েছে। এই হাদিসের নিচে ইমাম তিরমিযী উল্লেখ করেছেন: হজরত আবু বকর সিদ্দিকও (রা.) এইরকম একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
 
পবিত্র ‘শবে বরাতে’র হালুয়া-রুটি-প্রসঙ্গে:
 
হালুয়া-রুটি সবসময় একটি হালাল, উৎকৃষ্ট ও পুষ্টিকর খাবার। আর এটি যেকোনো সময় প্রস্তুত করে তা খাওয়া যায়। এতে কোনো বাধা-নিষেধ নাই। হালুয়া মিষ্টিদ্রব্য। আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিষ্টি খুব ভালোবাসতেন। পবিত্র ‘শবে বরাতে’ কেউ যদি হালুয়া-রুটি প্রস্তুত করে সে নিজে ও তার আত্মীয়স্বজন-পড়শীদের সঙ্গে নিয়ে খায় তা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এটি ইসলামীশরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বৈধ খাবার। পবিত্র ‘শবে বরাত’কে সামনে রেখে ‘হালুয়া-রুটি’ প্রস্তুত করা এবং তা খাওয়া সম্পূর্ণ জায়েজ।
 
যারা পবিত্র ‘শবে বরাতে’র ‘হালুয়া-রুটিকে’ ‘নাজায়েজ, হারাম বা বিদআত’ বলে অপপ্রচার চালাবে তারা নিজেরাই হারাম, নাজায়েজ আর বিদআতীশয়তান। এরা ইসলামের শত্রু আরবের শয়তান ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারী ও তদীয় বংশধর। এদের কথায় কোনো মুসলমান কর্ণপাত করবে না। এছাড়াও, পবিত্র ‘শবে বরাতে’র রাতে আরও কোনো উন্নতমানের খাবার তৈরি করা ও তা ভক্ষণ করা সম্পূর্ণ জায়েজ।
 
আর আমাদের সবসময় একটি কথা মনে রাখতে হবে: ইসলামে শুধু শয়তান আর শয়তানীই নাজায়েজ ও হারাম।



 
 
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২২/০৫/২০১৬
১ Likes ০ Comments ০ Share ২১৬ Views

Comments (0)

  • - জামান একুশে

    ভোট দিয়ে মজা পাচ্ছি তাই দিলাম। কেমন যেন গণতন্ত্র গণতন্ত্র গন্ধ! :)

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      হাহাহাহ ঠিকই বলেছেন ............. কিন্তু লেখা ভাল মন্দ লাগে নি হাহাহাহাহ