ফরিদ স্যার মাত্র চলে গেলেন। সপ্তাহে পাঁচদিন বাসায় এসে মিশুককে পড়িয়ে যান স্যার। দরজা লাগিয়ে এসে টেবিলের এলোমেলো বইগুলো গোছাতে গোছাতে মিশুকের ক্ষুধা পেয়ে যায়। ফুপিকে বললেই এক মগ দুধ আর টোস্ট নিয়ে আসবে। মিশুকের এখন দুধ খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আর এই শীতের মধ্যে ফুপি মজা করে কম্বলের মধ্যে ঢুকে সিরিয়াল দেখছে। এই সময় ফুপিকে ওর কষ্ট দিতে খারাপ লাগে। ফুপি দৌড়ে ওভেনে দুধের মগ দিয়ে দিবে ঠিকই তবে ফুপির কয়েকটা সিন মিস হবে। মিশুক অবশ্য কাউকেই কষ্ট দিতে চায় না। সবাই ওকে বলে, গুড বয়।
মিশুক আসলেই গুড বয়। মিশুক নিজেই ওর পড়ার টেবিল, আলনা আর ছোট্ট ওয়ার্ডড্রোব গুছিয়ে রাখে। নিজের ড্রেস নিজে পড়ে। নিজেই রুটিতে নসিলা মেখে নেয়। বন্ধের দিন বাবার সাথে টুকিটাকি কাজ করে। আর এই শীতের মাঝে একবারও গরম কাপড় পড়বার কথা মনে করিয়ে দিতে হয় না কাউকে। আর পড়াশুনা? পরীক্ষাতে তো বরাবরই প্রথম হয় সে। দাদী মাঝে মাঝে বলে, মায়ের লক্ষ্মী ছেলে। এটা শুনে মিশুকের আরও লক্ষ্মী হতে ইচ্ছে হয়। তবে এই বাসায় সবাই যে যার কাজ নিজেই করে নেয়। মিশুকের বাবা ইমরান হাসানও খুব গোছানো মানুষ।
আর যে বয়সে বাবা-মা সবার স্কুল ব্যাগ গুছিয়ে দেয় সেই বয়স থেকেই মিশুক নিজের কাজ নিজে করে। দাদা-দাদী জানে মিশুক একাই অনেক কাজ পারে তাই তারা মিশুককে সাহায্য করেন না। আর মিশুকের এই সব কাজে অবাকও হন না। কারণ ওর একবারে ছোটবেলা থেকেই তারা এই বাসায়। আর কণা ফুপিতো হঠাৎ হঠাৎ আসে। আর এই বাসায় এলেই ফুপি ওকে খুব সাহায্য করতে চায় কিন্তু মিশুক নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করে। মিশুক, বাবা আর ছোট ফুপি। এই তিনজনের সংসার এখন। বরাবর দাদা-দাদী থাকেন ওদের সাথে। গত মাসে মিশুকদের গ্রামের বাড়িতে মিশুকের বাবা আর বড় চাচা মিলে পাকা ঘর তোলার কাজ শুরু করেছে। তাই দাদা-দাদী গ্রামে গিয়েছেন।
দরজায় ফুপির পায়ের আওয়াজ। ফুপি ঠিক ঠিক বুঝে গেছে যে ওর ক্ষুধা পেয়েছে। এক বাটি ম্যাকারনি এনে টেবিলে রাখতে রাখতে ফুপি বলল,
-কী রে মিশুক? তোর ক্ষুধা পায় না? বলিসও না কিছু। তুই কী!
মিশুক হাসে। ফুপির কথার উত্তর না দিয়ে ও পাল্টা প্রশ্ন করে,
-বারে তুমি বুঝলে কী করে! আমার ক্ষুধাও পেয়েছে আর দুধও খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না!
কণা ফুপি খুব রহস্য করে মাথা নাড়তে নাড়তে উত্তর দেয়,
-হুম...আমি জাদু জানি! তোর পেটের ভেতরে ঘুরে এলাম...দেখি ফুটবল মাঠে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে...
বলেই ফুপি মিশুকের পেটের মধ্যে এমন কাতুকুতু শুরু করে দিল। মিশুক হেসে বাঁচে না। ওর আবার ভয়ংকর কাতুকুতু। মিশুকের ক্লাসমেট শ্যামল খুব দুষ্টু। মাঝে মাঝে ওকে দেখে দূর থেকেই আঙুল নাচাতে থাকে। এমন আজব না! শ্যামলের আঙুল নাড়ানোতেই মিশুকের কাতুকুতু পায়। এই ব্যাপারটা সবাই জেনে যাচ্ছে। ক্লাসের অনেকেই এখন দুষ্টামিটা করে। ফুপিও দুষ্ট।
-ফুপি দাদাভাই-দাদী আসতে আরও দেরি হবে?
-হ্যা রে...আরও মাসখানেক।
-তুমি কিন্তু তখন আবার চলে যেও না।
ফুপি ওর মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,
-এখন যাই। তুই তো আবার পড়তে বসবি।
-আচ্ছা ফুপি গ্রামের বাড়ি এখন বিল্ডিং হয়ে যাবে? দাদাভাইয়ের ঘরে কাঠের মেঝে থাকবে না?
-দুর…পাকা বাড়ি করলে তাই থাকে নাকি!
মিশুকের মন কেমন করে। দাদা বাড়ি এখন পাকা বাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দাদাভাইয়ের ঘরের কাঠের মেঝেটা খুব ভাল লাগতো মিশুকের। প্রতিবার গ্রীষ্মের ছুটিতে বা শীতে দলবেঁধে দাদা বাড়ি যাওয়া হয়। মিশুক দাদুভাইয়ের ঘরের কাঠের মেঝেতে খুব মজা করে পা ফেলতো। দাদা-দাদী ওদের সাথে থাকে । তাই খালি বাড়িতে ইঁদুরের খুব জ্বালাতন। এখন পাকা বাড়ি করা হচ্ছে। দাদা-দাদী সহজে ফিরবেন না। তাই মিশুকের দেখাশুনার জন্য কণা ফুপি এসেছে। কণা ফুপি রেজাল্ট ভালো করেনি। তাই দাদাভাই বলেছে ঢাকায় থেকে ভালো কোথাও ভর্তি হতে। মিশুকের হাসি পায়। কারণ মিশুক জানে এত টিভি দেখলে ফুপি আবার রেজাল্ট খারাপ করবে।
মিশুক যখন পড়তে বসে, ফুপি এসে বলে, কি রে তুই! বলার আগেই পড়তে বসে যাস! মিশুক হাসে আর বলে, তুমিও এসো। ফুপি বলবে, এই তো আসছি। আরেকটা সিরিয়াল হলেই শেষ। ফুপির সিরিয়াল আর শেষ হয় না। বাবা অফিস থেকে এলে তবে দৌড়ে পড়ার ঘরে ঢুকে ফুপি। বাবাকে ফুপি ভয় পায়।
(ক্রমশ)
Comments (24)
অল্পতে ছন্দের মজা পেলাম।
আপনার ভালো লাগলো জেনে প্রীত হলাম
শুভেচ্ছা রইল :-)