MUSEUM OF ISLAMIC ART :: QATAR
MUSEUM OF ISLAMIC ART :: QATAR
আজ ঘুরবো কাতার-এর MUSEUM OF ISLAMIC ART –এ। কাতারে এসেছি থেকে শুধু গরমের জ্বালায় গাড়ীর ভেতর থেকেই বাইরে দেখা। ঐ দেখায় আমার মনতো দূরের কথা চোখই ভরে না। একদিন বাঙালি গ্রুপকে না বলে আমরা দু’জনে বেরিয়ে পড়লাম বিকেল হবার আগেই। ওদের সাথে প্রোগ্রাম রাখলাম সন্ধ্যের পরে।
কাতার ছোট্ট একটা দেশ। দেশটির প্রায় তিনদিকেই সমুদ্র। এখানে কোন গ্রাম নেই, দেশের পুরোটাই শহর। কাতার একটি উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। এখানে ভূ-পৃষ্ঠস্থ কোন জলাশয় নেই, তাই প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যাও যৎসামান্য। বেশির ভাগ লোক শহরে, বিশেষ করে রাজধানী দোহা শহরে বাস করে। কাতারের আমীর হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকার প্রধান। শহরের বাইরে যা আছে, তা আমীরদের বংশানুক্রমিক বাগান, খামার,--- এইসব। এই সব বাগানে খেজুর ছাড়াও আঙ্গুর, আপেল, কমলা, খারবুজা, আরো অনেক ফল-এর চাষ হয়। এখানে প্রচুর লেবু গাছ হয়, আর গাছগুলোতে অসংখ্য লেবু ধরে, ঠিক বাংলাদেশের “কাগজী” লেবুর মতই খোশাটা পাতলা, রস-এ ভর্তি। আর দেখা যায় বড়ই গাছ। বড়ইটা আমি খাইনি, এ সময় বড়ই ছিল না। তবে লেবু খেয়েছি আর কাঁচা-পাকা-শুকানো সব রকমের খেজুরই খেয়েছি। সে এক অসাধারন স্বাদ। বাংলাদেশে যা আসে, তা’ কিছুটা হলেও প্রক্রিয়াজাত। তাই ঐ খেজুরের স্বাদ থেকে এই খেজুরের স্বাদ অনেক ভিন্ন। একদিন এরকম এক বাগানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এ বিষয়ে পরে এক সময় লিখব না হয়।
দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুদ আছে। এই প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বর্তমানে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি। এই দেশে যত শ্রমিক কাজ করতে দেখা যায় কেউই কাতারী নয়, সবাই ভীনদেশী। কাতারীরা খুব আয়েশী জীবন যাপন করে। এখানে কড়া আইনের শাষণ চলে, তাই কোন রকমের অপরাধ নেই বললেই চলে। শহরাঞ্চল ছিমছাম, গোছানো, সুন্দর।
যা বলছিলাম, বিকেল হবার আগেই বেরিয়ে দু’চোখ ভরে দেখছিলাম এদের স্থাপত্যশৈলী। মুসলিম স্থাপত্য সব সময়ই প্রশংসার দাবি রাখে। এখানে দেখছিলাম আধুনিক স্থাপনা। এক সময় পৌছে গেলাম মিউজিয়ামে। এখন আমার হতবাক হবার পালা, মিউজিয়ামের তিন দিকেই সমুদ্র। মনে হচ্ছে, যেন ওটা পানিতে ভেসে আছে। এর বাইরের, ভিতরের স্থাপত্যশৈলী অসাধারন। মিউজিয়ামের গেটের এক পাশ থেকে একটা সবুজ পার্ক বাঁকা হয়ে চলে গেছে সমুদ্রের ভেতরে।
গাড়ী থেকে যেখানে নামলাম, সেখান থেকে সিড়ি উঠে গেছে ওপরে ওঠার জন্য। সিড়ির দু’পাশে চার সারি খেজুর গাছ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, মনে হচ্ছে যেন ওরা বলাবলি করছে,” এই চুপ, কেউ যেন এদিকে আসছে “। খেজুর গাছ লাগিয়ে যে এত সৌন্দর্য আনা যায়, এর আগে কখোনো আমি দেখিনি তা’। সিড়ির দু’পাশের মাঝ দিয়ে চলেছে একটি পানির ধারা। আবার আরেক পাশের দুই সারি খেজুর গাছের মাঝ দিয়েও আরেকটা করে সিড়ি উঠে গেছে। ওপরে উঠতেই নাম ফলক, তার পাশেই সুন্দর পানির ফোয়ারা। পাশে কিছুটা খোলা যায়গা আছে যা সমুদ্রের মাঝে চলে গেছে, সেখানেও পানির ফোয়ারার ছড়াছড়ি। হয়তো কাতারের আবহাওয়া খুব গরম বলেই এমন ব্যবস্থা, তা’ছাড়া দেখতেও ভিষণ ভাল লাগছে। অনেকেই বিকেলটা এখানে কাটায়। ভেতরেও একটা রেস্টুরেন্ট দেখলাম, নিচের অংশ স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে ঘেরা, যেখান দিয়ে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। ওপরে ওঠার সিড়িটাও যেন সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
মিউজিয়ামের ভেতরে দেখলাম কিছু টুকিটাকি জিনিসপত্র। সংগ্রহ খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। একটা জায়গায় এসে চোখ আটকে গেল। সেটি “ফেরদৌসীর শাহানামা কাব্যগ্রন্থ”। কেমন যেন একটা শিহরন অনুভব করলাম। ছেলেবেলা থেকেই যার নাম শুনে আসছি, সেটি এখন আমার চোখের সামনে !!! পরপর দু’টো দেখলাম। দু’টোই খোলা। একটাতে এক পাতায় লেখা, আরেক পাতায় ছবি। আরেকটাতে দু’পাশেই ছবি।
তিনতলা মিউজিয়ামটি ঘুরে ঘুরে দেখতে এক সময় সন্ধ্যে নেমে এল। আমরাও বেরিয়ে এলাম, কথা দেয়া আছে সন্ধ্যের পরে অন্য কোথাও ঘুরব।
গাড়ী থেকে যেখানে নামলাম, সেখান থেকে সিড়ি উঠে গেছে ওপরে ওঠার জন্য। সিড়ির দু’পাশের মাঝ দিয়ে চলেছে একটি পানির ধারা।
উপরের ছবির ঠিক বিপরীত দিক থেকে তোলা এই ছবিটি
আরেক পাশের দুই সারি খেজুর গাছের মাঝ দিয়েও আরেকটা করে সিড়ি উঠে গেছে।
কী সুন্দর দেখতে মিউজিয়ামটি
মিউজিয়ামের পাশেই সুন্দর পানির ফোয়ারা।
মিউজিয়ামের তিন দিকেই সমুদ্র। মনে হচ্ছে, যেন ওটা পানিতে ভেসে আছে।
পাশের চত্বরে ফোয়ারার ছড়াছড়ি
মিউজিয়ামের গেটের এক পাশ থেকে এই সবুজ পার্ক বাঁকা হয়ে চলে গেছে সমুদ্রের ভেতরে।
ভেতরে ঢুকতেই একটা রেষ্টুরেন্ট, পেছনে বিশাল সমুদ্র
ওপরে ওঠার সিড়ি
সিড়ির পাশেই সুন্দর আলোকসজ্জা
মিউজিয়ামের ভেতরে এমনই অনেক মুসলিম কির্তী সংরক্ষিত আছে
বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ "শাহানামা"
শাহানামা পরিচিতি ফলক
************************** **নক্ষত্র ব্লগে এটাই আমার প্রথম পোষ্ট **
Comments (23)
ধন্যবাদ।
খুব প্রয়োজনীয় একটি পোষ্ট দিয়েছেন।
আশা করি কিছু শিখতে পারবো।
ধন্যবাদ। আমার প্রচেষ্টা পূর্ণতা পাবে, যদি কারও উপকারে আসে।
শুভ সন্ধ্যা।
বেশ গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট নিঃসুন্দেহে। মাত্রা বিভ্রাটের জ্বালায় ছড়া লেখাই বন্ধ করে দিয়েছি। আপনার এই পোষ্ট পড়েছি। আরও ভালো ভাবে পড়ে দেখি মাত্রা সমস্যার সমাধান করতে পারি কিনা। তবে ্কাবুল ভাই উদাহরণ স্বরূপ আপনি এখানে যা তুলে দিয়েছেন, সেগুলো যদি ভেঙে ভঙ্গে মাত্রার হিসাবটা দিয়ে দিতেন, তবে বুঝতে আরও বেশী সুবিধা হত। ধন্যবাদ ভাই।
স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত আলোচনায় পরামর্শ মাথায় থাকবে। ধন্যবাদ।
আপনি যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছেন আর যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তাতে যে কেউ ছন্দ আর তালের জটিলতা থেকে ওঠে আসতে পারবে। অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের।
শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় কাবুল ভাই
যে কেউ না পারলেও কেউ কেউ তো পারবে।