হেমন্তের মাঝামাঝি।
মাঠ ভরা সবুজ ও হলুদে ভরা সোনালী ধান।
এবার একটু আগে ভাগেই শীত এসে গেলো।
এমনি একটি সন্ধ্যায় আমাদের গ্রামের বাড়ীতে বাবু ভাই এর হঠাৎ উপস্হিতি।আমরা সবাই ভীষন খুশি।
বাবু ভাই আসা মানে দারুন দারুন সব মজার ঘটনা ঘটবে।চমৎকার সব কথামালা আর জমজমাট আড্ডা হবে।নানা ধরনের মজার মজার সব খাওয়া দাওয়া তো আছেই।
পাহাড়ী মোরগের মাংসের ঝোল দিয়ে আশ ধানের লাল ভাত আর ও নতুন চালের ডুপি পিঠা।
আমাদের গ্রামের খালের পুঁইয়া মাছের ঝোল দিয়ে পিঠা।
খেজুর রসে ডুবানো টসটসে রসে ভরা চিতল পিঠা।
আর বাবু ভাইয়ের আনা নানা ধরনের মজাদার চকলেট আর আচার তো আছেই।
সাথে আমাদের বাড়তি পাওনা বাবু ভাইয়ের চমৎকার মজার মজার সব প্রশ্নমালা।
আমাদের ছোট বোন যুথী ।বয়স তিন ।ওকে সামনে পেয়ে বাবু ভাইয়ের মজার প্রশ্ন শুরু
বলতো সাদা গরুর দুধ যদি সাদা হয় কালো আর লাল গরুর দুধের রং কি হবে?
ছোট বোন যুথীর চট জলদি জবাব কালো গরুর দুধের রং কালো হবে।
লাল গরুর দুধ লাল হবে।আমরা সবাই একসাথে হো হো করে হাসলাম।
ওর অভিযোগ এই তোমরা হাসছো কেন? আমাকে বেশী চকলেট দাও আমি সবার আগে বলেছি।
ঘাসের রং কি? সবাই একসাথে উত্তর দিলাম সবুজ।
সাথে সাথে বাবু ভাইয়ের পাল্টা প্রশ্ন বলতো, ঢাকার ঘাস সাদা কেন?
শহর কেন ঢাকা? আমরা সবাই চুপ চাপ।বড় আপা মিটি মিটি হাসছে।
বাবু ভাইয়ের তাগাদা তাড়াতাড়ি বলো । But কিন্তু what মানে কি?
I do not know এর বাংলা কি? মেঝো আপা বলে উঠলো
আমি জানিনা ।আমরা সবাই হাসলাম ।
বাবু ভাই বড় আপার দেবর।শহরের ভাল কলেজের ছাত্র।
মাঝে মাঝে আমাদের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে আসেন।
খনার বচন নিয়ে উনার অনেক গবেষনা।
এরি মাঝে বড় আপা নারিকেল আর মুড়ি দিয়ে গেলেন।
আমরা সবাই নারিকেল আর মুড়ি খাচ্ছি।
আর বাবু ভাই বলে যাচ্ছে
“দাতার নারিকেল,বখিলের বাশঁ
কমে না বাড়ে বারোমাস”
এমন সময় আমাদের স্কুল এর প্রধান শিক্ষক আমাদের বাড়ীতে আসলেন।আব্বার সাথে স্কুল এর কি একটা বিষয়ে কথা বলবেন।উনি আসাতে আমরা আড্ডা ছেড়ে বাড়ীর ভিতরের রুমে বসলাম।কিছুটা নীরবতা।
উনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবার বাবু ভাইয়ের প্রশ্নমালা শুরু হল।
সাইকেল, রিকসা, চেয়ার এ গুলোর বাংলা শব্দ কি?
এক পুকুরে কত বালতি পানি থাকে?
কে একজন জবাব দিল এক হাজার বালতি ।
আপনি মেপে দেখেন।
বাবু ভাইয়ের তড়িৎ জবাব এক বালতি।
তবে বালতিটা হতে হবে পুকুরের সমান আকৃতির।
আম ভাল না তেতুল ভাল?
মেয়েরা সবাইর একসাথে জবাব তেতুল।
বাবু ভাইয়ের উত্তর আসলো এভাবে।
“আমে ধান
তেতুলে বান।“
এভাবে জমজমাট আড্ডা ও মজার মজার প্রশ্নমালা চলছিল।
কোন শহর খুলতে মানা?খুলনা।
এমন একটি শহরের নাম বল যার বংলা মানে
আমার মানুষ গান গায় ?
Mymensing
সরিষা কখন চাষ করতে হয়?
এবার বাবু ভাই জবাব দিল এভাবে।
"খনা বলে চাষীর পো
শরতের শেষে সরিষা রো"
এরি মাঝে আম্মু আবার নারিকেল দিয়ে তৈরী এক ধরনের পিঠা আমাদের সামনে দিয়ে গেল।সবাই হুড়োহুড়ি করে পিঠা খাচ্ছিলাম ।বাবু ভাই এবার উনার কনঠ একটু নীচে করে বল্লেন।
“পরের বাড়ীর পিঠা
খাইতে বড় ই মিঠা”
পিঠা খাওয়া শেষ
আবার বাবু ভাইয়ের প্রশ্নমালা শুরু উত্তর অতি সহজ বলতে যদি পরো
মানব জানব তোমরা সবাই গুরু... গুরুটা উনি এমন ভাবে বললেন
আমি শুনলাম গরু ?
কোন জিনিষ টানলে ছোট হয়?
কোনটা বেশী ভারী একমন লোহা না একমন তুলা?
বাবু ভাই এবার উত্তর না পেয়ে শুরু করল।
“খনা বলে শোন ভাই
তুলায় তুলা অধিক পাই।“
এমন সময় আমাদের চাষী ফজলু ভাই হাজির।
উনাকে দেখে বাবু ভাই সুন্দর হাসি দিলেন।
আর সাথে সাথে বলে উঠলেন
“চাষী আর চষা মাটি
এ দুয়ে হয়ে দেশ খাঁটি”
তারপর আবার শুনালেন
“বাশেঁর ধারে হলুদ দিলে
খনা বলে দিবগুন বাড়ে”
আবার একটা প্রশ্ন এবার বলতো
একটা মোরগ দেওয়াল এর ঠিক মাঝখানে ডিম পাড়লে ডিমটি দেওয়াল কোন পাশে পড়বে?ডানে না বামে?
এভাবেই আড্ডা চলছিল।আম্মু এবার কিছু দেশী ফল দিয়ে গেল ।আমরা সবাই খেলাম ।তারপর যেই আমি পানি খেতে চাইলাম বাবু ভাই বলে উঠলো।
“ফল খেয়ে জল খায়
জম বলে আয় আয়”
হঠাৎ বাবু ভাই নীরব।
একটু পরে বলল সবাই কাগজ কলম নাও।
আমরা মনে করলাম উনি এখন আমাদের পড়াবেন।
কি্ন্তু না উনি বলে উঠলেন সবাই যে যা পার লিখ তারপর আমরা সবার লেখা নিয়ে আলাপ আলোচনা করব।
আমি এরি ফাঁকে লিখলাম।
শরত বলে আমার শেষ
সময় হলো তোমার বেশ।
হেমন্ত বলে আমার পালা
আমার মনে ভীষন জ্বালা
নীল আকাশে মিষ্টি রোদে
হেমন্ত নীরবে কেন কাদেঁ
শীতের কোন দুঃখ নাই
একটু আগে আসা চাই,
লেখক কবি কেন এমন?
শীতকে করে আগে বরণ।
বাবু ভাই বলল চল সবাই উঠি
মিলন মেলা আজকের জন্য শেষ।
রাত বাড়ছিল।
“সকাল শোয় সকালে উঠে
তার কড়ি না বৈদ্য লুটে”।
কি আর করা আজকের জন্য সমাপ্ত।
Comments (3)
অনুবাদের জন্য ধন্যবাদ।
অনুবাদের ক্ষেত্রে কবি/লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিয়ে দিলে ভালো হতো।
ভালু হইত।